Ticker

6/recent/ticker-posts

আমাদের ইতিহাস ও জীবনবাস্তবতার কথাকোবিদ শওকত ওসমান

আমাদের ইতিহাস ও জীবনবাস্তবতার কথাকোবিদ শওকত ওসমান
সমীর আহমেদ
দেশবিভাজনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, নানা রকম উত্থান-পতন ঘটনা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন শওকত ওসমান। আর এসব ঘটনাই তার সাহিত্যিক মানসে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। সমাজ ও রাষ্ট্রে নিগৃহীত, অধিকার বঞ্চিত, নিরন্ন মানুষের অন্তর্গূঢ় বেদনা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। এজন্যই শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে পেরেছিলেন আজীবন আদর্শবাদী, স্বদেশের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধাশীল শওকত ওসমান।
কথাকোবিদ শওকত ওসমানের প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। জন্মেছিলেন ১৯১৭ সালে হুগলির সবলসিংহপুর গ্রামে। দেশবিভাজনের পর চলে আসেন এ দেশে।
সাহিত্য জীবনের হাতে খড়ি কবিতা দিয়ে হলেও চল্লিশের দশকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে কথাশিল্পী হিসেবে। ১৯৪৪-৪৫ সালে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্পাদিত সওগাতে ‘জিন্দান’ এবং ১৯৪৬ সালে আজাদে ‘বনী আদম’ উপন্যাস দুটি প্রকাশের পরপরই সাহিত্য অঙ্গনে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একের পর এক ছোটগল্প এবং উপন্যাস রচনা করে বাংলাসাহিত্যে স্বাতন্ত্র্যবোধের পরিচয় তুলে ধরেন।
স্বদেশের এক ঘোরতর দুঃসময়েই জন্মেছিলেন কথাশিল্পী শওকত ওসমান। দেশ ছিল বৃটিশদের দখলে। স্বদেশিরা জেগে উঠেছিল। প্রায় দু’শো বছরের পরাধীনতার শিকল ছেঁড়ার সময় কড়া নাড়ছিল দ্বারে। বৃটিশবিরোধী উত্তাল জনস্রোতের স্লোগান শুনে শুনেই বেড়ে উঠছিলেন তিনি। সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের সময়-ই বৃটিশ শাসনের অবসান ঘটে। হিন্দু-মুসলমানের বিদ্যমান দীর্ঘদিনের সহিংসতা নিরসনের জন্য দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে উদ্ভব ঘটে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।
মুসলমানদের স্বপ্নের স্বাধীন স্বদেশ পাকিস্তান জন্মের পরপরই পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা স্বজাতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের দ্বারা অধিকতর নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, বঞ্চিত হতে লাগলো। বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতে লাগলো। ফলে আবারো মানুষের মনে দানা বাঁধতে লাগলো হতাশা ও ক্ষোভ। এর ফলে ১৯৭১ সালে এক ভয়ানক অগ্নিগর্ভ থেকে উদ্ভব হলো আরেকটি নতুন রাষ্ট্র, বাংলাদেশের।
দেশবিভাজনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, নানা রকম উত্থান-পতন ঘটনা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছিলেন শওকত ওসমান। আর এসব ঘটনাই তার সাহিত্যিক মানসে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। সমাজ ও রাষ্ট্রে নিগৃহীত, অধিকার বঞ্চিত, নিরন্ন মানুষের অন্তর্গূঢ় বেদনা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। এজন্যই শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে পেরেছিলেন আজীবন আদর্শবাদী, স্বদেশের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধাশীল শওকত ওসমান। সময়ের নানা রকম টানাপড়েনেও তিনি বিচ্যুত হননি নিজের আদর্শ থেকে। বিশ্বাস থেকে। শুধু একজন মহান সাহিত্যিক হিসেবে নয়, তার এ প্রত্যয়দৃপ্ত আদর্শবাদী চেতনা আমাদের কাছে আরো বড় করে তুলেছে, দায়িত্ব সচেতন একজন মানুষ হিসেবেও।
সাহিত্য তত্ত্বের বাঁকা পথে শওকত ওসমান হাঁটেননি বা হাঁটার চেষ্টাও করেননি। প্রত্যক্ষিত জীবন ও সমাজের বাস্তবতা সহজ সরল বয়ানে নান্দনিক করে তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে তার গল্প উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের স্বাভাবিক জীবনাচরণ, বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ চিত্রায়ণ জীবনের সাধারণ সারল্যে বাস্তবতাকে আরো মূর্ত করে তোলে। পরিবেশ বর্ণনায় চারপাশের খুঁটিনাটি কোনো জিনিস তার দৃষ্টি সহজে এড়াতে পারে না। এ কারণেই তার লেখার সঙ্গে পাঠকের নিবিড় সম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি করে মনের ভেতর বিশ্বাসের এক মজবুত ভিত গড়ে তুলতে তিনি সক্ষম হন।
একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত শওকত ওসমান। একাত্তরে পাকিস্তানি শাসক, শোষক ও দোসরদের হাতে অত্যাচারিত, নির্যাতিত মানুষের মর্মন্তুদ, বীভৎস দৃশ্য তিনি তুলে ধরেছেন তার বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসে। এ গল্প-উপন্যাসগুলো সেই দুঃসময়ের দলিল বা এক গভীর ক্ষতের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন এবং দেশের মানুষের প্রতি তার প্রগাঢ় মমত্ববোধ থাকলেও এ সংক্রান্ত তার কোনো লেখাই পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে ওঠেনি। নিতান্ত নিরাসক্ত এবং নিরাবেগী দৃষ্টির কারণেই তার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলো নিজেদের দোষেগুণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পাঠকের সামনে।




প্রায় ছয় দশক সাহিত্যিচর্চায় নিমগ্ন থেকেছেন তিনি। অনেক গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখে বাংলাসাহিত্যভা-ার ঋদ্ধ করেছেন। পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছেন কম না। অনেক গল্প সঙ্কলন এবং উপন্যাস বারবার পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে।
জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প, প্রস্তর ফলক, জন্ম যদি তব বঙ্গে, নিঃসঙ্গ নির্মাণ, মনিব ও তার কুকুর, পুরাতন খঞ্জর, ইশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী, জননী, ক্রীতদাসের হাসি, দুই সৈনিক, জাহান্নাম হইতে বিদায়, নেকড়ে অরণ্য ইত্যাদি গ্রন্থ শওকত ওসমানকে বাংলাসাহিত্যে মৌলিক কথাসাহিত্যিকের মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। এ ছোট্ট নিবন্ধে আমরা তার বিপুল নির্মাণের মধ্য থেকে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস ‘নেকড়ে অরণ্য’ নিয়ে আলোচনা করবো।
‘নেকড়ে অরণ্য’ বলতে আমরা ভয়ঙ্কর মাংসাশী জীবজন্তুর অভয় অরণ্যকেই বুঝি। এ অভয় অরণ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে একটি সিভিল সাপাইজের গুদামঘর, যার ‘আলো রুগ্ন এবং ফিকে’। শওকত ওসমানের বর্ণনা থেকে গুদামঘরটির চিত্র কিছুটা তুলে দেয়া যাক, তারপর এর বীভৎসদৃশ্যের মধ্যে ঢুকে পড়া যাবে।
‘টিনে ছাওয়া গোটা দালানটা সেভাবে তৈরি। সমতল মেঝে নেই। উঁচু উঁচু পোস্তা বাঁধা, যেন নিচ থেকে স্যাতলা উঠে চাল-ডাল বা গুদামজাত অন্যান্য মাল নষ্ট না করে দেয়। আবার কুলিরা মাথায় করে বস্তা এনে পোস্তায় স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে পারে। ফলে দুই পোস্তার মাঝখানে পরিখার মতো সরু রাস্তা। গোটা গুদাম জুড়ে এমন আড়াআড়ি লুকোচুরি খেলার বন্দোবস্ত রয়েছে। বিরাট আয়তনের তুলনায় বাল্বের সংখ্যা কম। তা-ও ষাট পাওয়ারের বেশি নয়। ফলে দিনের বেলায়ও আলো আঁধারির ছকে জায়গাটা বন্দি থাকে।’
গুদামঘরটির এ আংশিক বর্ণনা থেকেই বোঝা যায় কথাশিল্পী শওকত ওসমান কতোটা স্বচ্ছদৃষ্টির অধিকারী। কোনো কিছু তার দৃষ্টি এড়াতে পারে না। চারপাশের তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস তুলে ধরে কী নিপুণভাবে তিনি বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলেন! পাঠকের কাছে তা কখনো গল্প মনে হয়ে ওঠে না। জায়গাটা কখনো অপরিচিতও মনে হয় না। মনে হয়, চেনাজানা এক চৌহদ্দির মধ্যেই সে প্রবেশ করেছে। আর এ চৌহদ্দিই ভীষণ ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে হয়ে ওঠে, নির্মমতা আর নৃশংসতার আস্তানা হয়ে চির অচেনা হয়ে ওঠে আমাদের কাছে, যেদিন থেকে গুদামঘরটি একাত্তরের ঘাতক, দালাল, নরপিশাচ পাকহায়েনা ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারীভোগের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। গ্রামের ছুড়ি থেকে বুড়ি, অসহায়, অবলা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, মুসলমান, হিন্দু, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর নারীদের ধরে এনে বন্দি করে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকে তারা। শুধু সেনা ক্যাম্পের অফিসার নয়, সাধারণ সৈনিকদের নির্মম ভোগের শিকার হয় তারা। ধর্ষিতা নারীদের আতঙ্ক, ভয় আর অসহায় আর্তচিৎকারে স্যাঁতসেঁতে আলো আঁধারি গুদামঘরের গুমোট পরিবেশ নরকের মতো হয়ে ওঠে। অবাধ ‘নেকড়ে অরণ্য’র প্রতীক হয়ে ওঠে গুদামঘরটি। ক্ষুধার্ত নিষ্ঠুর নেকড়ের কাছে নিরীহ অসহায় হরিণের দৌড়ঝাঁপ, কান্না যেমন অর্থহীন, তেমনি পাক হায়েনাদের কাছে অসহায় নারীদের অনুনয়, বিনয়, হাহাকার, মুক্তির প্রার্থনা, চিৎকার ও ছটফট কাতরানিও কোনো দয়া বা করুণার উদ্রেক করতে পারে না। সবই অর্থহীন, নিষ্ফল। বন্দি শিবিরে তানিমা, জায়েদা, রশিদা, আমোদিনী, সখিনা প্রমুখ ধর্ষিত, নির্যাতিত নারীদের চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া স্বপ্ন, দুঃসহ যন্ত্রণা, মানসিক বিপর্যস্ততা বা মানসিক বৈকল্যাবস্থা অত্যন্ত নির্মোহদৃষ্টিতে তুলে ধরেছেন শওকত ওসমান। নরপশুদের নারী নির্যাতনের বীভৎসতায় আমরা হতবাক হয়ে পড়ি। আমাদের মনে পাকসেনা এবং তাদের দোসর আল বদর, আল শামস আর রাজাকারদের প্রতি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় ঘৃণা, আক্রোশ, জ্বলে উঠি ক্রোধের আগুনে। কারণ উপযুক্ত নারীরা প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছেন একাত্তরে বন্দি শিবিরে বীরাঙ্গনা নারীদের প্রতিরূপ; যাদের ইজ্জত, রক্তঘাম আর আত্মাহুতির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা।
আখ্যান বর্ণনায় শওকত ওসমান অত্যন্ত সংযমশীল। ধীরে ধীরে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছেন গুদামঘরটির ভেতরে পাকসেনাদের নিষ্ঠুরতার চিত্র। ধর্ষণ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের এক মহোৎসব। কখনো কখনো জীবনকে নিয়ে অমানবিক কৌতুকও করেছেন তিনি। যে কৌতুক পাকসেনাদের নৃশংসতা আরো ভয়ানক করে তোলে, তাদের প্রতি পাঠকের প্রতিবাদ, প্রতিহিংসা আর জিঘাংসার আগুন প্রজ্জ্বলিত করে।
বাঙালি নারীর অন্তরের কোমলতার রূপ, নির্যাতন নিষ্পেষণে অসহায়ত্ববোধ, মুখ বুজে সবকিছু সয়ে যাওয়ার প্রতিবাদহীন মানসিকতা যেমন তিনি তুলে ধরেছেন, তেমনি উপযুক্ত নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের জ্বলে ওঠার দুর্দমনীয় সাহসিকতাও তিনি উন্মোচন করেছেন। প্রমাণ করে দিয়েছেন, বাঙালি নারী যতোখানি অসহায়, অবলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তার চেয়েও বেশি প্রতিবাদী, সোচ্চার। এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র মৃত্যুর পরোয়া তারা করে না। বরং মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করে অত্যাচারীদের নির্বাক করে দিতে পারে, পারে প্রতিবাদীর এক জ্বলন্ত প্রতীক হয়ে উঠতে।
ক্যাপ্টেন রেজা খান যখন তার মায়ের বয়সী, গ্রাম্য, সহজ-সরল রশিদাকে সবার সামনে ধর্ষণ করে, যে রশিদা বন্দিনীদের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বর্ষিয়ান এবং মনে মনে বন্দি শিবিরের সবাই তাকে মায়ের আসনে বসিয়েছিল, তা দেখে এবং ধর্ষণের সময় রশিদার আর্তচিৎকার শুনে শিক্ষিত তানিমা আর সহ্য করতে পারেনি। সামনে এগিয়ে যায় সে। ‘জোর গলায় একই ভঙ্গীতে গলা ফাটায়, ‘রঞ্জিৎ সিং কে হারামজাদ লোগ, করো আপনা মাকে করো-করো-করো-মাদা-র্চোদ-।’এই প্রতিবাদের ফলস্বরূপ ঘাতক ক্যাপ্টেন রেজা খানের বুলেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় তানিমার বুক। মৃত্যুর
কোলে ঢলে পড়ে সে। এ মৃত্যু যেন বেঁচে থাকার চেয়েও অধিকতর গৌরবের।
এখানেই শেষ নয়, রেজা খানদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীরব নির্মম প্রতিবাদ জানায় জায়েদা, আমোদিনী আর সখিনা। স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দিয়ে বন্দি শিবির থেকে মুক্তিলাভ করে জয়ের রক্তাক্ত তিলক যেন বাঙালি নারীর কপালে এঁকে দিয়ে যায় তারা। এ আত্মহত্যার মাধ্যমেই শেষ হয় ৬৪ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি।
বন্দি নারীদের ‘নেকড়ে অরণ্য’ থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি নেই। গুদামঘরের বাইরে গুলির শব্দ, পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়া এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধার রক্তাক্ত উপস্থিতি এবং ঘাতকদের হাতে তার মৃত্যু ছাড়া সমগ্র উপন্যাসে আর কোনো সুসংবাদ নেই। শুধু লোমহর্ষক নির্যাতন, ধর্ষণ আর খুন।
কাজেই বোঝা যায়, সময়টা ছিল যুদ্ধের শুরুর দিক। মুক্তিযোদ্ধারা সবেমাত্র সংগঠিত হচ্ছিল। এ সুসংবাদটুকুই শুধু পাওয়া যায় উপন্যাসটিতে। এছাড়া শুধু বর্বরতার চিত্র। নিরাশা আর আলো-অন্ধকারের দোলাচল গ্রাস করেছে গুদামঘরটিকে। কিন্তু এর মধ্যেই বাঙালি নারীরা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শোষকদের বিরুদ্ধে, নিজেরাই বেছে নিয়েছিল নিজেদের মুক্তির পথ। আর এতেই অবশ্যম্ভাবী এক বিজয়ের বারতা নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সঙ্কেতময়তার জন্ম দেয়। ‘নেকড়ে অরণ্য’ একাত্তরে আমাদের ধর্ষিতা মাদের মর্মন্তুদ আখ্যান। স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাস আমাদের মনে যেমন বেদনার ঢেউ জাগায়, তেমনি গৌরবেরও।