Ticker

6/recent/ticker-posts

আগুনমুখার মেয়ে - নূরজাহান বোস

আগুনমুখার মেয়ে - নূরজাহান বোস
আগুনমুখার মেয়ে - নূরজাহান বোস
ছোটবেলা থেকে আগুনমুখার নাম শুনেছি সকলের মুখে মুখে। একটা ভীতির শিহরণ জাগতো শরীরে-মনে এই নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে। আগুনমুখার ভয়ানক মূর্তি ছিল কিংবদন্তীর মতো। আগুনমুখা সাত নদীর মোহনা বা সঙ্গম স্থান। তাই চারদিক কেবল থেকে উত্তাল জলরাশি চোখে পড়তো। প্রবল ঢেউয়ের ওপর প্রতিফলিত সূর্যরশ্ণি জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখাকে মনে করিয়ে দিতো। এ জন্যই সম্ভবত এর নাম আগুনমুখা। এপার ওপার করার সময় চারদিকে কিছুই চোখে পড়তো না। শুধু জলরাশি আর জলরাশি। আমার মা, খালা, দাদি এবং গ্রামবাসীর কাছে শুনেছি, এই অঞ্চলের মেয়েরা শাশুড়ি,ননদ এবং স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এই আগুনমুখায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি পেত। প্রেমিক-প্রেমিকারও বাড়ি তথা সমাজে স্বীকৃতি না পেলে আগুনমুখার কোলেই যুগল আশ্রয় নিত। বড় নৌকায় আগুনমুখা পাড়ি দেওয়ার সময় কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে, তার হিসাব কেউ কখনো রাখে নি।
এখন অবশ্য আগুনমুখার চেহারা অনেক বদলে গেছে । কারণ প্রতিনিয়ত পুরনো চর ভাঙছে এবং নতুন চর জেগে উঠেছে। প্রকৃতির এই নির্মম খেলার যারা সাক্ষী তারাই শুধু জানেন আগুনমুখা তাদের জীবনে কী দিয়েছে এবং কী নিয়েছে। এখন লঞ্চে করে আমাদের বাড়ি কাঁটাখালী থেকে গলাচিপায় আসতে-যেতে সময় লাগে চার ঘন্টা ।ওই অঞ্চলে স্কুল হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ,স্বাস্থ্য ক্লিনিক,হাসপাতাল বা সাধারণ মানুষের উপযুক্ত কোনো বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। ঝড়, বন্যা, সাইক্লোলনে মানুষ এখনো প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল। প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর হার ওখানে সবচেয়ে বেশি। পরিবার পরিকল্পনার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও ওই অঞ্চল সম্পর্কে কোনো ধারনাই দেয়া হয়নি।
আমার জীবনে আগুনমুখার প্রভাব অন্তহীন। এই অঞ্চলের সমগ্র জনগোষ্ঠী আমার আত্নার আত্নীয়। এদের সুখ-দু:খের কাহিনী আমার জীবনেরসুখ-দু:খের কথা। তাই আমার জীবনকাহিনৗ আগুনমুখার মেয়েরই কাহিনী।
নূরজাহান বোস
ঢাকা