Ticker

6/recent/ticker-posts

হুমায়ূনের ভুবন থেকে

Humayun Ahmed's paintings
নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় জীবনকে যিনি দেখেছেন নানাভাবে, তিনি হুমায়ূন আহমেদ। সৃষ্টির বহুমাত্রিকতায় তার গুণমুগ্ধ বাংলাভাষী সকল পাঠক। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে হুমায়ূন আহমেদ চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। চিকিৎসা চলাকালে তিনি রঙ তুলি হাতে এঁকেছেন বেশকিছু চিত্রকর্ম। নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্রে তাঁর কয়েকটি চিত্রকর্ম কালের খেয়ায় পত্রস্থ করা হলো তার নির্বাচিত কিছু উৎসর্গপত্র গ্রন্থনা করেছেন আলপনা আখতার



নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ
কেমোথেরাপি হলো একটি দীর্ঘ বেদনাদায়ক নিঃসঙ্গ ভ্রমণ। যে তরুণী আমার এ ভ্রমণ সহনীয় করার জন্য শক্ত হাতে আমার হাত ধরেছে তার নাম শাওন। আমার দুই পুত্র নিনিত ও নিষাদের মমতাময়ী মা। নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ বইটি এই তরুণীর জন্য। যে করুণা, মমতা ও ভালোবাসা সে আমাকে দেখিয়েছে পরম করুণাময় যেন তার বহুগণ তাকে ফেরত দেন এই শুভ কামনা।

নন্দিত নরকে
নন্দিত নরকবাসী মা-বাবা, ভাইবোনদের

জোছনা ও জননীর গল্প
আমার মা বেগম আয়েশা আক্তার খাতুন
বাবা [শহীদ] ফয়জুর রহমান আহমেদ

বাসর
সি্নগ্ধা করিম
আমার উৎসর্গপত্রগুলি সে খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে। আমি না-কি উৎসর্গপত্রে অনেক মজা করি। তার ধারণা কোন একদিন তাকে একটি বই আমি উৎসর্গ করব। সেখানে অনেক মজার কথা থাকবে।
বই উৎসর্গ করা হলো।
এই মেঘ, রৌদ্রছায়া
ছবি পাড়ায় আমার ছোট্ট একটা অফিস আছে। সেই অফিসে রোজ দুপুরবেলা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ উপস্থিত হয় এবং হাসিমুখে বলে, ভাত খেতে এসেছি। সে আসলে আসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্যে। ইদানীং মাহফুজ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরবেলা তার হাসিমুখ দেখতে পাই না। মাহফুজ কি জানে, প্রতিদিন দুপুরে আমি মনে মনে তার জন্যে অপেক্ষা করি?

আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
তার নাম রোমেল। আমি তাকে রহস্য করে ডাকি ত্রুস্ক, রাশিয়ান সাবমেরিন ত্রুস্ক, নাবিকদের নিয়ে সাগরে তলিয়ে যাওয়া ত্রুস্ক। রোমেলকে দেখলেই আমার কেন জানি তলিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের কথা মনে হয়। সে পড়াশোনা করেছে রাশিয়ায়। রূপবতী এক রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। মেয়েটি রাশিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাদের পুতুলের মতো একটা ছেলে আছে। রোমেল তার রাশিয়ান পরিবার নিয়ে পাবনায় বাস করছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু সে জীবন নির্বাহ করছে পত্রিকা বিক্রি করে।
আখতারুজ্জামান রোমেল [ত্রুস্ক]

আসমানীরা তিন বোন
আমি একজনকে চিনি যিনি দাবি করেন তাঁর শরীরের পুরোটাই কলিজা। চামড়ার নিচে রক্ত মাংস কিছু নেই, শুধুই কলিজা। এ ধরনের দাবি করার জন্য সত্যি সত্যিই অনেক বড় কলিজা লাগে।
প্রণব ভট্ট।

বৃষ্টি ও মেঘমালা
মধ্য দুপুরে অতি দীর্ঘ মানুষের ছায়াও ছোট হয়ে যায়।
অধ্যাপক তৌফিকুর রহমানকে।
যাঁর ছায়া কখনো ছোট হয় না।

মৃণ্ময়ীর মন ভালো নেই
তিনি সব সময় হাসেন।
যতোবার তাঁকে দেখেছি, হাসিমুখ দেখেছি।
আমার জানতে ইচ্ছা করে জীবনে কঠিন দুঃসময়ে তিনি যখন কলম হাতে নিয়েছিলেন
তখনও কি তাঁর মুখে হাসি ছিলো?
সর্বজন প্রিয়
আমাদের
রাবেয়া খাতুন

নীল মানুষ
জলি আবেদিন
আড়ালে তাঁকে আমি ডাকি সিস্টার টুয়েন্টি টু ক্যারেট।
কারণ তাঁর হৃদয় বাইশ ক্যারেট সোনায় বানানো_
কোন খাদ নেই।

তিন বিচিত্র
আমার একজন কার্ডিওলজিস্ট বন্ধু আছেন, তাঁর কাছে যখনি যাই তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, আপনার তো দিন শেষ।
কোন ডাক্তারকে এত সহজে দিন শেষের কথা বলতে আগে শুনিনি। আমি মুগ্ধ!
প্রফেসর বরেণ চক্রবর্তী
ভালোমানুষেষু


দিঘির জলে কার ছায়া গো
কন্যা লীলাবতীকে। এই উপন্যাসের নায়িকা লীলা। আমার মেয়ে লীলাবতীর নামে নাম। লীলাবতী কোনোদিন বড় হবে না। আমি কল্পনায় তাকে বড় করেছি। চেষ্টা করেছি ভালোবাসায় মাখামাখি একটি জীবন তাকে দিতে। মা লীলাবতী : নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।

লিলুয়া বাতাস
দীর্ঘদিন কেউ আমার পাশে থাকে না, একসময় দূরে সরে যায়।
হঠাৎ হঠাৎ এক আধজন পাওয়া যায় যারা ঝুলেই থাকে, যেমন অভিনেতা ফারুক।
লিলুয়া বাতাস বইটি তার জন্যে।
পরম করুণাময় তার হৃদয়ে লিলুয়া বাতাস বইয়ে দেবেন, এই আমার শুভ কামনা।
ফারুক আহমেদ
সেদিন চৈত্রমাস
আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অতি বুদ্ধিমান কেউ কখনো ভাল মানুষ হয় না। মারুফ তার ব্যতিক্রম। আচ্ছা তার সমস্যাটা কি?
মারুফুল ইসলাম
ভালমানুষেষু

তেঁতুল বনে জোছনা
অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ
কিছু মানুষ আছেন যাদের দেখামাত্র মন আনন্দে পূর্ণ হয়, কিন্তু তারা যখন কাছে থাকেন না তখন তাদের কথা তেমন মনে পড়ে না। হায়াৎ ভাই সেই দলের আমার দেখা নিখুঁত ভালো মানুষদের একজন।

আনন্দ বেদনার কাব্য
শামসুর রাহমান
শ্রদ্ধাস্পদেষু
আমাকে দেখাও পথ ধ্যানী;
চোখ বন্ধ ক'রে অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে
এখন কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?

কালো যাদুকর
জুয়েল আইচ
জাদুবিদ্যার এভারেস্টে যিনি উঠেছেন।
এভারেস্টজয়ীরা শৃঙ্গ বিজয়ের পর নেমে আসেন।
ইনি নামতে ভুলে গেছেন।

আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প
আমার তিন কন্যা বিপাশা, শীলা, নোভা।
এরা ভূত বিশ্বাস করে না, কিন্তু ভূতের ভয়ে অস্থির হয়ে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় তিন কন্যা ঠাসাঠাসি করে এক বিছানায় ঘুমুচ্ছে, কারণ কেউ একজন ভয় পেয়েছে।

আজ আমি কোথাও যাবো না
মানুষ পৃথিবীতে এসেছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে। শোনা যায় কিছু মহাসৌভাগ্যবান মানুষ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়েও আসেন। আমার কপাল মন্দ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দূরের কথা পঞ্চম ইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয় কাজ করে না। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে আমি কোন কিছুর গন্ধ পাই না। ফুলের ঘ্রাণ, লেবুর ঘ্রাণ, ভেজা মাটির ঘ্রাণ ... কোন কিছুই না।
এদেশের এবং বিদেশের অনেক ডাক্তার দেখালাম। সবাই বললেন, যে নার্ভ গন্ধের সিগন্যাল মস্তিষ্কে নিয়ে যায় সেই নার্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা আর ঠিক হবে না। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গন্ধবিহীন জগৎ স্বীকার করে নিলাম।
কী আশ্চর্য কথা, অল্পবয়স্ক এক ডাক্তার আমার জগতকে সৌরভময় করতে এগিয়ে এলেন। দীর্ঘ পনেরো বছর পর হঠাৎ লেবু ফুলের গন্ধ পেয়ে অভিভূত হয়ে বললাম, এ-কী!
যিনি আমার জগৎ সৌরভময় করেছেন, তাঁর নিজস্ব ভুবনে শত বর্ণের শত গন্ধের, শত পুষ্প আজীবন ফুটে থাকুক_ এই আমার তাঁর প্রতি শুভ কামনা।
ডা. জাহিদ

বাদশাহ নামদার
নিনিত হুমায়ূন
আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে। সে যেন আমাকে মনে রাখে এইজন্যে নানান কর্মকাণ্ড করছি। আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি না। এখন সুযোগ পেলেই নিনিতকে কোলে নিয়ে ছবি তুলি।
এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।
চলে যায় বসন্তের দিন
আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের লেখা 'মরণ সঙ্গীত'- 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়'।
প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়ে আছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে_ 'মরিলে কান্দিস না আমার দায় ...'
'নক্ষত্রের রাত' নামের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং ফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং একজন কে দায়িত্ব দিলাম গানটি বিশেষ সময়ে গাইতে। সে রাজি হলো। উৎসর্গ পত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।
মেহের আফরোজ শাওন

দেখা না-দেখা
নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!

ফাউন্টেনপেন
ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না। কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি। তার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। দশজন কিংবা বারোজন না হয়ে ক্রিকেট কেন এগারজনের খেলা?

হিমুর দ্বিতীয় প্রহর
জাহিদ হাসান, প্রিয় মানুষ
মানুষ হিসেবে সে আমাকে মুগ্ধ করেছে,
একদিন হয়তো অভিনয় দিয়েও মুগ্ধ করবে।
[দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে তাকে রাগিয়ে দিলাম, হা হা হা]

মধ্যাহ্ন প্রথম খণ্ড
মেহের আফরোজ শাওন।
পরম করুণাময় ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তাকে দিয়েছেন। তার কোলভর্তি নিষাদ নামের কোমল জোছনা। আমার মতো অভাজন তাকে কি দিতে পারে? আমি দিলাম মধ্যাহ্ন। তার কোলে জোছনা, মাথার উপর মধ্যাহ্ন। খারাপ কি?

মধ্যাহ্ন দ্বিতীয় খণ্ড
বোবায় ধরা নামের একটি জটিল ব্যাধি আমার আছে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় বিকট দর্শন জন্তুর মতো কয়েকটি অতিপ্রাকৃত প্রাণী আমার বুকে বসেছে। গলা চেপে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। আতঙ্কে আমি অস্থির হয়ে চিৎকার করতে থাকি। তখন একটা কোমল স্পর্শ আমার কপালে পেঁৗছে। গভীর মমতায় একজন বলে, 'এই তো আমি আছি'। আমার ঘুম ভাঙে, আমি স্বাভাবিক হই।
মমতাময়ী শাওনকে।

মাতাল হাওয়া
কোন মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন।
আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
তাঁর রক্তমাখা শার্ট ছিলো ঊনসত্তরের
গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি

আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ
বৃক্ষদের!
যাদের কারণে গল্পগুলি লেখা হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments