Ticker

6/recent/ticker-posts

হুমায়ূন আহমেদের গান

Humayun Ahmed er gaan
হুমায়ূন আহমেদের গান

কথা সাহিত্যের মতোই চলচ্চিত্রেও হুমায়ূন আহমেদের অবদান অবিস্মরণীয়। তার নিজের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্রে তিনি নিজেই লিখেছেন বেশ কিছু গান। অবিস্মরণীয় সেই সব গানের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা বলেছেন এই সব গানের সৃষ্টিকালীন অজানা নানা কথা। 
গ্রন্থনা করেছেন শিমুল আহমেদ

'একটা ছিল সোনার কন্যা'

চলচ্চিত্রের জন্য হুমায়ূন আহমেদ আমাকে একটি গান করতে বলেছিলেন। আর এটি ছিল সেই গান। গানটি রেকর্ডিং করার জন্য তিনি আমাকে সাসটেইন স্টুডিওতে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে দেখি গানের গীতিকার ও সুরকার সবাই উপস্থিত। গানের কয়েক লাইন শুনে আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। এর পর মকসুদ ভাই গানটির সুর করে গেয়ে শোনান। গানটিতে যখন কণ্ঠ দেওয়া শেষ হয়, তখন হুমায়ূন আহমেদ আমার কাছে জানতে চান_ গানটি কেমন লেগেছে। আমি সেদিন তাকে বলেছিলাম, ভালোই হয়েছে। উত্তর মনে হয় হুমায়ূন আহমেদের খুব বেশি পছন্দ হয়নি। তাই তিনি বলেছিলেন, অপেক্ষা কর, দেখ গানটি কেমনভাবে জনপ্রিয়তা পায়। হুমায়ূন আহমেদের লেখা গানগুলোর কথায় বিভিন্নতার আমেজ পায় শ্রোতারা। ঠিক তেমনি এই গানটি। যখন গানের অ্যালবামটি প্রকাশ হলো, দেখি মানুষের মুখে মুখে গানটি ছড়িয়ে গেল। গানের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ভাবনার থেকেও বেশি ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা কনসার্টে শ্রোতাদের চাওয়ার তালিকার সর্বপ্রথম ছিল এই গানটি। 

গান : একটা ছিল সোনার কন্যা
শিল্পী : সুবীর নন্দী
গীতিকার :হুমায়ূন আহমেদ
সুরকার : মকসুদ জামিল মিন্টু
ছবি : শ্রাবণ মেঘের দিন

একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহারে কী মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া

তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে 
নাও দৌড়াইয়া চলি

কন্যার ছিল দীঘল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল, 
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে 
কথা বলব না। 

হাত খালি গলা খালি
কন্যার নাকে নাকফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল

এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে
নাও দৌড়াইয়া চলি
সবুজ বরণ লাউ ডগায়
দুধসাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি
মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে।

গান :বরষার প্রথম দিনে
শিল্পী : সাবিনা ইয়াসমিন
সুরকার :মকসুদ জামিল মিন্টু
ছবি : দুই দুয়ারী 

'বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে,
আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়, 
সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়।
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়
বরষার প্রথম দিনে
জীবনের সব ভুল যদি ফুল হয়ে যায়,
যদি কোনোদিন আসে জ্যোৎস্নার আঁচলে ঢাকা মধুর সময়,
তখন কাছে এসো, তাহাকে ভালোবেসো,
সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়।
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়
বরষার প্রথম দিনে।
জীবনের সব কালো যদি আলো হয়ে যায়,
দূর হয়ে যায় যদি ছায়াদের আঁধার সময়।
তখন কাছে এসো, তাহাকে ভালোবেসো
ছায়াময়ী কারো সাথে করো পরিচয়।
কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয়
বরষার প্রথম দিনে।'

'মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ'
এই অসাধারণ গানটির জন্য কোনো দিনক্ষণ কিংবা সময় ঠিক করা ছিল না। ২০০০ সালের দিকের কথা হবে এটি। শ্রুতি স্টডিওতে গিয়ে দেখি হুমায়ূন চাচা [হুমায়ূন আহমেদ] বসে আছেন। তার সঙ্গে আমার সেদিনই প্রথম দেখা। তিনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, 'আগুন, তুমি আমার চলচ্চিত্রের জন্য একটা গান করবে। আমি জানি, তোমার কণ্ঠেই গানটি বেশ ভালো মানাবে। কারণ তোমার বাবাকে দেখেই আমরা শিখেছি।' শুধু এইটুকু বলার পরেই উপস্থিত থাকা এই গানের সুরকার মকসুদ চাচা [মকসুদ জামিল মিন্টু] আমাকে গানটি দেখার জন্য বলেন। আমি সেদিন বলেছিলাম, 'চাচা, আমি পারব তো?' তিনি আমাকে বলেছিলেন, 'তোমার যেমন করে গাইতে ইচ্ছে করে, তেমন করেই গাও।' আমি কোনো কিছু না ভেবেই গানটি নিজের কণ্ঠে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলে ফেলি। এর পর যখন গানটির রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়, তখন হুমায়ূন চাচা আমাকে বলেছিলেন, 'আমি বলেছিলাম না, তোমার থেকে ভালো এই গানটি আর কারও কণ্ঠে মানাবে না। এবার তুমি গানটি একটু সময় নিয়ে শুনে দেখ।' এই গানটির রেকর্ডিং করার ঘটনাটি আজও আমার মনে পড়ে। হঠাৎ করেই এমন একটি গানে আমি কণ্ঠ দিতে পারব_ ভাবিনি। রেকর্ডিং শেষে গানটি অনেকবার নিজেই গুনগুনিয়ে গেয়েছিলাম। 


গান : মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ
শিল্পী : আগুন
গীতিকার : হুমায়ূন আহমেদ
সুরকার : মকসুদ জামিল মিন্টু
ছবি : দুই দুয়ারী 

মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ
হাতে আছে অচেনা এক শহরের ম্যাপ। 
ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে 
নামবো রাজপথে, 
চারিদিকে ঝলমলে রোদ
কেটে যাবে আঁধারের ছায়া-অবরোধ। 
চারিদিকে কী আনন্দ,
ওই তুচ্ছ পতঙ্গেরও অপূর্ব জীবন। 
হয়তো শিশিরকণারও আছে
শুধু তার একান্ত-একা আনন্দেরই ক্ষণ!
মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ...

আমি বলি, এই যে ব্রাদার হ্যালো 
আমি কে? এইটুকু আমাকে শুধু বলো। 
কোত্থেকে এসেছি আমি, ঠিকানাটা কী
এই জীবনে কী দেখেছি, কী দেখিনি।
দেখেছি মায়াময় দুই দুয়ারী ঘর
সেইখানে বাস করে অশ্রু কারিগর।
তাকে ঘিরে টলমল করে নীলমণি দুঃখ সাগর। 

দুই দুয়ার, খুলে দাও ভাই
অশ্রুর অবসান চাই। 
নিয়ে এসে, চারদিকে ঝলমলে রোদ
কেটে যাক আঁধারের ছায়া-অবরোধ। 


'যদি মন কাঁদে' 
শিল্পী :মেহের আফরোজ শাওন
সুরকার : এসআই টুটুল

'যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়
ঝরঝর বৃষ্টি দ্বতে জলভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়ায়
চলে এসো তুমি চলে এসো এক বরষায়
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী
কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী
কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজুলি আলো
তুমি চলে এসো এক বরষায়
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘ মল্লার বৃষ্টিরও মনে মনে
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘ মল্লার বৃষ্টিরও মনে মনে
কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে
জলভরা মাঠে নাচিব তোমারে নিয়ে
চলে এসো চলে এসো এক বরষায়
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়।'

'যদি মন কাঁদে'
গত বছর অসুস্থ হয়ে পড়ার কিছুদিন আগে স্যার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে নিয়ে দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেটি ছিল শাওনের নতুন মৌলিক একক অ্যালবামের জন্য স্যার নিজে এবং কবি নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও গান লিখবেন ওপার বাংলার শীর্ষ দুই সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সব গানের সুর করার কথা ছিল আমার। এটি আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। আমার সঙ্গীত জীবনের সেরা গানের একটি হলো 'যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়।' হুমায়ূন স্যার বৃষ্টি প্রচণ্ড উপভোগ করতেন। এ গানটি বর্ষার প্রতি ভালোবাসার সুর। পুরো গানেই বৃষ্টিকে ধরার চেষ্টা করেছি।

'বরষার প্রথম দিনে'

হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় নাট্যকার। তবে তার গানের গভীরতা শিল্পী হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করত। 'বর্ষার প্রথম দিনে' গানটির জন্য ২০০০ সালে আমি সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। আমি মোট ১২ বার এ সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছি। তবে এই পুরস্কারের পেছনের কারিগরের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দুঃখবোধ আমাকে তাড়া করে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। 
হুমায়ূন আহমেদ খুব আমুদে প্রকৃতির মানুষ_ এটি আমি অনেকের কাছ থেকে শুনতাম। তবে যখন গান রেকর্ডিংয়ের জন্য স্টুডিওতে যেতাম তখন ব্যাপারটি খেয়াল করতাম। তার আশপাশের মানুষের সঙ্গে খোশ আমোদে মেতে থাকতেন। আমার সঙ্গে কথা কম হতো। তবে তিনি যেন মানুষের মন পড়তে পারতেন। কিছু দরকার বা সমস্যা হলে তিনি খুব দ্রুত সমাধান দিতেন। তিনি এসে 'বরষার প্রথম দিনে' গানটির বিষয়বস্তু বলে দেন এবং খুব অল্প সময়ে ধারণ হয়ে যায়। সেদিন খুব একটা কথা হয়নি। ক্যান্সার চিকিৎসার মাঝপথে হুমায়ূন আহমেদ যখন দেশে আসেন তখন তাকে ফোন দিই দেখা করার জন্য। তিনি বললেন, 'এখন আর আসার দরকার নেই। সুস্থ হয়ে একেবারে দেশে ফিরে দেখা করব।' আমি নিজে ক্যান্সারের রোগী ছিলাম। তাই খুব আশাবাদী ছিলাম_ তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি জীবিত অবস্থায় আর ফিরে এলেন না।
Chrome Extension for Amarboi, Add it Now You can follow us on Twitter or join our Facebook fanpage or even follow our Google+ Page to keep yourself updated on all the latest from Bangla Literature.
Download Bangla books in pdf form amarboi.com and also read it online. 'bangla-boi, boimela, humayun ahmed, bangla boi, ebook, bangla-ebook, bangla-pdf, bangla book, bangla pdf, zafar iqbal, boi, bengali books download, Humayun Ahmed er gaan'

Post a Comment

2 Comments

Emtiaj Hasan said…
এটা কার লেখা?
Amarboi.com said…
এসআই টুটুল

Read more books at: http://www.amarboi.com/2012/08/humayun-ahmed-er-gaan.html#comment-845095944
Copyright; www.amarboi.com