Ticker

6/recent/ticker-posts

নীললোহিত সমগ্র ০১ থেকে ০৫ - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নীললোহিত সমগ্র ০১ থেকে ০৫ - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নীললোহিত সমগ্র ০১ থেকে ০৫ - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
দুটো উপন্যাসের গোড়ার প্যারা তুলে দিচ্ছি। বাঙালি কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীর আর বিশেষ কোনও ক্লু-এর প্রয়োজন হবে না কথক-লেখকটিকে ঠাউর করার জন্য। ঠিক উত্তরের জন্য কোনও পুরস্কার নেই। এই নিন...
“মানিব্যাগ রাখার অভ্যেস আমার নেই কখনো। যখন যা দু’চার টাকা থাকে, বুকপকেটেই রাখি। আর প্যান্টের পকেটে রাখলে চেপ্টে যায় বলে সিগারেট-দেশলাইও ঐ বুকপকেটেই রাখতে হয়। হাওয়াই সার্টের ঐ একটাই পকেট।
চক্রধরপুর থেকে ট্রাকে চেপে যাচ্ছিলাম টেবো-হেমাডির দিকে।”
বেশ টের পাচ্ছি উত্তর উচ্চারণ করার জন্য ঠোঁট কাঁপছে বহু পাঠক-পাঠিকার। তবু সবুর করুন দ্বিতীয় কোট-এর জন্য, একটুখানি...
“যারা জীবনে কখনো দিকশূন্যপুরে যায়নি, কিংবা সে-জায়গাটার নামও শোনেনি, তারা বুঝতে পারবে না তারা কী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার অস্তিত্বই জানা নেই, তাকে না-পাওয়ার তো কোনো দুঃখ থাকে না। কিন্তু যারা দিকশূন্যপুরে একবার গেছে, কিন্তু বারবার ফিরে যেতে পারেনি, তাদের অতৃপ্তির শেষ নেই। আমি মাঝে মাঝে সেই জায়গাটার কথা ভাবি, কিন্তু আমারও যাওয়া হয়ে ওঠে না। কেউ আমাকে ডেকে নিয়ে যায় দক্ষিণে, কেউ উত্তরে।”
একটাই বুকপকেটঅলা হাওয়াই শার্ট আর উত্তর-দক্ষিণের টানাপড়েনে থাকা বাহাদুর কথকটি যে নীলু, মানে নীললোহিত তা কিন্তু আর বলার অপেক্ষায় রইল না। দিকশূন্যপুর তো ওরই আবিষ্কার, সেখানে না পৌঁছেই।
এ ভাবে বছর তিরিশেক চালানোর পর সত্যি সত্যি একবার দিকশূন্যপুরে পৌঁছেও গেল নীললোহিত ‘চলো দিকশূন্যপুর’ উপন্যাসে। সেখানকার ট্রেনে চাপার আগে নিজেকে বোঝালও, “মন চলো নিজ নিকেতনে। চলো দিকশূন্যপুর।”
বেশ উপন্যাস গজাল সেখানে। রোহিলা বলে একটা মেয়েকে নিয়ে নানা বৃত্তান্ত। কিন্তু সেই দিকশূন্যপুরের ভূগোল-ইতিহাস শনাক্ত করে কোন ব্যোমকেশ! দিকশূন্যপুর রয়ে গেল দিকশূন্যপুরে।
দমদম, শ্যামবাজারের অলিগলিতে বেড়ে ওঠা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তিন নির্মাণের কোনটি যে বাঙালির বেশি আদরের অ্যাদ্দিনেও নিশ্চিত করা গেল না। নীরা? নীলু? না, সুনীল?
নীরার কথা ছেড়েই দিন, সে আরেক দিকশূন্যপুর। সুনীলের আত্মজীবনী ‘অর্ধেক জীবন’ পড়ে বুঝেছি নীললোহিতের অন্তরালে থেকে উনি নিজেকে অনেক স্পষ্ট করে স্পর্শ করতেন, ভালবেসে চেনাতে পারতেন।
একেক সময় ধন্ধে পড়ি সুনীলের ছদ্মনাম নীললোহিত না ভাইসি ভার্সা! অর্থাৎ উল্টোটা। কারণ কী, গোটা চল্লিশ বছর ধরে কখনও কাছে থেকে, কখনও অদূর থেকে দেখে আর পড়ে এটাই বুঝলাম যে সারাটা লেখকজীবন ধরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একাদিক্রমে চেষ্টাই ছিল যথাসম্ভব নীললোহিত হয়ে ওঠা।
Download and Comments/Join our Facebook Group