ইলা মিত্র (১৯২৫-২০০২) প্রখ্যাত রাজনীতিক ও কমিউনিস্ট নেত্রী। জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। পিতা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন। তিন বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে ইলাই ছিলেন জ্যেষ্ঠ।
জীবনের গোড়ার দিকে ইলা মিত্র গোটা ভারতবর্ষের দৃষ্টি কেড়েছিলেন কৃতী ক্রীড়াবিদ হিসেবে। ১৯৩৬ থেকে টানা ৩ বছর জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সের বাংলা চ্যাম্পিয়ন তখনকার ইলা সেন ছিলেন এক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ। কেননা সামাজিক ও ধর্মীয় নানা কুসংস্কারের কারণে তখন অ্যাথলেটিক্সে বাঙালি মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। ইউরোপিয়ান ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের ডিঙ্গিয়ে তিনি ১০০ মিটার দৌড়ে সর্বভারতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকে ভারতীয় দলে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
তিনি ১৯৪০ সালে বেথুন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ১৯৪২ সালে বেথুন কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৪ সালে একই কলেজ থেকে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। এর চৌদ্দ বছর পর ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ছাত্রাবস্থায়ই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে তিনি যুক্ত হন গার্লস স্টোরস কমিটি, ছাত্র ফেডারেশন, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে। মন্বন্তরের সময় তিনি একদিকে খাদ্য আন্দোলন ও ভুখা মিছিলে যোগদান করেছেন, লঙ্গরখানা পরিচালনায় সহায়তা করেছেন, অন্যদিকে খাদ্যাভাব, কাপড়ের সঙ্কট, মহামারী এবং বিশেষ নারী-ব্যবসায়ীদের হাত থেকে অসহায় মেয়েদের বাঁচাতে তার সংগঠনের ভূমিকায় শরিক হয়েছেন।
বিবাহসূত্রে ১৯৪৫ সালে তাকে চলে আসতে হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরে। সামন্ত পরিবারে রক্ষণশীলতাকে ভেঙে তখনকার পল্লীর অচলায়তনকে অতিক্রম করতে তিনি যুক্ত হন মেয়েদের জন্য গড়া নতুন স্কুলের সঙ্গে, শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে পরিবারের শ্রেণী অবস্থানকে অতিক্রম করে কমিউনিস্ট নেতা ও স্বামী রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন জমিদারি উচ্ছেদ ও জোতদারি শোষণের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ের আন্দোলনে। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নোয়াখালীর হাসনাবাদে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজেও তিনি অংশ নেন।
0 Comments