Ticker

6/recent/ticker-posts

আইনস্টাইন, আপ সাইড ডাউন - হুমায়ূন আহমেদ

amarboi.com


আইনস্টাইন, আপ সাইড ডাউন
হুমায়ূন আহমেদ


হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসাপাতি খারাপ হলে, গণেশ মূর্তি উল্টে দেওয়ার নিয়ম আছে। ১০ অক্টোবরে টাইম পত্রিকায় দেখলাম আইনস্টাইনের ছবি উল্টো করে ছাপা হয়েছে। কারণ আইনস্টাইনের মূল তত্ত্বই ভুল, এরকম সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আইনস্টাইনের তত্ত্বের মূল স্তম্ভ_ 'আলোর গতি ধ্রুবক'।
ইউরোপের একদল পদার্থবিদ একগুচ্ছ নিউট্রিনোর দেখা পেয়েছেন যাদের গতিবেগ আলোর চেয়ে সামান্য বেশি। ঘটনা সত্যি হলে পদার্থবিদ্যার প্রতিটি টেক্সট বই নতুন করে লিখতে হবে। ফিজিক্স ভয়ঙ্কর।
নিউট্রিনোর গতি কতটা বেশি পাওয়া গেছে সেই হিসাব টাইম পত্রিকা সুন্দর করে দিয়েছে।
পৃথিবী থেকে দৌড়ে উসিয়ান বোল্ট (ম্যারাথন বিজয়ী) যদি চাঁদে যেতে চান তাহলে তার লাগবে ৩৬৫ দিন।
বোয়িং ৭৪৭-এর লাগবে আট দিন।
অ্যাপোলো ১১ রকেটের লাগবে ৭৩ ঘণ্টা।
আলো সময় নেবে ১.২৮৩০ সেকেন্ড।
নিউট্রিনো নেবে ১.২৮২৯ সেকেন্ড।
আইনস্টাইন ভুল প্রমাণিত হচ্ছেন, এই নিয়ে বিজ্ঞানীরা উল্লসিত_ তা কিন্তু না। যারা আবিষ্কারটা করেছেন তারাও চিন্তিত। আলোর চেয়ে বেশি গতি মানে সময়ের উল্টোদিকে চলা। এতে আদি সত্য Caus এবং Effect ভেঙে পড়া।
বন্দুকের ট্রিগার টেপার আগেই গুলি বের হয়ে যাওয়া।
অতীতে অনেকবার আইনস্টাইনের তত্ত্ব ভুল প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এবারও সম্ভব হবে না।
এই গ্রহের সবচেয়ে মেধাবী মানুষ আইনস্টাইন। তাঁর মস্তিষ্ক গবেষণার জন্যে সংরক্ষিত। 
পাঠকরা শুনলে মজা পাবেন যে, 
লেখকদের
একজনের মস্তিষ্কও কিন্তু গবেষণার জন্যে সংরক্ষিত আছে। লেখকের নাম ম্যাক্সিম গোর্কি। এই লেখকের ব্রেইন সংরক্ষিত আছে মস্কোর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজির একটি জারে। মস্তিষ্কের ওজন ১৪২০ গ্রাম। মস্তিষ্কের 'জিনিয়াস' বিষয়টি পরীক্ষা করে ধরার চেষ্টা করা হলো। কিছু পাওয়া গেল না।
আইনস্টাইনের ব্রেইন পরীক্ষা করেও কিছু পাওয়া যায়নি। একজন সাধারণ আমজনতার ব্রেইনের চেয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি বা আইনস্টাইনের ব্রেইন আলাদা কিছু না।
আমরা কি এখন 'থাক বাঁচলাম' বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি? না, পারি না। আমজনতা থেকে কিছু মানুষ সবসময়ই আলাদা হয়ে যাবে। আলাদা তারা কীভাবে হয়, কেন হয়, এই তথ্য কারোরই জানা নেই। আমি সবসময় আলাদা মানুষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো রহস্য পাওয়া যায় কেন তারা আলাদা। কীভাবে? 
যারা সুপার জিনিয়াস পরিচিতি পেয়ে যান তাদের ধারে-কাছে যাওয়া কঠিন ব্যাপার। পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এমন একজন। আমি এই মহান পদার্থবিদের সঙ্গে কথা বলতে খুবই আগ্রহী শুনে আমার বন্ধু বলল, কোনো সমস্যা নেই। আমি ব্যবস্থা করছি। তোমাকে আমার সঙ্গে লন্ডনে যেতে হবে। লন্ডনে আমার যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে স্টিফেন হকিং বাংলা ফুড খেতে আসেন। আমাকে চেনেন এবং খুবই পছন্দ করেন।
আমি বললাম, চুপ থাক ব্যাটা!
সে আহত গলায় বলল, আমি ছবি দেখাচ্ছি। বলেই দুনিয়ার ছবি বের করল। স্টিফেন হকিং বাংলা খাবার খাচ্ছেন। আমার বন্ধুর হাত ধরে আছেন_ এইসব।
স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা শেষ, কারণ আমার বন্ধু মারা গেছেন। আমার বন্ধুর নাম মাহবুব মোল্লা। 
সব মানুষের মতো আমার কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। হঠাৎ হঠাৎ কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা করার প্রবল বাসনা তৈরি হয়। এই বাসনা যাদের জন্যে তৈরি হয় তারা সবাই মৃত। যেমন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামকৃষ্ণ, সতীনাথ ভাদুরি।
গত কিছুদিন ধরে স্টিভ জবস নামের কিংবদন্তি মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। অঢ়ঢ়ষব গুরু, কর্মবীর এবং অতি মেধাবী একজন মানুষ মারা গেছেন ক্যান্সারে। তাঁর অর্থের অভাব ছিল না, আমেরিকায়ও চিকিৎসার অভাব ছিল না।
স্টিভ জবসের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি তার সন্তানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম, তাদের দিকে ফিরে তাকানো হয়নি।
তিনি বলছেন, এক অর্থে ক্যান্সার আমার জন্যে শুভ হয়ে এসেছে। আমি বুঝতে পেরেছি, আমার সময় শেষ। আমি আমার সর্ব মেধা ব্যয় করেছি হাতের কাজ গুটিয়ে আনতে।
মৃত্যুর আগে আগে স্টিভ জবস লিখলেন, "I like to think that something survives after you die. It is strange to think that you accumulate all this experience and may be a little wisdom, and it just goes away. So I really want to believe that something survives."
আমি আমার ডাক্তার স্টিফেন আর ভিচকে বললাম, তোমরা থাকতে, স্লোয়ান-কেটারিং থাকতে, স্টিভ জবস কেন মারা গেলেন?
ডাক্তার ভিচ বললেন, স্টিভ জবস স্লোয়ান-কেটারিংয়ে চিকিৎসা নেননি। দুর্দান্ত মুডি মানুষ হিসেবে শুরুতেও চিকিৎসা নেননি। অপারেশনে রাজি হননি। যখন রাজি হলেন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনকলজিস্টরা অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্টে গেছেন। তার পুরো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্ট সবসময় শুভ ফল আনে না।
ক্যান্সার বিষয়ে আমি এখন অনেক কিছু জানছি। লাং ক্যান্সারকে এখানে ভয়াবহ বলা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্ট্যাটিসটিক্স বলছে, ৬০% লাং ক্যান্সারের রোগী কখনোই সিগারেট খায়নি। তবে বাকি ৪০% ভাগের সবাই ধূমপায়ী।
ক্যান্সারে মৃত ৯৯% রোগী হলো মহিলা, ১% পুরুষ।
মহিলাদের প্রায় সবাই মারা যায় ব্রেস্ট ক্যান্সারে। আমাদের দেশের মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
অনেককে দেখা যায় 'স্তন' শব্দটি যুক্ত থাকার কারণে লজ্জা বোধ করেন। রোগের কাছে লজ্জার কিছু নেই। রোগ লুকানোতেই লজ্জা।
পাদটীকা
শারীরিক ক্যান্সারের মতো মানসিক ক্যান্সারও কিন্তু আছে। রাজনীতিবিদরা দ্রুত এই রোগে আক্রান্ত হন। তখন তারা ডিলিউশনের সমুদ্রে ডুবে যান, ভাবতে থাকেন বাংলাদেশটা শুধুই তাদের ভোগের জন্যে। ক্ষমতা চলে গেলে ডিলিউশন কেটে যায়। ক্যান্সার কিন্তু সারে না। ক্যান্সার অপেক্ষা করে পরবর্তী ডিলিউশনের জন্যে।.

You can follow us on Twitter or join our Facebook fanpage to keep yourself updated on all the latest from Bangla Literature.


Download Bangla books in pdf form mediafire.com and also read it online. Read it from iPad, iPhone. Humayun Ahmed - Einstein Upside Down, bangla ebooks, free download , mediafire , humayun ahmed , zafar iqbal , sunil gangopadhaya , suchitra , bengali ebooks, free bangla books online, ebooks bangla, bangla pdf, bangla books, boi, bangla boi, amarboi.


Subscribe To Get FREE Books!





Post a Comment

0 Comments