Ticker

6/recent/ticker-posts

রাজাধিরাজ - কামাল রাহমান

amarboi
রাজাধিরাজ - কামাল রাহমান

কাহিনী-সংক্ষেপ

পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা ব্যবহারকারী (প্রায় চব্বিশ কোটি) বাঙালি জনগোষ্ঠির বর্তমান ভৌগোলিক অবস্থানটি গড়ে উঠেছিল একাদশ ও দ্বাদশ শতকে, সেন রাজাদের সময়ে। সম্ভবত বাংলা ভাষাটাও রূপ পেতে শুরু করে তখন। ভাষাভিত্তিক একটা স¤প্রদায়, বা জাতি গড়ে ওঠার ঐ সময়টাকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়তো হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠি ও স¤প্রদায় রাজনীতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতি কারণে অসংখ্যবার বিভাজিত হয়েছে বা শাসক গোষ্ঠির স্বার্থে ওদের বিভক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ভাষার ঐক্যটা হয়তো আগামীদিনে প্রধান হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ এর সঙ্গে রয়েছে মা ও জননী, জন্মভূমির শেকড়-সম্পর্ক। সেন রাজ্যের সব চেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রাজা লক্ষণ সেনকে ত্রয়োদশ শতকের শুরুর দিকে পালিয়ে যাওয়ার কলঙ্কে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। এটার ঐতিহাসিক ভিত্তি কতটুকু তা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা এখনো হয়নি। এমনকি লক্ষণ সেনের পরাজয়ের কারণ ও এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া, যা একটা নতুন জনগোষ্ঠি গড়ে উঠার সময়ের প্রথম পরাজয়, তাও তলিয়ে দেখা হয়নি।

রাজাধিরাজ উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে সেন রাজ্যের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে, মূলত লক্ষণ সেনের রাজত্বের সময়, সমাজ ও অন্যান্য অনুষঙ্গ ঘিরে। কোনোভাবেই এটা ইতিহাস নয়, তবে পুরোপুরি ইতিহাস-আশ্রিত। বিভিন্ন বইপত্র, অন্তর্জাল ও অন্যান্য তথ্য ও সূত্র মিলিয়ে এই ইতিহাসটা বড় জোর পাঁচ পৃষ্ঠার, এবং প্রায়শ বিভ্রান্তিকর। সামন্ত-রাজা বীরসেনের(?) পুত্র সামন্ত সেনের রাঢ় অঞ্চলে অভিবাসন, হেমন্ত সেনের রাজা হয়ে ওঠা, বিজয় সেনের অমিতবিক্রম বিজয়াভিযান, মহারাজাধিরাজ বল্লাল সেনের অসীম বাহুবল, অকল্পনীয় কবি-প্রতিভা, ও অন্ধবিশ্বাস-ভিত্তিক তান্ত্রিক সাধনা প্রভৃতি বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসের প্রথম চারটি অধ্যায়ে। পরের ষোলটি অধ্যায়ে রয়েছে লক্ষণ সেনের সুদীর্ঘ জীবনের নাটকীয় ও বিপুল উত্থান ও কলঙ্কমাখা পতনের কাহিনী।

প্রায় দুশো পৃষ্ঠার উপন্যাসটির প্রায় সবটাই কল্পনা, তবে ইতিহাসের সম্ভাব্যতার আলোক বিশ্লেষণে। চেষ্টা করা হয়েছে যতটা সম্ভব নির্মোহ থেকে প্রকৃত ইতিহাসটা কি হতে পারে তা ভেবে বের করা। উপন্যাসের শুরুতে আছে সামন্ত সেনের পিতা বীরসেনের কাছ থেকে পাওয়া স্বপ্ন, ভবিষ্যতের একটা সেন রাজ্যের কল্পনা, ও দক্ষিণ রাঢ়ে এর বীজ রোপন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাজা হেমন্ত সেন কর্তৃক এর সফল বাস্তবায়ন। তৃতীয় অধ্যায়ে বিজয় সেনের পরিপূর্ণ শক্তিমত্তা নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়, বঙ্গ, সমতট প্রভৃতি মিলিয়ে সেন রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা দেয়া। চতুর্থ অধ্যায়ে মহারাজ বল্লাল সেন বিপুল বিক্রমে রাজ্যের স¤প্রসারণ করে চলেছেন, কিন্তু সেই সঙ্গে তার ভেতর দেখা দিয়েছে এক কবি মন। তান্ত্রিক ব্রাহ্মণেরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত করে ফেলে এই অসম-সাহসী মহাপ্রাণ মানুষটিকে। পুরো সেন রাজ্যটাকে বঙ্গ, বরেন্দ্র, রাঢ়, মিথিলা ও বাগড়ি, এই পাঁচটি ভাগে রাজ্য-প্রশাসকের অধীনে বিন্যন্ত করেন তিনি। তান্ত্রিক সাধনায় ডুবে যেয়ে সম্ভাবনাময় এই সেন রাজ্যটাকে বহির্বিশ্ব হতে বিচ্ছিন্ন করে এক অন্ধ-আবর্তের ভেতর ফেলে দেন বল্লাল সেন। অবশেষে লক্ষণ সেনের হাতে রাজ্য-ভার সঁপে দিয়ে পুরোপুরি তন্ত্র-মন্ত্র সাধনায় মেতে ওঠেন। উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া এই বিশাল সাম্রাজ্য আরো সুদৃঢ় ও সুসংহত করে লক্ষণ সেন। এক কবি মন তাঁর ভেতরেও গড়ে উঠেছিল। পশ্চাতমুখী তান্ত্রিক ব্রাহ্মণদের আওতা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হন তিনিও। শেষ পর্যন্ত যার চরম মূল্য দিতে হয় পালিয়ে যাওয়ার কলঙ্ক মাথায় নিয়ে গঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম দিকটা লুটেরা তুর্কিদের হাতে ছেড়ে দিয়ে বঙ্গ-সমতটে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। লক্ষণ সেনের ব্যক্তি-চরিত্রের মধ্যে কবি, শাসক ও তান্ত্রিক, এই ত্রিমুখী বৈশিষ্ট্যের সার্বক্ষণিক সংঘাতের ভেতর কীভাবে নিজেকে গুণান্বিত করেছেন, আবার ক্ষতবিক্ষতও হয়েছেন, এর কাল্পনিক বিশ্লেষণ রয়েছে উপন্যাসটিতে। নিজের মনোজগতকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করতে যেয়ে কি অসীম অন্তর্যাতনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত কি ভয়ানক দুঃখ ও দুর্দশা নেমে আসে তাঁর জীবনে তা যথাসাধ্য বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাল্যসখা আরণ্যর সঙ্গে লক্ষণ সেনের কথোপকথনের সূত্র ধরে কিংবদন্তীর এই দুর্ভাগা মহানায়কের মনোজগতের স্পর্শ পাঠক পাবেন উপন্যাসটির শেষাংশের অধ্যায়গুলোতে। উপন্যাসের আরণ্য চরিত্রটি কাল্পনিক। অন্যান চরিত্রগুলো ইতিহাস-নির্ভর।

বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।