![Hijibiji - Humayun Ahmed](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhDfiNwxPoaPKFSC6Yx54LVxlS3tRUQ9_-Tb1QTMCc_rZN8HPlu6oBGHMhynKUu7BWzOAbfVB6bJi6RfxtFBa1-YQCNiSV4XxDM2_hFhkZUoFRB7gvCWMTHWVu9hUuZfCJ4INKsz4lPa6vk/s400-rw/cover%2520%25281%2529.jpg)
'হিজিবিজি' শব্দের আভিধানিক অর্থ 'আঁকাবাঁকা রেখাযুক্ত অর্থহীন অস্পষ্ট লেখা'। অর্থাৎ নানা রেখার সঙ্গে নানা ভাবনার সাঁকোবন্ধন। তবে ভাবনাগুলো হবে শিশুমনের মতো আনন্দময়। বড়রা যেমন কোনো কিছু পরিকল্পনা করে, মনের ভেতর একটা অবয়ব এঁকে, নকশা কেটে লেখাটা দাঁড় করান, জনপ্রিয় কথাসাহিতিক হুমায়ূন আহমেদের রচনা 'হিজিবিজি' সে রকম নয়। তবে কোন রকমের? যদি এককথায় বলতে হয় তবে বলব, 'সাদা কাগজে কলম ছেড়ে দেওয়া লেখা।' 'হিজিবিজি' গল্প নয়, উপন্যাস নয়। ভ্রমণকাহিনী, সায়েন্স ফিকশনও নয়। আত্মজীবনীও নয়। তবে একে জার্নাল বলা যেতে পারে। গল্প করতে করতে লেখক চলে যাচ্ছেন গল্পের ভেতরে, উপন্যাসের অন্তরে। কোনো একটি বিষয় নিয়ে লিখতে লিখতে লেখক চলে যাচ্ছেন, ওই বিষয়ের ইতিহাসে, বিষয়ের সঙ্গে তাঁর অতীত স্মৃতিতে। ফলে এতে পাওয়া যাচ্ছে নানা ফলের নানা ফুলের ছোঁয়া। 'হিজিবিজি' বইটিতে স্থান পাওয়া রচনাতে তাঁর বহুমাত্রিক পরিচয় পাওয়া যায়। আত্মজৈবনিক কিছু রচনা আছে, সেখানে আছে ব্যক্তিগত স্মৃতি ও নিজস্ব অনুভূতি। সমকালীন সমাজ ও রাজনীতি বিষয়েও আছে একাধিক রচনা। এতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মিলবে। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে একটি লেখায়। অন্য কিছু লেখায়ও বাংলাদেশ আর বাঙালি স্মৃতির প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, তাঁর অসামান্য দরদ, অনুরাগ। বইটির সর্বশেষ লেখা 'মাইন্ড গেইম'। এতে ফুটে উঠেছে জীবনের এক গভীর বেদনাবোধ। বইটি বিচিত্র বিষয়ে লেখা হলেও সব রচনাই রসবোধ ও অসাধারণ রচনাশৈলীতে সমৃদ্ধ। আশ্চর্য সারল্য আর মনকাড়া উপস্থাপনার যে বৈশিষ্ট্য একান্তই হুমায়ূন আহমেদের, তাঁর পরিচয় পাওয়া যাবে বইটির প্রতিটি রচনায়। ১২৮ পৃষ্ঠার এই বইটিতে স্থান পেয়েছে লেখকের নানা সময়ে লেখা মোট ২৬টি রচনা। বইটির সূচনা কথায় লেখকের অনুজ বন্ধু ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম লিখেছেন, 'এই গ্রন্থ প্রকাশের প্রেক্ষাপট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হুমায়ূন আহমেদ জীবদ্দশায়ই এই গ্রন্থের পরিকল্পনা করা হয়। ধ্রুব এষ গ্রন্থটির জন্য প্রচ্ছদও তৈরি করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ প্রচ্ছদ দেখে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, বইটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার আগেই অন্তহীন এক ভ্রমণে রওনা হয়ে গেছেন তিনি, একাকী, নিঃসঙ্গ। ছাপার আগে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর প্রতিটি বইয়ের প্রচ্ছদ দেখতেন, মতামত জানাতেন। 'হিজিবিজি' তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ, যেটির প্রচ্ছদ তিনি দেখেছেন, অনুমোদন দিয়েছেন ছাপানোর। তাই গ্রন্থটির স্মারক-তাৎপর্যও কম নয়। বিচিত্র বিষয়ে শিশুদের মতো একটানা লিখে যাওয়া হলেও তা অর্থহীন অস্পষ্ট লেখা নয়। বরং তা অনেক বেশি স্পষ্ট ও সরাসরি কথার বলার রীতি। যখন যা মনে এসেছে, তিনি লিখেছেন। কার্পণ্য করেননি লেখার সঙ্গে, বিশ্বাসঘাতকতা করেননি স্মৃতির সঙ্গে। যখন লেখা থেমে গেছে, তিনি কলম থামিয়ে দিয়েছেন। পাঠক এ ধরনের লেখা পাঠের একটা অদ্ভুত মজা পাবেন। মজা পাবেন দুটি কারণে। প্রথমত বিচিত্র সব তথ্য জানার জন্য ও দ্বিতীয়ত তাঁর রসবোধের জন্য। তাঁর সৃষ্টিসম্ভার চিরকালীন ও চিরভাস্বর।