Ticker

6/recent/ticker-posts

গীতসুত্রসার (গীতসূত্রসার) - কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়

গীতসুত্রসার (গীতসূত্রসার) - কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়
গীতসুত্রসার (গীতসূত্রসার) অখণ্ড - কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়
উদ্ধৃতিগুলোতে মূল বানান অনুসরণ করা হয়েছে।

বইটির যে-পাতাই উল্টাই না কেন রয়েছে মণিমুক্তো ছড়ানো, এমনি সরস, সরল, সাবলীল বয়ানে সঙ্গীত বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের বৈপ্লবিক ঘোষণা পাই। এজন্যেই গীতসূত্ৰসার-নামক বইয়ের লেখক কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (১৮৪৬-১৯০৪) কখনো লেখা হয় সঙ্গীতবিজ্ঞানী, কখনো বলা হয় সঙ্গীতবিপ্লবী। তবে সর্বদা স্মর্তব্য যে দুই ভাগে ১৮৮৫ ও ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত গীতসূত্ৰসার-এর গ্রন্থকারই বঙ্গের প্রথম মিউজিকলজিস্ট।

ভূমিকায় অধ্যাপক নীহারবিন্দু নবধারার ভারতীয় সঙ্গীতবিদদের মধ্যে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর, ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে লেখেন— ‘কিন্তু যে সঙ্গীত চিন্তানায়ক সঙ্গীতরাজ্যের সকল গোঁড়ামি, অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও অশিক্ষিতপটুত্বের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে হিন্দুসঙ্গীতের বিজ্ঞানসম্মত অগ্রগতির দুর্গম পথ সুগম করার কাজে জীবনোৎসর্গ করে গিয়েছেন, তিনি হলেন বিপ্লবী সঙ্গীতবিজ্ঞানী কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়। ...‘কৃষ্ণ ধনবাবু তাঁর অকাট্য যুক্তি ও বিজ্ঞজনোচিত মননশীলতা দ্বারা চিরাচরিত সাঙ্গীতিক প্রথা ও তথাকথিত স্বীকৃত শাস্ত্রের ভ্রান্তি অপনোদন করে গেছেন। শ্ৰীবন্দ্যোপাধ্যায় এমন যুক্তিবাদী ও সত্যসন্ধ ছিলেন যে, সত্য প্রতিষ্ঠাকল্পে তিনি তাঁর গুরুস্থানীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধাচরণ করতেও পশ্চাৎপদ বা কুণ্ঠিত হন নি। অন্ধ গুরুভক্তির আতিশয্যে তিনি কখনো অজ্ঞতা বা চিরকালাশ্রিত অবৈজ্ঞানিক রীতিনীতি ও প্রথাকে প্রশ্রয় দেননি।

"কন্ঠ সম্বন্ধে লোকের আশ্চর্য্য ভ্রান্তি এখনও রহিয়াছে; কণ্ঠ পরিষ্কার হইবে বলিয়া গায়কেরা, ঘৃতাক্ত বস্ত্রখণ্ড পুনঃ পুনঃ গ্রাস করিয়া, তাহা বাহির করিয়া লয়; অধিক ঘৃত দিয়া খিচুড়ী খাইয়া, হাতা উদ্গীর্ণ করিয়া ফেলে। তাহারা জানে না যে, গলদেশে দুইটি নালী; একটী অন্ননালী, যদ্দারা খাদ্য উদরস্থ হয়, সেইটা ভিতর দিকে; অপরটী শ্বাসনালী, যদ্দারা নিশ্বাস-প্রশ্বাস হয়, এটী সম্মুখের দিকে। এই শ্বাসনালী দিয়াই কথা ও গান উচ্চারণ হয়। যাহারা উপরোক্ত প্রকারে কণ্ঠ পরিষ্কার করিতে চেষ্টা করেন, তাঁহাদের সকল কাৰ্যই অন্ননালী দিয়া হয়, কিন্তু সে নালী দিয়া স্বরোচ্চারণ হয় না, সুতরাং তাঁহাদের সকল শ্রমই পণ্ড হয়। যে শ্বাসনালী দিয়া স্বর বাহির হয়, তন্মধ্যে বায়ু ভিন্ন কিছুই যায় না, যাইলে অত্যন্ত কাশি হয়, যাহাকে “বিষম লাগা” বলে, কেবল বায়ু নির্বিঘ্নে যাতায়াত করে। সেই বায়ুই কণ্ঠস্বরের কর্তা।" (গীতসূত্রসার, প্রথম ভাগ)।

"কেহ কেহ যে বলেন সঙ্গীতের চারি প্রকার মত প্রচলিত, ব্রহ্মার মত, ভরত মত, হনুমন্ত মত ও কল্লিনাথ মত, ইহার কোন অর্থ নাই। ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা; তাহার কৃত কোন সঙ্গীত মত থাকা, পৌরাণিক কথা মাত্র। সঙ্গীতসারের অনুক্রমণিকাতে লিখিত হইয়াছে যে, নারদকৃত পঞ্চমসার-সংহিতার মতে ব্রহ্মার পাচ শিষ্য, — ভরত, নারদ, রম্ভা, হুহু ও তুম্বুরু। ভরত যখন ব্রহ্মার শিষ্য, তখন ব্রহ্মার মত হইতে ভরতের মত বিভিন্ন হয় কিসে? সেকালেও কি গুরু মারা বিদ্যা ছিল? অতএব ব্রহ্মার মতটা জাল মত।" (গীতসূত্ৰসার, প্রথম ভাগ)।

ভারতের প্রাচীন গ্রন্থকারগণ সাহিত্য বিষয়ে অসাধারণ পণ্ডিত, আশ্চর্য্য কবিত্বশক্তি-সম্পন্ন ছিলেন। তাঁহারা যে যে বিষয় ধরিয়াছেন, তাহাই এক শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়াছেন; তাঁহাদের কল্পনা বলে দেবতারাও যখন মনুষ্যের ন্যায় রূপগুণ বিশিষ্ট, তখন গানের সুর সকলও মনুষ্যের ন্যায় রূপগুণ বিশিষ্ট না হয় কেন ? এই জন্য স্বরবিন্যাস সমূহের কেহ পুরুষ কেহ স্ত্রী; আবার তাহারা সংসারী— স্ত্রী-পুত্র-বিশিষ্ট। বাইবেলের আদি পুরুষ আদমের স্ত্রী হবা যেরূপ আদমের শরীর হইতে নির্গত হইয়াছিলেন, রাগিণীগণও সেইরূপ রাগ হইতে সমুদ্ভূত হইয়া ঘরকন্না করিতেছে। স্থূল কথা এই, প্রাচীন গ্রন্থকারগণ জানিতেন যে, কালক্রমে রাগ-রাগিণীর সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি হইবে; তাহাদের সহিত আদিরাগনিচয়ের একটা সম্বন্ধ না রাখিলে, ইহারা ক্রমে প্রাধান্য ও আদরহীন হইয়া বিলুপ্ত হইয়া যাইবে । এই জন্য তাহারা এই কৌশল অবলম্বন করেন যে, রাগেরা পুরুষ হইলে তাহাদের স্ত্রীর প্রয়োজন হইবে; এবং ভারতবর্ষের বড় লোকেরা যেমন বহুবিবাহপ্রিয়, রাগেরাও সেইরূপ এক এক জনে পাঁচ বা ছয়টী করিয়া বিবাহ করিল; সুতরাং তাহাদের বহু পুত্রও জন্মিল। রাগপুত্ররাও বহু বিবাহ করিল; তৎপরে উপরাগ ও উপরাগিণী হইতেও বাকি থাকিল না। এইরপে রাগ-রাগিণীর বংশ বৃদ্ধি হইয়া সংখ্যাতীত পরিবার হয়। এক্ষণে যে কোন সুর (রাগ) বলিবে, তাহা ওই আদি রাগ-রাগিণী হইতে যে সমুদ্ভূত হইয়াছে, ইহা বলিবার উত্তম পথ হইয়াছে।' (গীতসূত্ৰসার, প্রথম ভাগ)।
বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।