Ticker

6/recent/ticker-posts

হুমায়ূন আহমেদ ভালো আছেন

amarboi.com

হুমায়ূন আহমেদ ভালো আছেন
হাসান ফেরদৌস

একটা লাল-নীল-হলুদ রঙের বাটিকের ঢাকাই লুঙ্গি পরে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আমরা সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় ঢুকতেই হাসিমুখে এসে দাঁড়ালেন। পিছে পিছে শিশুপুত্র নিষাদ। একটু শুকিয়েছেন বলে মনে হলো, কিন্তু মুখখানা হাসি হাসি। না বলে দিলে বলা অসম্ভব, ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগে ভুগছেন। স্ত্রী শাওন ল্যাপটপে কিছু একটা পড়ছিলেন, আমাদের দেখে সেটি পাশে রেখে এগিয়ে এলেন। কুইনসের বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকা জ্যামাইকাতে একটি দোতলা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এই দুর্দিনে তাঁর সার্বক্ষণিক সহচর। তিনি জানালেন, আসলে এক বাঙালি ভদ্রলোক এই বাড়ির মালিক। বিক্রি করবেন বলে সাজিয়ে-গুছিয়ে রেখেছেন। হুমায়ূন আহমেদের নাম শুনে বাড়ি বিক্রি ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়ে পুরো বাড়িটাই তাঁর ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে একটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। কেমো মানেই খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে একটানা ধকল। হুমায়ূন জানালেন, হাসপাতালে কেমো দেওয়া শেষ হলো মানে শেষ নয়। বাসায় আবার একটা পুঁটলি বয়ে আনতে হবে ওই কেমোর অংশ হিসেবে। মোট ছয়টি কেমো নিতে হবে প্রাথমিকভাবে। কোলনের ক্যানসার পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষের বেলায় অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এ দেশে—মানে আমেরিকায়, পুরুষদের মধ্যে মোট সংখ্যার হিসাবে চিকিৎসকেরা চিহ্নিত করতে পারেন, এমন ক্যানসারের মধ্যে এটি দ্বিতীয়। প্রথমটি হলো প্রস্টেট ক্যানসার। বয়স পঞ্চাশ হলেই এ দেশে চিকিৎসকেরা পুরুষদের কোলনোস্কপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মেয়েদের বেলায় যেমন স্তনের ক্যানসারের জন্য স্ক্যানিং। আমাদের খাদ্যনালিতে ক্ষতিকর নয়, এমন পলিপ বা একধরনের ফোঁড়া থেকে কোলন ক্যানসারের শুরু। সেই সব পলিপই একসময় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তবে সময়মতো চিকিৎসা শুরু হলে এ রোগের নিরাময় অভাবনীয় নয়। মনে আছে, কয়েক বছর আগে আমেরিকার বিখ্যাত টেলিভিশনের খবর পাঠক কেইটি কুরিক কোলন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ‘টুডে শো’তে টিভির পর্দায় সরাসরি তাঁর কোলনোস্কপি প্রচার করেছিলেন। তাঁর স্বামী জেএ মাত্র ৪১ বছর বয়সে এই কোলন ক্যানসারে মারা যান। শাওন জানালেন, অসুখের কোনো লক্ষণই হুমায়ূন আহমেদের ছিল না। কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্ত্রের কোনো সমস্যা, খাদ্যে অরুচি, জ্বর-জারি কিচ্ছু নয়। সিঙ্গাপুরে শাশুড়ির হাঁটুর চিকিৎসায় সপরিবারে এসেছিলেন। সেখানে হঠাৎ মনে হলো, নিজের চেকআপ করিয়ে নেবেন। অসুখটা তখনই ধরা পড়ল। হুমায়ূন হাসতে হাসতেই বললেন, নিউইয়র্কে যে চিকিৎসকের হাতে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে, প্রথম সাক্ষাতে কোনো ভূমিকা ছাড়াই মুখের ওপর তিনি বলে বসলেন, ‘তুমি তো মারা যাচ্ছ।’ তাঁর মুখ-চোখ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই চিকিৎসক অভয় দিয়ে বললেন, ‘আহা, মারা যাচ্ছ তার মানে এখনই নয়। এখন বা দুই দিন পরে তো আমরা সবাই মরব। সে অর্থে তুমি মারা যাচ্ছ। তবে আমাদের হাতে যখন পড়েছ, সহজে মরবে না।’ সে কথা শুনে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছুটল তাঁর। হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য এই মুহূর্তে মৃত্যুর কথা ভাবছেন না। আশাবাদী মানুষ তিনি। ৬৩ বছরের জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ তাঁকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এটিও আরেক চ্যালেঞ্জ। হেসে বলেন, ‘তবে বড্ড ব্যয়বহুল চ্যালেঞ্জ।’ ছয় কেমোর জন্য গুনতে হচ্ছে নগদ ৮০ হাজার ডলার। টাকার অঙ্কে হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা। জিজ্ঞেস করলাম, সময় কাটান কী করে? তাঁর হাঁটুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিল পুত্র নিষাদ। বললেন, ‘অবসর কোথায়, একে দেখছেন না?’ জানালেন, বই পড়ছেন। তাঁর বাড়ির কাছে মস্ত পাঠাগার, কুইনসের সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি। আমেরিকার পাঠাগার মানেই বই, গান, ভিডিও। যত খুশি নিয়ে যাও। সময়মতো ফেরত দিলেই চলবে, অন্য কোনো খরচ নেই। এমন নিরুপদ্রব সময় আগে জোটেনি, ফলে নিশ্চিন্তে বই পড়ছেন। নিউইয়র্কের নামজাদা বইয়ের দোকান বার্নস অ্যান্ড নোবেল-এ ইতিমধ্যে একবার ঘুরে এসেছেন। কিছু বই কেনাও হয়েছে। ‘আরও কিছু বই হয়তো কিনতাম। কিন্তু যে বন্ধু নিয়ে গেছে, সে গোঁ ধরে বসে আছে, বইয়ের দাম সে দেবে। ফলে, ইচ্ছা হলেও সব বই কেনা হয়নি।’ ‘আমি আরও একটা কাজ করি। প্রায়ই বাড়ির সামনে সিঁড়ির কাছে এসে বসি। নানা জাতের নানা মানুষ, আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।’ জিজ্ঞাসা করি, নতুন কিছু লিখেছেন? তাঁর মুখখানা যেন অল্প সময়ের জন্য জ্বলে ওঠে। ‘হ্যাঁ, চেষ্টা করছি। হচ্ছে, কিছু লেখা এগোচ্ছে।’ তিনি সময়ে-অসময়ে ছবিও আঁকছেন। শাওন জানালেন, চিলেকোঠায় একটি আলাদা জায়গা বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। সেখানে ছবি আঁকার সব সরঞ্জাম—রং, তুলি, কাগজ—রাখা আছে। যখন মনে হয়, তুলি নিয়ে আঁকতে বসে যান। ঔপন্যাসিক হিসেবে জীবন-মৃত্যু নিয়ে হুমায়ূনকে ভাবতে হয়েছে। অস্তিত্ববাদী সংকটের নানা অভিজ্ঞতা তাঁর লেখায় আমরা পড়েছি। আমার নিজের খুব পছন্দ এই শুভ্র নামে একটি ছোট উপন্যাস। দেশ পত্রিকায় পূজা সংখ্যায় বেশ কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম। সেখানে গল্প অবশ্য মৃত্যু নিয়ে নয়। অল্প বয়সী একটি ছেলের ক্রমশ অন্ধ হয়ে যাওয়ার গল্প। তার এমন এক অসুখ হয়েছে, যার কোনো নিরাময় নেই, দৃষ্টিশক্তি হারানোর পরিণতি থেকেও তার নিস্তার নেই। সবাই ছেলেটিকে সহানুভূতি দেখায়, কেউ কেউ বুঝি করুণাও করে। ক্রমশ বাড়ির সবাই, এমনকি বন্ধুবান্ধবও তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। ধীরে ধীরে একদম একা হয়ে পড়ে ছেলেটি। তার দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সে বাড়ির একটি কম বয়সী পরিচারিকাকে। ভৃত্য, ফলে সেই মেয়ে সবার কাছে ব্রাত্য। শুভ্র, গল্পের নায়ক, সেও এক অর্থে ব্রাত্য। এই দুই ব্রাত্য মানুষ ক্রমশ কীভাবে একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে, তার চমৎকার মানবিক আখ্যান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হুমায়ূন আহমেদ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। পৃথিবীর সেরা ক্যানসার হাসপাতাল স্লোন ক্যাটারিংয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে। কিন্তু একা চিকিৎসক নন, এই রোগের সেরা ওষুধ রোগী নিজেই, নিরাময়ে তাঁর নিজের আত্মপ্রত্যয়। আমরা জানি, হুমায়ূন জীবনের পক্ষে, জীবনকে তিনি ভালোবাসেন। তাঁর গল্প-উপন্যাসে আমরা বারবার সেই কথার প্রমাণ পেয়েছি। নিজের জীবনচারিতায়ও সেই ভালোবাসার ছাপ স্পষ্ট। শিশুপুত্র নিষাদ তাঁর হাত ধরে ছিল। সেই হাত নিজের তালুতে আলতোভাবে ঘষতে ঘষতে হুমায়ুন বললেন, ‘একটু ক্লান্ত এই যা। তা ছাড়া ভালোই আছি।’ ৬ অক্টোবর ২০১১, নিউইয়র্ক সৌজন্যেঃ প্রথম আলো।
You can follow us on Twitter or join our Facebook fanpage to keep yourself updated on all the latest from Bangla Literature.


Download Bangla books in pdf form mediafire.com and also read it online. Read it from iPad, iPhone. Humayun Ahmed is getting well, bangla ebooks, free download , mediafire , humayun ahmed , zafar iqbal , sunil gangopadhaya , suchitra , bengali ebooks, free bangla books online, ebooks bangla, bangla pdf, bangla books, boi, bangla boi, amarboi.
নতুন বই ইমেইলে পেতে হলে

Post a Comment

1 Comments

Abs Rumon said…
Humayun ahmed valo thakuk,kintu ami valo nei, kotodin boi upload hoi na,ghure ghure jai, vai,kichu boi upload koren.