Ticker

6/recent/ticker-posts

নিরাপদ তন্দ্রা ও মাহমুদুল হকের অন্যান্য রচনাসমগ্র

নিরাপদ তন্দ্রা - মাহমুদুল হক
নিরাপদ তন্দ্রা ও মাহমুদুল হকের অন্যান্য রচনাসমগ্র

ফিকশনের বড় ক্যানভাসেও মাহমুদুল হক ছিলেন একই রকম পাকা জহুরি। বাংলাদেশের সমাজের এমন কিছু চরিত্র তিনি তুলে এনেছেন, এমন কিছু চরিত্র তিনি অলঙ্কার গড়ার মতোই সূক্ষ্ম চারুতায় গড়ে তুলেছেন যা আর কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি। সোনা, রুপা, হীরা, জহরত, মণি, মুক্তা চিনতে মাহমুদুল হকের যেমন খুব একটা সময় লাগত না, তেমনি ‘জীবন আমার বোন’-এর রঞ্জু, খোকা, নীলাভাবি; ‘অনুর পাঠশালা’-এর অনু; ‘নিরাপদ তন্দ্রা’র হিরণ, ইদ্রিস কম্পোজিটর, কাঞ্চন; ‘কালো বরফ’-এর আবদুল খালেক, রেখা, নরহরি ডাক্তার কিংবা ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’ গল্পগ্রন্থ ও অগ্রন্থিত শতাধিক গল্পের শত শত চরিত্রকে চিনে নিতে বা গড়ে নিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। শুধু চরিত্র নয়, যে শব্দ দিয়ে গড়ে তোলা হয় গল্প-উপন্যাস সেই শব্দ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুক্তোদানা বেছে নেওয়ার দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। মুক্তোদানার মতো সব জ্বলজ্বলে শব্দে গেঁথেছেন গদ্যের অপূর্ব মালা। খুব দ্রুত সুনিপুণ গদ্যে লিখেছেন গল্প-উপন্যাস। এ ব্যাপারে একজন দক্ষ কারিগরের মতো তিনিও বলেছেন, ‘লেখালেখি তো কোনো কাজই না। আমার বেশির ভাগ লেখা লিখতে সাত থেকে আট দিন লেগেছে বড়জোর। যে কারণে অধিকাংশ লেখাই সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিনটি লেখা (উপন্যাস) আমি ঘরে বসে লিখেছি—‘জীবন আমার বোন’, ‘নিরাপদ তন্দ্রা’ আর ‘অনুর পাঠাশালা’। বাকিগুলো (‘খেলাঘর’, ‘মাটির জাহাজ’, ‘কালো বরফ’, ‘অশরীরী’, ‘পাতালপুরী’) সব দোকানে বসে লেখা।”

মাহমুদুল হকের লেখার মান উন্নয়নে প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কবি শহীদ কাদরী। লিখিয়ে বন্ধুদের কাছে ও বাড়ির সবার কাছে মাহমুদুল হক পরিচিত ছিলেন ‘বটু’ নামে। তখন তাঁদের আড্ডা হতো রেসকোর্সে। সোনার দোকান বন্ধ করে রেসকোর্সে চলে আসতেন তিনি। রাত দশটা পর্যন্ত সেখানে আড্ডা চলত। দশটার পর রেসকোর্সের গেট বন্ধ হয়ে যেত। তখন অনেকেই চলে যেত। একদিনের কথা। রেসকোর্সের আড্ডা শেষে পাশাপাশি হাঁটছিলেন শহীদ কাদরী আর মাহমুদুল হক। সেদিনের আড্ডায় শহীদ কাদরীর ‘অগ্রজের উত্তর’ কবিতার প্রশংসা করেছিল সবাই। অথচ শহীদ কাদরীর সেই কবিতা ও মাহমুদুল হকের গল্প ‘কণ্ঠস্বরের চিত্র’ প্রকাশিত হয়েছিল একটি পত্রিকার একই সংখ্যায়। সবাই কাদরীর কবিতার প্রশংসা করল, কেউ তাঁর গল্পের কথা কিছু বলল না। এসব ভাবতে ভাবতে কাদরীর পাশে মনমরা হয়ে হাঁটছিলেন মাহমুদুল হক। বুঝতে পেরে কাদরী তাঁকে বললেন, ‘কী রে বটু, তুই কি কিছু বলবি?’ প্রশ্ন শুনে আরও মনমরা হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। একেবারে চুপসে গিয়ে বললেন, ‘না!’ শহীদ কাদরী এবার খুলেই বললেন, ‘অনেকক্ষণ ধরেই তো উসখুস করছিস বলার জন্য। তোর গল্প সম্পর্কে কিছু বলতে চাস?’ এবার মাহমুদুল হক বললেন, ‘হ্যাঁ।’ মাহমুদুল হক ভেবেছিলেন, কাদরী তাঁর গল্পের প্রশংসা করবেন। কিন্তু কাদরী তখন দাঁতমুখ খিঁচিয়ে, খিস্তি মিশিয়ে শুরু করলেন, ‘কী গল্প লিখিস! এত অলঙ্কার! গয়নাগাটি পরিয়ে লেখাকে একদম ভারী করে রাখিস। সব গয়নাগাটি খুলে ফেল, নেংটা করে ফেল, একদম নেংটা করে দে!’ শহীদ কাদরীর এই কথায় চোখ খুলে যায় মাহমুদুল হকের। লেখার নিজের ত্রুটির জায়গাটা আবিষ্কার করতে পারেন তিনি। এরপর থেকেই তাঁর লেখা সবার নজর কাড়তে থাকে।





মাহমুদুল হকের অন্যান্য বইসমূহঃ
অশরীরী - মাহমুদুল হক.pdf - 3 MB
পাতালপুরী - মাহমুদুল হক.pdf - 3 MB
অনুর পাঠশালা - মাহমুদুল হক.pdf - 3 MB
মাটির জাহাজ - মাহমুদুল হক.pdf - 3 MB
জীবন আমার বোন - মাহমুদুল হক.pdf - 15 MB
প্রতিদিন একটি রুমাল - মাহমুদুল হক.pdf - 3 MB
অগন্থিত গল্প - মাহমুদুল হক.pdf - 17 MB
হিরন্ময় কথকতা: মাহমুদুল হকের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার