হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত
জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার পাকস্থলীর বেশ নিচে 'কোলন' নামক স্থানে ক্যান্সার শনাক্ত করেছেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা হবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল সোলেন ক্যাটারিন ক্যান্সার হাসপাতালে। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বুধবার ভোর ৫টায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিত এবং তার বেশকিছু গ্রন্থের প্রকাশক 'অন্যপ্রকাশে'র স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম।
গেল ঈদের পর নিয়মিত মেডিকেল চেকআপের উদ্দেশ্যে হুমায়ূন আহমেদ সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে যান। তার শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি দেখে চিকিৎসকরা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালে হুমায়ূন আহমেদ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসা করাবেন। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে তাই দ্রুত তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হলেন। হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে, ক্যান্সার এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। তারা কথাশিল্পীর রোগমুক্তির জন্য দেশবাসীর দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর। ১৯৭২ সালে 'নন্দিত নরকে' উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার রূপকথার মতো অলৌকিক এক ভ্রমণের শুভ সূচনা ঘটে। তার সুনিপুণ গল্প বলার ভঙ্গি, সংলাপ রচনার অবিশ্বাস্য কুশলতা, ভাষার সহজ গতিময়তা, কাহিনীর অভিনবত্ব এদেশের ঘরে ঘরে তাকে বরণীয় করে তোলে। সত্তর দশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে আশির দশকে দেশে ফিরে তিনি কথাসাহিত্যের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকও লিখতে শুরু করেন। 'এইসব দিনরাত্রি', 'বহুব্রীহি', 'অয়োময়', 'কোথাও কেউ নেই' তাকে অবিশ্বাস্য এক জনপ্রিয়তায় সিক্ত করে। অবিরল ধারায় লিখে চলেছেন এই বহুপ্রজ কুশলী কথাকার। একুশের বইমেলা মানেই গত তিন দশকজুড়ে আর সবাইকে ছাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদ। বইমেলায় তার একটিমাত্র অটোগ্রাফের আশায় হাজার হাজার মানুষের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষার দৃশ্যটি বইমেলার পরিচিত এক দৃশ্য। হুমায়ূন আহমেদ তার জাদুকরী লেখনীর মাধ্যমে এদেশের প্রকাশনা শিল্পকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তার দুই শতাধিক গ্রন্থের সবক'টিই বহুবার পুনঃমুদ্রিত, তার রচিত ও পরিচালিত টিভি নাটক দেখার জন্য ঈদসহ বিশেষ দিবসগুলোতে দর্শক উন্মুখ হয়ে থাকে। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমণি' মোট ১৩টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ দেশের সবক'টি উল্লেখযোগ্য পুরস্কারে ভূষিত।
0 Comments