Ticker

6/recent/ticker-posts

খোয়াবনামা - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

amarboi.comখোয়াবনামা - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস




আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শুধু বাংলাদেশের কথাসাহিত্যেই নয়, সমগ্র বাংলাসাহিত্যেরই একজন অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক৷ তিনি কখনোই লেখার সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী ছিলেন না৷ ভিন্ন আঙ্গিক ও প্রকরণে মনোযোগী এ লেখক তাই খুব বেশি লেখেননি জীবনে৷ কিন্তু যা লিখেছেন শিল্প-বিচারে তা এখনও বিশ্বমানের, এমনটিই মনে করেন সাহিত্যের বিদগ্ধ সমালোচকেরা৷ জীবনের গভীরতম শাঁস পর্যনত্ম অশেষ কৌতূহল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে শিল্পকর্মে তা দ্বিধাহীন প্রকাশ করার বিরল ক্ষমতা যাঁর লেখায় পাওয়া যায় তিনিই কথাসাহিত্যিকআখতারুজ্জামান ইলিয়াস৷ যদিও প্রকৃতি তাঁকে এই বিশ্ব পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির জন্য বেশি সময় দেয়নি৷ হয়ত সেজন্যই এই নাজুক ও স্বল্পায়ু সময়ে তিনি মর্মভেদী দৃষ্টিকে শাণিত করে দেখেছেন তাঁর চেনা বিশ্বকে৷ যাপিতজীবনের বাহিরেও যে আরো কিছু দেখবার ও বুঝবার দিক আছে তা আমরা ইলিয়াসের গল্প ও উপন্যাস পড়ে আবিষ্কার করতে পারি৷ তাঁর লেখায় আমরা পাই গভীর জীবনবোধ ও তীক্ষ্ণ হাস্যকৌতুকের সাক্ষাত্‍৷ সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষের মুখের ভাষাও তাঁর রচনায় মর্যাদা পায়৷ লেখায় তিনি শুধু গল্প বলেন না, পাঠককে ভেতর থেকে নাড়া দেন, ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়েও রাখেন৷
১৯৯৪ সালে দৈনিক জনকন্ঠ-এর সাহিত্যপাতায় ইলিয়াসের উপন্যাসখোয়াবনামা ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতে শুরু হয়৷ যদিও পুরো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগেজনকন্ঠ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে খোয়াবনামা ছাপা বন্ধ করে দেয়৷
১৯৯৫ সালের ফেবু্রয়ারি মাসে স্ত্রীর চিকিত্‍সার উদ্দেশ্যে তিনি সস্ত্রীক কলকাতায় যান এবং শান্তিনিকেতন ভ্রমণ করেন৷ অক্টোবরে মাকে হারান ইলিয়াস৷ মায়ের মৃত্যুর পর পরই ইলিয়াস অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পায়ের তীব্র ব্যথা উপেক্ষা করে তখন দিনরাত খোয়াবনামা লিখছিলেন৷ ক্যান্সারকে বাত ভেবে ডাক্তাররা তখন ভুল চিকিত্‍সা দিচ্ছিলেন ইলিয়াসকে৷ প্রচন্ড পায়ের ব্যথা নিয়েই তিনি খোয়াবনামা উপন্যাসটি লেখা শেষ করেন ৩১ ডিসেম্বর৷ ১৯৯৬ সালে ১৩ জানুয়ারি তাঁর পায়ের হাড়ে ধরা পড়ে ক্যান্সার৷ ক্যান্সারের কারণে ২০ মার্চ তাঁর ডান পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়৷ এবছর বই আকারে প্রকাশিত হয় তাঁর কালজয়ী উপন্যাস খোয়াবনামা৷
১৯৭৭ সাল ছিল ইলিয়াসের জন্য স্মরণীয়৷ কারণ জীবনের প্রথম পুরস্কার হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি এই সালে৷ বাংলাদেশ লেখক শিবির সংঘ তাঁকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেন ৷ এরপর ১৯৮৩ সালেইলিয়াস বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন৷ ১৯৮৭ সালে তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন৷ ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে খোয়াবনামার জন্য পান প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার৷ এবছর কাজী মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক নামে আরেকটি পুরষ্কার পান তিনি ৷
১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি৷ পাখিডাকা সিগ্ধ ভোর৷ ঢাকার মালিবাগ কমিউনিটি হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে কালজয়ী এ লেখক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান৷ তাঁর মৃত্যুর পর তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজিমপুরে তাঁর বাসভবনে গিয়ে শোক প্রকাশ করেন৷ ওই দিন বিকালেই ইলিয়াসের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়ার জ্বলেশ্বরীতলার বাসায়৷ তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যুর পরের দিন বগুড়া শহরের দক্ষিণ বগুড়া গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়৷ সেদিন থেকে বাংলা সাহিত্যের মনোযোগী পাঠকরা হারান একজন জীবনঘনিষ্ঠ কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে৷ নিজের সম্পর্কে যিনি বলতেন,' আমি চব্বিশ ঘন্টার লেখক...'৷
আমার বই ডট কম ধারাবাহিক ভাবে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সব রচনাই প্রকাশ করবে। আজ প্রকাশিত হল “খোয়াবনামা”।