Ticker

6/recent/ticker-posts

সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে | সম্পাদনা : ইরফান হাবিব

সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে

কার্ল মার্কস, ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস, ভি আই লেনিন, জে ভি স্তালিন ও মাও জেদং-এর রচনাসমূহ থেকে নির্বাচিত

টীকাসমূহ ও সম্পাদকের নোট হিসাবে যুক্ত পরিশিষ্ট-সহ

সম্পাদনা : ইরফান হাবিব

অনুবাদ : জয়দীপ ভট্টাচার্য

সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে সম্পাদনা : ইরফান হাবিব


‘প্রয়োজনের রাজ্য থেকে স্বাধীনতার রাজ্যে উত্তরণের' জন্য মানবতার যে প্রথম সচেতন পদক্ষেপ তা হলো সমাজতন্ত্র। এই সমাজতান্ত্রিক সমাজের মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলির একটি ধারণা মার্কসীয় তত্ত্বে যেভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে, প্রধানত মার্কস ও এঙ্গেলস, লেনিন, স্তালিন এবং মাও-য়ের লেখায় এ প্রসঙ্গে যা কিছু সুস্পষ্ট অবয়বে ধরা পড়েছে - তাকেই দু'মলাটে ধরার প্রয়াস এই বই। বইটি সম্পাদনা ও প্রয়োজনীয় নানান টীকার নির্মাণ করেছেন অধ্যাপক ইরফান হাবিব। তার সঙ্গে সম্পাদকের নোট হিসাবে যুক্ত করেছেন একটি পরিশিষ্ট। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে, তাদের অতীত সম্পর্কে যা কিছু নিশ্চিতভাবে জানা যায় তা খোলাখুলিভাবে ব্যবহার করে, সমাজতন্ত্র প্রসঙ্গে মার্কসীয় তত্ত্বটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এই পরিশিষ্টে।

অধ্যাপক ইরফান হাবিব প্রথিতযশা মার্কসবাদী ইতিহাসবেত্তা। তিনি ছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস-বিষয়ক পঠনের সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডি-র ‘প্রফেসর এমেরিটাস'। দেশ-বিদেশের নামজাদা বহু পত্র-পত্রিকায় তাঁর অসংখ্য লেখা ছাপা হয়েছে। ‘মুঘল ভারতের কৃষিব্যবস্থা, ১৫৫৬-১৭০৭’, ‘মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র’, ‘মধ্যযুগের ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস' ইত্যাকার বেশ কয়েকটি গ্রন্থের তিনি রচয়িতা। তাছাড়া, ভারতের ইতিহাস প্রসঙ্গে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত একটি প্রবন্ধ সংকলনের লেখকও তিনি। ‘কেমব্রিজ ইকোনমিক হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া' গ্রন্থের প্রথম খণ্ড, ইউনেস্কোর ‘হিস্টরি অফ হিউম্যানিটি' গ্রন্থের চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ড এবং ইউনেস্কোর-ই ‘হিস্টরি অফ সেন্ট্রাল এশিয়া' গ্রন্থের পঞ্চম খণ্ড তিনি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন। তাঁর সার্বিক সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘পিপলস্ হিস্টরি অফ ইন্ডিয়া' গ্রন্থাবলীর বেশ কয়েকটি খণ্ড এককভাবে ও কিছু খণ্ড যৌথভাবে তিনি লিখেছেন।




মুখবন্ধ

প্রথম অধ্যায়

কার্ল মার্কস ও ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস

পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ এবং তার পরবর্তী সমাজব্যবস্থার চরিত্র

১৯ 

দ্বিতীয় অধ্যায় 

কার্ল মার্কস

একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলির বাহ্যিক গঠনের কাজ

৩৯ 

তৃতীয় অধ্যায়

ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস

সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও অর্থনীতি

৫২

চতুর্থ অধ্যায়

ভি আই লেনিন

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ : দু'টি ধারাবাহিক স্তরে রাষ্ট্র

৭০

পঞ্চম অধ্যায় জে ভি স্তালিন

সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্র

১৩৩

ষষ্ঠ অধ্যায়

মাও জেদং (মাও সে-তুং)

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দ্বন্দ্বসমূহের সমাধান প্রক্রিয়া

১৭৯ 

পরিশিষ্ট

সম্পাদকের কথা

সমাজতন্ত্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্ব এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজগুলির অভিজ্ঞতা

মুখবন্ধ

কার্ল মার্কস (১৮১৮-১৮৮৩) পুঁজিবাদের গভীর সমালোচনা করেছিলেন। বিপ্লব প্রসঙ্গে এবং সমাজতন্ত্রের হাত ধরে পুঁজিবাদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল ছবি তিনি তুলে ধরেছিলেন। তবে তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস (১৮২০- ১৮৯৫) সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সাজসজ্জাবিহীন বাহ্যিক নকশা ছাড়া আর কোনো ছবি তুলে ধরেননি। এমনকি, রাশিয়ার ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবের কারিগর ভি আই লেনিন (১৮৭০-১৯২৪) সমাজতান্ত্রিক ভবিষ্যতের আংশিক কাজ করতে পেরেছিলেন মাত্র। বলা যেতে পারে, একটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও কৃষকসমাজের অবস্থান সম্পর্কে তিনি কাজ করেছিলেন। গত শতাব্দীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাজতন্ত্রের পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছিল (‘সমাজতান্ত্রিক' ভারত গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা আমাদের নিজস্ব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে)। বহু দেশে পরিপূর্ণভাবে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; যার মধ্যে ছিল ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দেশ (সোভিয়েত ইউনিয়ন) এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ (চিন)। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চিনে সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার কাজ তত্ত্বাবধান করেছিলেন যথাক্রমে জে ভি স্তালিন (১৮৭৯-১৯৫৩) এবং মাও জে দং (১৮৯৩-১৯৭৬)। বাস্তব জীবনে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরা অনেকটাই অবদান রেখেছিলেন। বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলিতে শ্রমিকদের কাছে, কৃষকদের কাছে, মহিলাদের কাছে ক্ষমতার আস্বাদ, জমি, জীবিকা, শিক্ষা পৌঁছে দিয়েছিল সমাজতন্ত্র। এই অঞ্চলগুলিতেই ছিল বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বাস। অতএব, একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তরূপে ও ভবিষ্যতের একটি ব্যবস্থাপত্র হিসাবে সমাজতন্ত্রের তাত্ত্বিক ও হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে আন্তরিক মনোযোগ দাবি করে। মার্কসবাদী ঐতিহ্যের মহতী চরিত্র রূপে যাঁরা পরিচিত, সেই সমস্ত মানুষের রচনাসমূহ থেকে এই গ্রন্থে নির্বাচিত লেখাগুলি সম্পর্কে আশা করা যেতে পারে, এগুলি হয়ে উঠবে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে একটি প্রাথমিক আলোচনা, শৃঙ্খল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার তারবার্তা। একই সাথে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যে যে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে সেইগুলি সম্পর্কে আলোচনা।

মূল লেখাগুলি জার্মান, রাশিয়ান ও চিনা ভাষায় লেখা হয়েছিল। আমরা চেষ্টা করেছি সেই রচনাগুলির সবচেয়ে উৎকর্ষ (ইংরাজি) অনুবাদ ব্যবহার করার। এই অনুবাদগুলিতে উদ্ধৃতি হিসাবে ব্যবহৃত অনুচ্ছেদগুলির ক্ষেত্রে পুনরায় ইংরাজিতে অনূদিত রচনাগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে; তার পরিবর্তে বসানো হয়েছে যে যে মূল লেখা থেকে ওই অনুচ্ছেদগুলি সংগৃহীত তার সরাসরি অনুবাদ। এ কাজ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলিকে সম্পূর্ণত নিখুঁতভাবে তুলে ধরার নিশ্চয়তার স্বার্থে। এইটুকু বাদ দিয়ে এবং আর দু-একটি বিষয় ছাড়া অনুবাদগুলির ক্ষেত্রে আর কোনো স্বাধীন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওই দু-একটি বিষয় হলো, কিছু ছাপার ভুল সংশোধন করা এবং ভাব প্রকাশের প্রশ্নে যেখানে যেখানে আড়ষ্টতা ছিল তা কাটিয়ে তোলার জন্য অনূদিত লেখাগুলিতে মাঝে মধ্যে হস্তক্ষেপ ঘটানো – আর কিছু নয়।

এই লেখাগুলিতে যেখানে যেখানে কোনো ব্যাখ্যামূলক নোট বা বক্তব্য সম্পাদকের দিক থেকে রাখা হয়েছে, সেগুলিকে সর্বদা তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে লেখা হয়েছে।

সম্পাদককৃত টীকাগুলি বিশ্লেষণাত্মক নয়; আর লেখক স্বয়ং যখন টীকা লিখেছেন, সেইগুলিকে ভালোভাবেই চিহ্নিত করা যায়।

একটি পরিশিষ্ট যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে একটি ব্যাখ্যামূলক রচনা হিসাবে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে মার্কসবাদী তত্ত্ব এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজগুলির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে একটি প্রবন্ধের (লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে নয়া দিল্লির সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট পত্রিকায়) সংশোধিত লেখা তুলে ধরার ঝুঁকি আমি নিয়েছি। এই গ্রন্থের একদম শেষে এই লেখাটি রাখা হয়েছে যাতে কোনো পাঠকের এই ধরনের সহায়তার প্রয়োজন না থাকলে তিনি স্বচ্ছন্দে তার সবটুকু অগ্রাহ্য করতে পারেন।

আলিগড় হিস্টারিয়ান সোসাইটি আশা করে যে, ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মার্কসীয় রচনাগুলি প্রকাশের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। ইকবাল হুসেইন সম্পাদিত একটি উচ্চাভিলাষী গ্রন্থ, 'ভারত প্রসঙ্গে কার্ল মার্কস' প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৬ সালে; তার তিনটি পরবর্তী সংস্করণও প্রকাশ পেয়েছে। ওই গ্রন্থটির সাফল্য আমাদের উৎসাহিত করে তুলেছে অন্য বিষয়ের উপর একই ধরনের গ্রন্থ প্রকাশে; যে কারণে সমাজতন্ত্র বিষয়ের এই গ্রন্থটির প্রকাশ। বিশ্বজুড়ে চলা বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টিকে একটি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করেছে।

গত পঞ্চাশ বছর বা তার বেশি সময় যাবৎ মার্কসবাদী রচনাসমূহ ও অন্যান্য লেখার যে সম্ভার আমার স্ত্রী সায়েরা ও আমি মিলে গড়ে তুলেছি তার অনেক সুযোগ আমি গ্রহণ করেছি এই গ্রন্থটিতে রচনাগুলি সাজানোর ক্ষেত্রে, তাদের সাথে টীকা যুক্ত করার ক্ষেত্রে। এই বইগুলির কয়েকটি সম্ভবত এখন আর সহজে পাওয়া যায় না। এটা না বললেও চলে যে, আমি সেই সমস্ত অনুবাদকদের (যাঁদের বেশিরভাগই অপরিচিত) প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ, যাঁদের কাজগুলি আমি ব্যবহার করেছি।

ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, অধ্যাপক শিরিন মুসবি এবং (তুলিকা বুকসের) শ্রীমতী ইন্দিরা চন্দ্রশেখরের কাছে বহুলাংশে ঋণী তাঁদের কার্পণ্যহীন সহায়তা ও উৎসাহদানের জন্য। জনাব মুনিরুদ্দিন খান আলিগড় হিস্টরিয়ান সোসাইটির পক্ষে সমস্ত রচনাগুলির অক্ষর বিন্যাস করেছেন।

নভেম্বর ২০০৯

ইরফান হাবিব



বই নিয়ে শুধুমাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, বই নিয়ে শুধু মাত্র বই নিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। ধ্বংস ও ধসের সামনে বই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। বই আমাদের মৌলিক চিন্তাভাবনার শাণিত অস্ত্র। বইয়ের অস্তিত্ব নিয়ে চারিদিকে আশঙ্কা, নতুন প্রজন্ম চকঝমকের আকর্ষণে বইয়ের দিক থেকে ঘুরিয়ে নিচ্ছে মুখ। আমাদের এ আয়োজন বইয়ের সাথে মানুষের সম্পর্ককে অনিঃশেষ ও অবিচ্ছিন্ন করে রাখা। আশাকরি আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের এই ইচ্ছা আরোও দৃঢ় হবে। দুনিয়ার পাঠক এক হও! বাংলা বই বিশ্বের বিবিধ স্থানে, সকল বাংলাভাষীর কাছে সহজলভ্য হোক! সাধ্যের মধ্যে থাকলে বইটি কিনবেন এই প্রত্যাশা রইলো।

Post a Comment

0 Comments