Ticker

6/recent/ticker-posts

আট বছর পর একটি চবি্বশ ঘণ্টার গল্প মনি হায়দার


amarboi.com

আট বছর পর একটি চবি্বশ ঘণ্টার গল্প
মনি হায়দার


মিটিং শুরু হতে এখনো পনেরো মিনিট বাকি। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ফাইল বগলদাবা করে উঠে দাঁড়ায় অনল, ঠিক তখনই ফোনটা চিৎকার করে উঠল। থমকে দাঁড়ায় অনল, ফোনটা কি ধরবে? নাকি না ধরেই চলে যাবে? কিছুক্ষণের মধ্যেই মিটিং শুরু হবে, এ সময় কোনো উটকো ঝামেলা সে চায় না। অনল যেতে যেতে ফোনটা সামান্য সময় থেমে আবার বেজে ওঠে তীব্র উল্লাসে। দ্বিধার সঙ্গে রিসিভার কানে তোলে কিছুটা অসহিষ্ণু বিরক্তির সঙ্গে_হ্যালো?
মিমির খুব জ্বর_ওপাশে মিতা।
ডাক্তার আরমানকে খবর দাও।
আমি ডাক্তারের ফোন নম্বর জানি না।
আচ্ছা, অপেক্ষা করো। দেখি ডায়েরিতে আছে নাকি_হাতের ফাইল টেবিলে রেখে পকেট থেকে টেলিফোন গাইড বের করে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় বাসার পাশের ডাক্তার আরমানের নম্বর। মিতা?
বলো
অনল নম্বর বলে, মিতা লেখে। লেখা শেষে জানতে চায়_ডাক্তারকে তো ফোন করলাম, কিন্তু তুমি আসবে কখন?
আজ আমার অফিসের অ্যানুয়াল মিটিং। অনেক দায়িত্ব আমার ওপর, কি যে করি বুঝতে পারছি না।
ঠিক আছে, তোমার বোঝার দরকার নেই, যা করার আমিই করব_মিতা ঠাস শব্দে রিসিভারটা নামিয়ে রাখে। শব্দটা অনলের কানে বজ্রপাতের মতো লাগল। সত্যিই মিমির দায়িত্ব অনেকটা মিতার ওপরই। নিজের ওপর নিষ্ফল একটা ক্রোধ ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে থাকে। কত দিক সামলাবে সে?
মিতা ডাক্তারকে ফোন করে। কাছেই থাকে ডাক্তার আরমান। ডাক্তার আসার সঙ্গে সঙ্গে মিতা সিদ্ধান্ত নেয় আজকে অফিসে যাবে না। মেয়েটার ওপর সত্যি অন্যায় করা হচ্ছে। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় স্কুলে দিয়ে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের গাড়ি বাসায় দিয়ে যায় মিমিকে। তারপর থেকে কাজের বুয়ার কাছে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অফিস থেকে এসে মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে খুব কষ্ট হয় মিতার। শ্যামবর্ণের সুন্দর মুখটা শুকিয়ে আমসি। আশ্চর্য মিমি এতটুকু রাগ করে না। শান্ত পুতুলের মতো মেয়েটা সারাটা সময় নিজের মতো থাকে, একা একা খেলে। যখন যেভাবে বলে মিতা ঠিক সেভাবেই কাজ করে। কোনো অভিযোগ নেই। আসলে মিমি প্রকৃতিগতভাবেই বুঝে গেছে তাকে এভাবেই বড় হতে হবে। অনেক দিন পর মেয়ের হঠাৎ অসুস্থায় মেয়েটির কাছে আসার সুযোগে ভেতরের গ্লানি তীব্র উচ্ছ্বাসে বেরিয়ে আসতে চায় মিতার। ডাক্তার এসে মিমির চোখ ও জিহ্বা দেখে জ্বর মেপে ওষুধ লিখে বের হয়ে যাওয়ার সময় অনল ঢোকে । তার চোখেমুখেও একটা অপরাধের ঢেউ লেপ্টে আছে।
কেমন দেখলেন? আরমানের কাছে জানতে চায় অনল।
জ্বর, তবে মারাত্মক কিছু আপাতত মনে করছি না। আপাকে বলেছি বারবার ভেজা কাপড় দিয়ে মিমির শরীর মুছে দিতে আর দুই ঘণ্টা পর পর আমাকে ফোনে জানাতে।
ওষুধপত্র?
লিখে দিয়েছি, আপার কাছে প্রেসক্রিপশন আছে। যাই আমি। ডাক্তার চলে যান।
অনল এসে দাঁড়ায় মিমির বিছানায়। মিমি চোখ বুজে শুয়ে আছে। মেয়েটিকে সে অনেক দিন পর দেখছে, মনে হলো। পাশে বসে হাত রাখে মিমির কপালে। মিমি চোখ মেলে তাকায়। অনলকে দেখে মিমির জীর্ণ মুখে মিষ্টি হাসি ফোটে_বাবা!
দুই হাতে মিমিকে কোলে নিয়ে বুকের সঙ্গে জাপটে ধরে। মিমিও জড়িয়ে ধরে অনলকে। পাশে দাঁড়িয়ে পিতা ও কন্যার মধুর দৃশ্য দেখে চোখেমুখে নীরস কৌতুকে মিতা।
মেয়েকে আদর করলেই কি চলবে? ওষুধ আনতে হবে না? মিতা কাটা কাটা কথা বলে।
ঠিক আছে, ওর প্রিয় খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি, মিমিকে আদর করে চলে যায়। মিমি হাসে। মিতা কপট ধমকের সঙ্গে মিমিকে বলে_বাবাকে দেখলে আর কারো কথা বুঝি মনে থাকে না!
মিমি দাঁত বের করে আরো হাসে।
মিতা বাথরুমে ঢোকে। বালতি ভরে পানি আনে, তোয়ালে ভিজিয়ে মিমির শরীর মুছতে থাকে। ফোন বাজে, মিমিকে পানি দেওয়া বন্ধ করে বিরক্তির সঙ্গে ফোনটা ধরে। ওপাশে অফিস কলিগ সেলিম_হ্যালো, মিতা আপা?
হ্যাঁ, বলুন।
অফিসের একটা জরুরি ফাইল মিতার ড্রয়ারে রেখে এসেছে গতকাল। এখন ফাইলটি খুব প্রয়োজন। সেলিম অনুরোধ করে অফিসে এসে ফাইলটা দিয়ে যেতে। ফাইলটির সঙ্গে সেলিমের স্বার্থ জড়িত আছে। তা ছাড়া সেলিম অফিসের কাজে অনেক উপকারও করে। মিতা কী করবে, বুঝতে পারে না। অনল ওষুধ আর মিমির খাবার নিয়ে এলে মিতা দ্বিধার সঙ্গে জানায়_আমার একটু অফিসে যাওয়া দরকার।
তুমি না বললে আজ ছুটি নিয়েছ?
বলেছি তো। কিন্তু_ঘটনা খুলে বলে অনলকে।
তাহলে তো যাওয়া দরকার, যাও।
তুমি এত সব সামলাতে পারবে?
পারব। তা ছাড়া সময় তো বেশি নয়। তোমার আসতে-যেতে যেটুকু সময়, যাও। আমি সামলাতে পারব।
মিতা দ্রুত তৈরি হয়ে দাঁড়ায়। না, বেশি সাজেনি মিতা। মুখে সামান্য প্রসাধন আর কপালে একটা টিপ। আসলে মিতার এই আটপৌরে সাজে অপূর্ব লাগে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অনলের বুকচিরে। অস্ফুট কণ্ঠে কেবল বলে_সুন্দর।
হ্যালো?
ওপাশে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মিতা_মিমিকে নিয়ে কোথায় গেছ?
মিতা, তুমি কাঁদছ কেন? আমি মিমিকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।
সত্যি বলছ?
মানে? ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যায় অনল_কী বলছ তুমি?
মিমিকে নিয়ে যদি হাসপাতালেই যাবে আমাকে জানালে না কেন?
মিতা, বোঝার চেষ্টা করো। হঠাৎ মিমি বমি করল, ডাক্তার আরমানকে ফোন করলাম, তিনি বললেন হাসপাতালে নিয়ে আসতে। জামাকাপড় গুছিয়ে এত দ্রুত আসতে হলো, তোমাকে জানানোর ব্যাপারটা মনেই ছিল না।
মনে হলো মিতা কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে, কোন হাসপাতালে আছ?
ডাক্তার আরমানের হাসপাতালে। তুমি কোথায়?
অফিস থেকে বাসায় এসে দেখি দরজায় তালা।
ঠিক আছে, আমারই ভুল হয়েছে। এখন হাসপাতালে চলে এসো।
আসছি। মিতা মোবাইল কেটে দেয়।
মিতার মোবাইল কেটে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনল এক অন্ধকূপে পতিত হয়, মিতা কি আমাকে অবিশ্বাস করে? ওকি ভেবেছে মিমিকে নিয়ে আমি পালিয়ে গেছি? নিজেকে মানুষ নয়, পাথরও নয় এক অস্পৃশ্য নিকৃষ্ট কীটের মতো অনুভূতি হচ্ছে। মানুষ হিসেবে না হোক, মেয়েটার পিতা হিসেবেও কী মিতা সামান্য বিশ্বাসটুকু রাখতে পারল না! এত দিনের পরিচয়, প্রেম, সংসার। তার পরও এত অবিশ্বাস? হঠাৎ হাসে অনল, ঠিকই তো আছে। অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে দুলতে মিতা আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অনল। ওকে ক্ষমা করে দেওয়াই ভালো। এসব মনে রাখলে কষ্ট কেবল বাড়বে। অনলের ভাবনার মধ্যেই ডাক্তার আসেন। মিমিকে ভালো করে দেখে একটা ওষুধ দেন আর বলেন, বিকেলে রিপোর্ট দেখে যা বলার বলবেন। ডাক্তার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢোকে মিতা।
শোনো মিতা, পরিস্থিতিটা আরো স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে অনল।
বলো। তাকায় মিতা।
দুপুরে কিছু খাওনি বোধ হয়।
না। তুমি খেয়েছ?
খাবার কথা মনেই ছিল না। তোমার অফিসের অবস্থা কী?
ফাইলটা দিয়ে এসেছি আর দুদিনের ছুটির আবেদন করে এসেছি।
ভালো করেছ। আমার অফিসে কী হয়েছে আমি পুরোপুরি জানি না। যাক, যা হওয়ার হবে। আমার মনে হয় তুমি বাসায় যাও। ফ্রেশ হয়ে এসো, আসার সময় আমার জন্য যা কিছু পারো খাবার এনো।
মিতা জানতে চায়, রাতে কি হাসপাতালে থাকতে হবে?
ঠিক বলতে পারি না। তবে তুমি কিছুটা হলেও রাতে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই এসো। বলা তো যায় না ডাক্তার ওর রক্ত আর মল পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর কী ডিসিশন দেন!
ঠিক আছে। মিমির শরীরে আলতো আদর করে মিতা চলে যায়।
ওদের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সন্ধ্যার পরপরই ডাক্তার মিমিকে ছেড়ে দেন। মিমি সুস্থ। জ্বর নেই। অনল বমির কারণ জানতে চাইলে ডাক্তার আরমান বলেন_ও কিছু না। জ্বরটর হলে বাচ্চাদের বমি হতে পারে। তবে আপনাদের মেয়ের পেটে কোনো খাদ্যের সঙ্গে সামান্য পয়জনও গিয়েছিল। তাই হঠাৎ ও রকম বমি করেছে। এখন ভয়ের কোনো কারণ নেই। ওষুধ দিয়েছি, খাওয়াবেন, ঠিক হয়ে যাবে। বাসায় চলে যান। শুধু শুধু কেন হাসপাতালে থেকে কষ্ট করবেন?
অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার_বলে অনল।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হতে হতে প্রায় রাত সাড়ে ১০টা। মিমিকে রাতের খাবার এবং ওষুধ খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে অনল আর মিতা আলো-আঁধারের বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে আর সারা দিনের ঝামেলার একটা খতিয়ান তৈরির চেষ্টা করছে। গুটিগুটি পায়ে এসে দাঁড়ায় মিমি_বাবা?
কী মা?
আমি আজ তোমার সঙ্গে ঘুমোব।
ঠিক আছে মা, তুমি যাও, আমি আসছি। অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য এ রকম একটি আহ্বানের খুব প্রয়োজন ছিল। মিমি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনল উঠে দাঁড়ায়_আমি মিমির কাছে যাচ্ছি।
একলা মিতা বসে থাকে বারান্দায়। রাত ১২টার কাছাকাছি। উত্তরার এই নির্জন এলাকায় কে এমন একলাটি জেগে আছে রাতের বিমূর্ত অন্ধকারে? কেউ তার অপেক্ষায় নেই। মিতার বুকের ভেতর হাজার বীণার হাহাকার একসঙ্গে গেয়ে ওঠে_বিশাল এই সংসারে তুমি একা জেগে আছ। একমাত্র একা।
আপন মনে নিজের ঘরে হাঁটতে হাঁটতে মিমির দরজা খুলে দাঁড়ায়। কী সুন্দর দৃশ্য, মিমি তার বাবার গলা ধরে, বাবার শরীরে পা উঠিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর অনলও মেয়েকে আঁকড়ে ধরে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে দৃশ্যটা দেখতে দেখতে কখন যে মিতার চোখের কোণ বেয়ে পানি নামতে শুরু করেছে, টের পায়নি। ঘুমের ঘোরে অনল শরীর মোচড়াতে শুরু করলে মিতা দ্রুত দরজা বন্ধ করে ত্রস্ত পায়ে ড্রয়িংরুমে ফিরে আসে। টিভিটা চলছে। মিতার প্রিয় একটি নাটকের সিরিজ প্রচারিত হচ্ছে; কিন্তু কোনো শব্দ বা মিউজিক নেই। কারণ সাউন্ড মিউট করে রেখেছিল মিতা। হঠাৎ মিতা সামান্য শব্দে হাসে, নাটক!
শালার নাটক! অন্যের নাটক দেখে কী হবে, নিজের জীবনটাই তো নাটকে ভরা। এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়ায় সে রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে। বসে সোফায়। হাই তোলে। তাকায় ঘড়ির দিকে। রাত আড়াইটা। হঠাৎ দুই চোখে নেমে আসে অকূল ক্লান্তি আর নিবিড় ঘুম। সোফায় শরীর এলিয়ে দেয় মিতা।
অভ্যাসের কারণে সকালে ঘুম ভাঙে মিতার। সে গোসল সেরে অনল আর মিমির জন্য নাশতা তৈরি করে টেবিলে দেয়। অনলও বাথরুম সেরে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসে। টেবিলের দুই পাশে মুখোমুখি বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। মিমিকে নাশতা ও ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে আগেই। সে বিছানায় বসে আপন মনে খেলছে। অনেক দিন পর মা আজ অফিসে যাবে না। মা বলেছেন, সারা দিন তার সঙ্গে থাকবে, মিমির মনটা খুব ভালো। নাশতা প্রায় শেষের দিকে, চায়ের কাপ হাতে মিতা। কলবেল বাজে। অনল তাকায় মিতার দিকে, মিতা তাকায় অনলের দিকে। চায়ের কাপটা পাশে সরিয়ে রেখে যায় দরজার দিকে। তাকিয়ে থাকে অনল। দরজা খুলে দাঁড়ায় মিতা। দরজার ওপাশে দাঁড়ানো এক অচেনা মহিলা। আগন্তুক মহিলার মুখে মৃদু হাসি, এটা মিমিদের বাসা?
হ্যাঁ।
আমি রুপালি। ওর সঙ্গে দেখা করতে চাই।
মিতার শরীর-মন নিঃশব্দ এক তরঙ্গে ছলছলিয়ে ওঠে। সামনে দাঁড়ানো এই মহিলাকে অবচেতনে হলেও সে খানিকটা অনুভব করতে পারছে। মিতা কী করবে বুঝতে পারছে না। সে কি রুপালিকে ভেতরে আসতে বলবে নাকি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেবে?
কে এসেছে মিতা? খাবার টেবিলে বসে প্রশ্ন ছোড়ে অনল।
কী উত্তর দেবে মিতা? উত্তর দেওয়ার চেয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ানোই ভালো। মিতা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। রুপালি হাতে খেলনা, বাচ্চাদের রকমারি খাবার নিয়ে ঢোকে ভেতরে। দরজা বন্ধ করে মিতা যায় রুপালির সঙ্গে মিমির ঘরের দিকে।
যেতে যেতে ডাইনিং রুম অতিক্রমকালে অনলের দিকে তাকিয়ে হাসে রুপালি। হাসে অনলও। মিতা দুজনার হাসি হজম করতে করতে ঢোকে মিমির রুমে। মিমি বিছানায় বসে আপন মনে খেলছে। রুপালি মিমির সামনে বসে ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় হাতের খেলনা, তুমি নিশ্চয়ই মিমি?
অবাক মিমি ঘাড় নাড়ে।
পাশে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছে মিতা। মুখ ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিন হচ্ছে। এক অসহ্য যন্ত্রণায় সে কাঁপছে। অথচ কিছুই করতে পারছে না। এমন ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আগে কখনো পড়েনি।
এই খেলনা, খাবার সব তোমার। আচ্ছা দেখি তোমার গায়ের জ্বর কেমন? রুপালি হাত রাখে মিমির কপালে। নাহ, জ্বর তেমন নেই। ভালো হয়ে গেছ। এখন যাই, পরে আসব। দাঁড়ায় রুপালি।
তুমি কে?
মিমির আচমকা প্রশ্নে হতভম্ব রুপালি তাকায় মিতার দিকে। মিতা কঠিন চোখে তাকিয়ে দেখছে রুপালিকে। চোখে চোখ পড়ায় মিতা দ্রুত চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। রুপালি নিজেকে সামলে নিয়ে মিমির চুলে আদর করতে করতে বলে_আমি ? আমি তোমার একটা আন্টি। বুঝেছ?
মিমি ঘাড় নাড়ে।
এখন বসে বসে খেলা করো।
মিতা আর রুপালি এসে দাঁড়ায় ডাইনিংরুমে। ততক্ষণে অনলের নাশতা শেষ। ওদের দেখে দাঁড়ায়। তাকায় মিতার দিকে_মিতা, তোমাদের মধ্যে পরিচয় বুঝি হয়নি! ও রুপালি। মিতাকে দেখিয়ে, রুপালি? তুমি তো ওকে বুঝতে পেরেছ। ও মিতা। মিমির মা। চলো রুপালি, অনেক দেরি হয়েছে। এখান থেকে অফিস অনেক দূরে।
চলো, রুপালি দাঁড়ায় অনলের পাশে। তাকায় মিতার দিকে_আসি?
ঘাড় নাড়ে মিতা_আচ্ছা।
মিতার চোখের সামনে দিয়ে অনল সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়। সঙ্গে রুপালি। হঠাৎ মিতার দুই চোখে ভয়ংকর জ্বালা শুরু হয়। চোখ থেকে পানি নয়, রক্তের স্রোত নেমে আসতে থাকে। কোনো কারণ নেই, নেই কোনো অধিকারও। তার পরও কেন অস্তিত্বের গহিন থেকে এমন শোক, এমন বিলাপধ্বনি উত্থিত হচ্ছে! মিতা ছটফট করতে থাকে। কী করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে গাড়ির দরজা খুলেছে কেবল, অনলের মোবাইলে একটা মিসড কল আসে। অনল মোবাইল খুলে দেখতে পায় মিতার নম্বর থেকে এসেছে। অনল গাড়িতে রুপালিকে বসিয়ে রেখে ওপরে উঠে আসে। দরজায় দাঁড়ানো মিতা। চোখমুখ ভারী। অনল বুঝতে পারে মিতা তার পাশে রুপালিকে মেনে নিতে পারছে না।
মিতা! এসব কী হচ্ছে?
কোনো কথা বলে না মিতা, দুই চোখের পাতা ভারী হচ্ছে। নাকের দরজা ফুলছে।
এসব কি এখন আমাদের মানায় মিতা? মুখোমুখি দাঁড়িয়ে খুব গাঢ় গলায় বলে অনল_বিয়ের আগে আমরা তিন বছর প্রেম করেছি, তারপর সংসার। বছর কয়েক সুখে কাটার পর সন্দেহ করতে শুরু করলে তুমি। অভিযোগ করলে, আমি নাকি তোমাকে সংসারে বন্দি করে রাখছি। আমাদের সংসারে সন্তান এল, তবুও সন্দেহ গেল না তোমার। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ঝগড়া হতো। চাইলে স্বাধীনতা। আমরা দুজনে আদালতে গিয়েছি। আমি আমার জীবন বেছে নিয়েছি। রুপালিকে বিয়ে করেছি। তুমি সব জানার পরও এখন কেন ছেলেমানুষি করছ? আমি অফিসে যাচ্ছি। বিকেলে এসে মিমির খবর নিয়ে যাব। আর শোনো, মিমির ইচ্ছায় তোমার কাছে থাকছে, থাকুক। আমি তো প্রতি মাসের খরচ দিচ্ছি, দিয়ে যাব। তুমি কিচ্ছু ভেবো না।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে চলে যায় অনল। মিতার দুই চোখে জল। জলচোখে তাকায় সিঁড়ির ওপর। কেউ কোথাও নেই। শূন্য সিঁড়ি। একলা সে। দাঁড়িয়ে আছে খোলা দরজায়...

আপনাদের সহযোগীতা না পেলে এই সাইট সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই যদি বইটি ভালো লেগে থাকে তাহলে দুচার লাইন লিখে আপনার অভিব্যাক্তিগুলো জানিয়ে রাখুন আমাদের কমেন্টস বক্সগুলোতে। আর শুধু মাত্র তাহলে আমরা আরও অনেক বই নিয়ে আপনাদের সামনে আসতে পারবো। ধন্যবাদ।

নতুন বই ইমেইলে পেতে হলে

Click on +1 button before download =>

Post a Comment

0 Comments