![সাস্টে ২২ বছর - ইয়াসমীন হক](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgUGYfj9RJL3W4eD1G8kxZPAKBszl_kxTEpyY4hL19HHi_zt0WVduWEzlAVMogkqx-xaqVTeRnQ5wDISUBszxMA2Cd_saAW4iSFHn7NNoTqMGRPzI1buaeA4CramU95LekLuezHT_zz4D-R/s400-rw/IMG_0001.jpg)
সাস্টে ২২ বছর - ইয়াসমীন হক
অনুবাদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
“...ভোরবেলার শিফটে যে পুলিশেরা ছিল, তারা ডিউটি শেষ করে চলে গেছে এবং পরের শিফট তখনো আসেনি। এই সময় তিনজন তরুণ আমাদের বিল্ডিংয়ের দিকে ছুটে আসে, গার্ড ভয় পেয়ে গেটে তালা মেরে উপরে উঠে গেল। কাজেই তারা আর বাসার ভিতরে ঢুকতে পারল না । বাইরে থেকে আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনের জানালাতে বোমা ছুড়ে মারল ।
আমরা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম থেকে জেগে৷ উঠেছি। একটা ভয়াবহ আতঙ্কের পরিবেশ । মনে আছে নাবিল আর ইয়েশিম তখন চিৎকার করছে । ইয়েশিম কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “আব্বু তুমি লুকিয়ে যাও! প্লিজ লুকিয়ে যাও..."
এই বইটি হচ্ছে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প-কথা, শুধু যে লেখাপড়া এবং গবেষণার গল্প তা নয় একই সাথে এটি আন্তরিকতা, ত্যাগ, পরিশ্রম, দুঃখ, সন্ত্রাস, অসততা, প্রতারণা, ক্রোধ এবং সবার উপরে ব্যক্তিগত সাহসের গল্প । তরুণ শিক্ষকেরা কীভাবে এই ক্যাম্পাসটিকে প্ৰাণোচ্ছল করে রেখেছে। তার গল্প । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বিচিত্ৰ ঘটনার ভেতর কেমন করে ছাত্রছাত্রীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে তার গল্প ।
প্রচ্ছদ আলোকচিত্ৰ : অনি ইসলাম
আলোকচিত্রঃ তানভীর আলীম
সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতিঃ
ইয়াসমীন হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে ১৯৭৬ সালে পি.এইচ.ডি করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন । ১৯৮৪ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে পি.এইচ.ডি. শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল কাজ শুরু করেন ।
ইয়াসমীন হক ১৯৭৮ সালে তার সহপাঠি মুহম্মদ জাফর ইকবালকে বিয়ে করেন । তাদের দুই সন্তান, নাবিল ইকবাল ও ইয়েশিম ইকবাল । তার পুত্ৰ সন্তানের জন্মের পরপরই তিনি পোস্ট ডক্টরাল কাজ বন্ধ করে দেন । তার শিশু সন্তানেরা স্কুলে যাওয়ার উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত বহু বছর তিনি তার সন্তানদের বড় করে তোলেন । (ছেলে নাবিল এম.আই.টি থেকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পি.এইচ.ডি. করে এখন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ডরহামে শিক্ষকতা করছে। মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজিতে পি.এইচ.ডি. সমাপ্ত করছে।)
ইয়াসমীন হক ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন । তখন থেকে তিনি এখানেই আছেন, ছাত্রছাত্রীদের সময় দেয়ার পাশাপাশি গবেষণার জন্যে একটি প্রথম শ্রেণীর ‘নন-লিনিয়ার অপটিক্স ল্যাবরেটরি’ গড়ে তুলছেন ।
ভূমিকা
আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কেন আমি এই বইটি লিখেছি আমার মনে হয় না। আমি সহজ কোনো উত্তর দিতে পারব! কোনো একটা কারণে আমার দিন তারিখ মনে থাকে, শুধুমাত্র এই কারণে জাফর ইকবাল বহুদিন থেকে আমাকে বলে আসছে সাস্টের সুদীর্ঘ ২২ বছর সময়ে আমি এখানে যা যা ঘটতে দেখেছি সেগুলো যেন লিখে রাখি । তবে সত্যি সত্যি লেখালেখির কাজটি শুরু করেছি আমাদের সাপ্তাহিক মঙ্গলবারের আড্ডার সদস্যদের আগ্ৰহ আর উৎসাহের কারণে ।
আমার এই লেখায় সাস্টের প্রকৃত ঘটনা প্রবাহের কিছুই ফুটিয়ে তােলা সম্ভব নয়, আমি শুধুমাত্র একটুখানি তুলে ধরেছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবন উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রায় সময়ে বিচিত্র ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এই ঘটনাগুলোর মাঝে ভালো ঘটনা যেরকম আছে ঠিক সেরকম খারাপ ঘটনাও আছে। তরুণ শিক্ষকেরা যেরকম জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে পারে ঠিক সেভাবে রাজনীতিতে ঝুকে জীবনকে যন্ত্রণাময় করে তুলতে পারে।
লেখার সময় যখন নেতিবাচক কোনো ঘটনাকে বর্ণনা করতে হয়েছে তখন চেষ্টা করেছি ঘটনার পাত্ৰপাত্রীদের নামটি গোপন রাখতে । দুর্ভাগ্যক্রমে ভাইসচ্যান্সেলরদের সময় এই নিয়মটা মানা সম্ভব হয়নি তাদের নামগুলো এতো স্পষ্ট যে সেগুলো গোপন রাখার কোনো উপায়ও নেই ।
সাস্টে আমাদের জীবনটি কেমন ছিল সেটি কোনোভাবেই আমার পক্ষে পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। যখন আমি এটা লিখেছিলাম তখন মাঝে মাঝেই কোনো কোনো ঘটনা লিখতে গিয়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই এখানে আমাদের জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছে এবং শুধুমাত্র তাদের জন্যেই এখানে আমি বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছি। এই ছাত্রছাত্রীরাই আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করেছে এবং উজীবিত করেছে।
আমি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ আমার এই পাণ্ডুলিপিিটকে চূড়ান্তরূপ দেয়ার ব্যাপারে কম্পোজ এবং টাইপ করায় সাহায্য করার জন্যে । পুরানো ছবিগুলো খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্যে আমি আমার সহকর্মী বন্ধুবান্ধব এবং ছাত্রছাত্রীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই ।
আমি আলাদাভাবে আমার দুই সন্তান এবং জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের অসংখ্য পরামর্শ এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্যে । শুধুমাত্র তাদের উৎসাহ আর অনুপ্রেরণার জন্যেই এই বইটি লেখা সম্ভব হয়েছে!
ইয়াসমীন হক
সিলেট, ১০ জানুয়ারী ২০১৭