![amarboi](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhLbrz-7kNCSj78FWEIAauTFonMOOpdcOx8MfNSQfomZTbGTJlhLq-KleBpjGaqW7HyXnk5D8-YOb7B4AcEZH_nYgjN1w1J3i34b5-5y5btVHoVF5ZkBnoGv6gjqICIEooBOpkCgtMD-ZUT/s800-rw/cover%2520%25281%2529.jpg)
সব কিছু ভেঙে চুরে যায় - চিনুয়া আচেবে
অনুবাদঃ কবীর চৌধুরী
সমকালীন আফ্রিকার সবচেয়ে খ্যাতিমান লেখক চিনুয়া আচেবে (১৯৩০-২০১৩)। শুধু বুকার ম্যান পুরস্কারপ্রাপ্তির কারণে নয়, গত কয়েক দশকে আফ্রিকার আধুনিক কথাসাহিত্য যেসব লেখকের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে পাঠক ও সমালোচকের দৃষ্টি কেড়েছে, আচেবের অবস্থান ছিল তাদেরই শীর্ষে। ওলে সোয়েঙ্কা, নগুগি বা থিয়োঙ্গো, ন্যাডিন গর্ডিমার, এম জি কোয়েৎজির পাশাপাশি তার নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। অন্যদের তুলনায় আচেবে অবশ্য আরও কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। প্রথম উপন্যাস লিখে বিশ্বখ্যাতি পেয়েছেন এমন লেখকের সংখ্যা খুব বেশি নেই, সেদিক থেকে আচেবের খ্যাতি বিশ্বজনীন। তার এই খ্যাতির মাত্রা যে কতটা প্রসারিত ও গভীর, পৃথিবীর বিভিন্ন বিদ্যায়তনের পাঠক্রম লক্ষ করলেই তা বোঝা যায়। উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' (থিংস ফল অ্যাপার্ট) (১৯৫৪) শীর্ষক উপন্যাসটি নানান দেশের নানান বিভাগে যেভাবে পড়ানো হয়, তা এককথায় অকল্পনীয়। শুধু ইংরেজি বিভাগে নয়, ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, লোকসাহিত্য, রাজনীতিবিজ্ঞান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যয়ন ও আফ্রিকা অধ্যয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগে এটি পড়ানো হয়। গত কয়েক দশক ধরেই অব্যাহতভাবে চলছে এটি। ইতিমধ্যে এই উপন্যাসের বিক্রির পরিমাণও এক কোটি কপি ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় একশোটি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। ইউরো-মার্কিন বলয়ের বাইরে আর কোনো লেখকের এতটা প্রকাশনার সৌভাগ্য হয়নি। ম্যান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্তি তার এই সাফল্যে আরেকটি তিলক এঁকে দিয়েছিল, কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি তিনি। এই লজ্জা নোবেল পুরস্কারেরই। তার মতো লেখক যে কোনো মানদণ্ডে এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নোবেল না পেলেও নোবেল পাওয়ার খ্যাতিকেও জীবদ্দশায় অতিক্রম করে গেছেন তিনি। এই খ্যাতি জুটেছে মাত্র একটি উপন্যাস 'সব কিছু ভেঙে পড়ে'-এর মাধ্যমে। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতিও এই উপন্যাসের সুবাদে বদলে গেছে অনেকখানি, বিশেষ করে আফ্রিকা বা ঔপনিবেশিক দেশগুলোর উপন্যাসের চারিত্র্য এর প্রভাবে অনেকটাই বদলে গেছে। শুধু এই জনপ্রিয় উপন্যাসটি নয়, অন্যান্য উপন্যাসের সূত্রে আফ্রিকার উত্তর-ঔপনিবেশিক কথাসাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা পেয়ে গেছেন তিনি।
ইংরেজি ভাষায় লেখা আচেবের 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' প্রথম প্রকাশিত হয় লন্ডনে ১৯৫৪ সালে। উপন্যাসটির প্রধান কৃতিত্ব এতে আফ্রিকার সমাজবাস্তবতা, বিশেষ করে ইবো সমাজের বাস্তবতা মূর্ত হয়ে উঠেছে। এর গল্পবলার বা ন্যারেটিভের ধরনটি খুবই সরল, তবে তীব্রভাবে নান্দনিক; ভাষাভঙ্গির দিক থেকেও উপন্যাসটি অভিনব, অনন্য। উত্তর-উপনিবেশবাদী উপন্যাসের নানা বৈশিষ্ট্যে চিনুয়ার এই প্রথম উপন্যাসটি উজ্জ্বল।
আচেবের প্রথম উপন্যাস 'সব কিছু ভেঙে পড়ে'-এর কাহিনীর পটভূমি পূর্ব নাইজেরিয়ার ইবো গ্রাম উমুয়োফিয়া। ইবো জনগোষ্ঠী আর এদের মধ্যে প্রথম বসতি স্থাপন করা শ্বেতাঙ্গদের ঘিরেই আবর্তিত এর কাহিনি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওকোনকোর জীবনবৃত্তকে কেন্দ্র করে ইবোদের জীবনযাপনের পূর্ণাঙ্গ রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন আচেবে। শেষের দিকে পাওয়া যায় মিশনারি ও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইবো সমাজের রূপ কী দাঁড়িয়েছিল, তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা। পুরো উপন্যাসেই আচেবে ব্যবহার করেছেন ইবো ভাষার অসংখ্য শব্দ, বুলি, প্রবাদ, পৌরাণিক অনুষঙ্গ ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষার ছন্দোস্পন্দের মধ্যে এসব শব্দকে তিনি চমৎকারভাবে মিশিয়ে দিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে সেই ব্যবহারে যেমন আছে স্বাভাকিতা, তেমনি আছে অসাধারণ নান্দনিক মাত্রা। ইবো লোকসংস্কৃতিতে গল্প বলার বা ন্যারেটিভের যে রীতি আছে, লোককাহিনীর সেই রীতিকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন আচেবে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটা আপত্তি উঠতে পারে, নিজের মাতৃভাষা অর্থাৎ ইবোতে না লিখে ইংরেজিতে কেন উপন্যাস লিখলেন আচেবে? আচেবেই জানিয়েছেন, তার লক্ষ ছিল বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছুনো। কিন্তু তার মধ্যে অন্য কোনো অভিসন্ধি কী কাজ করেনি? বিশেষ করে উপনিবেশের ভাষায় ঔপনিবেশিকদেরই শিক্ষা দেওয়া যে. দেখ, আমরাও পারি, শুধু পারি না, সৃষ্টি করতে পারি উপন্যাসের/ন্যারেটিভের নতুন ঘরানা। বিল অ্যাশক্রফ্ট ও তার সঙ্গীরা হয়তো এজন্যেই বলতে পেরেছেন, 'সাম্রাজ্য ফিরে আসছে', বিষয়বস্তুতে ও বর্ণনার অভিনবত্বে।
অনুবাদঃ কবীর চৌধুরী
সমকালীন আফ্রিকার সবচেয়ে খ্যাতিমান লেখক চিনুয়া আচেবে (১৯৩০-২০১৩)। শুধু বুকার ম্যান পুরস্কারপ্রাপ্তির কারণে নয়, গত কয়েক দশকে আফ্রিকার আধুনিক কথাসাহিত্য যেসব লেখকের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে পাঠক ও সমালোচকের দৃষ্টি কেড়েছে, আচেবের অবস্থান ছিল তাদেরই শীর্ষে। ওলে সোয়েঙ্কা, নগুগি বা থিয়োঙ্গো, ন্যাডিন গর্ডিমার, এম জি কোয়েৎজির পাশাপাশি তার নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। অন্যদের তুলনায় আচেবে অবশ্য আরও কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। প্রথম উপন্যাস লিখে বিশ্বখ্যাতি পেয়েছেন এমন লেখকের সংখ্যা খুব বেশি নেই, সেদিক থেকে আচেবের খ্যাতি বিশ্বজনীন। তার এই খ্যাতির মাত্রা যে কতটা প্রসারিত ও গভীর, পৃথিবীর বিভিন্ন বিদ্যায়তনের পাঠক্রম লক্ষ করলেই তা বোঝা যায়। উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' (থিংস ফল অ্যাপার্ট) (১৯৫৪) শীর্ষক উপন্যাসটি নানান দেশের নানান বিভাগে যেভাবে পড়ানো হয়, তা এককথায় অকল্পনীয়। শুধু ইংরেজি বিভাগে নয়, ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, লোকসাহিত্য, রাজনীতিবিজ্ঞান, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যয়ন ও আফ্রিকা অধ্যয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিভাগে এটি পড়ানো হয়। গত কয়েক দশক ধরেই অব্যাহতভাবে চলছে এটি। ইতিমধ্যে এই উপন্যাসের বিক্রির পরিমাণও এক কোটি কপি ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় একশোটি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে। ইউরো-মার্কিন বলয়ের বাইরে আর কোনো লেখকের এতটা প্রকাশনার সৌভাগ্য হয়নি। ম্যান বুকার পুরস্কারপ্রাপ্তি তার এই সাফল্যে আরেকটি তিলক এঁকে দিয়েছিল, কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি তিনি। এই লজ্জা নোবেল পুরস্কারেরই। তার মতো লেখক যে কোনো মানদণ্ডে এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নোবেল না পেলেও নোবেল পাওয়ার খ্যাতিকেও জীবদ্দশায় অতিক্রম করে গেছেন তিনি। এই খ্যাতি জুটেছে মাত্র একটি উপন্যাস 'সব কিছু ভেঙে পড়ে'-এর মাধ্যমে। উপন্যাসের গতিপ্রকৃতিও এই উপন্যাসের সুবাদে বদলে গেছে অনেকখানি, বিশেষ করে আফ্রিকা বা ঔপনিবেশিক দেশগুলোর উপন্যাসের চারিত্র্য এর প্রভাবে অনেকটাই বদলে গেছে। শুধু এই জনপ্রিয় উপন্যাসটি নয়, অন্যান্য উপন্যাসের সূত্রে আফ্রিকার উত্তর-ঔপনিবেশিক কথাসাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা পেয়ে গেছেন তিনি।
ইংরেজি ভাষায় লেখা আচেবের 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' প্রথম প্রকাশিত হয় লন্ডনে ১৯৫৪ সালে। উপন্যাসটির প্রধান কৃতিত্ব এতে আফ্রিকার সমাজবাস্তবতা, বিশেষ করে ইবো সমাজের বাস্তবতা মূর্ত হয়ে উঠেছে। এর গল্পবলার বা ন্যারেটিভের ধরনটি খুবই সরল, তবে তীব্রভাবে নান্দনিক; ভাষাভঙ্গির দিক থেকেও উপন্যাসটি অভিনব, অনন্য। উত্তর-উপনিবেশবাদী উপন্যাসের নানা বৈশিষ্ট্যে চিনুয়ার এই প্রথম উপন্যাসটি উজ্জ্বল।
আচেবের প্রথম উপন্যাস 'সব কিছু ভেঙে পড়ে'-এর কাহিনীর পটভূমি পূর্ব নাইজেরিয়ার ইবো গ্রাম উমুয়োফিয়া। ইবো জনগোষ্ঠী আর এদের মধ্যে প্রথম বসতি স্থাপন করা শ্বেতাঙ্গদের ঘিরেই আবর্তিত এর কাহিনি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওকোনকোর জীবনবৃত্তকে কেন্দ্র করে ইবোদের জীবনযাপনের পূর্ণাঙ্গ রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন আচেবে। শেষের দিকে পাওয়া যায় মিশনারি ও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইবো সমাজের রূপ কী দাঁড়িয়েছিল, তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা। পুরো উপন্যাসেই আচেবে ব্যবহার করেছেন ইবো ভাষার অসংখ্য শব্দ, বুলি, প্রবাদ, পৌরাণিক অনুষঙ্গ ইত্যাদি। ইংরেজি ভাষার ছন্দোস্পন্দের মধ্যে এসব শব্দকে তিনি চমৎকারভাবে মিশিয়ে দিয়ে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যে সেই ব্যবহারে যেমন আছে স্বাভাকিতা, তেমনি আছে অসাধারণ নান্দনিক মাত্রা। ইবো লোকসংস্কৃতিতে গল্প বলার বা ন্যারেটিভের যে রীতি আছে, লোককাহিনীর সেই রীতিকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন আচেবে। স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটা আপত্তি উঠতে পারে, নিজের মাতৃভাষা অর্থাৎ ইবোতে না লিখে ইংরেজিতে কেন উপন্যাস লিখলেন আচেবে? আচেবেই জানিয়েছেন, তার লক্ষ ছিল বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছুনো। কিন্তু তার মধ্যে অন্য কোনো অভিসন্ধি কী কাজ করেনি? বিশেষ করে উপনিবেশের ভাষায় ঔপনিবেশিকদেরই শিক্ষা দেওয়া যে. দেখ, আমরাও পারি, শুধু পারি না, সৃষ্টি করতে পারি উপন্যাসের/ন্যারেটিভের নতুন ঘরানা। বিল অ্যাশক্রফ্ট ও তার সঙ্গীরা হয়তো এজন্যেই বলতে পেরেছেন, 'সাম্রাজ্য ফিরে আসছে', বিষয়বস্তুতে ও বর্ণনার অভিনবত্বে।