Ticker

6/recent/ticker-posts

তেইশ নম্বর তৈলচিত্র - আলাউদ্দিন আল আজাদ


তেইশ নম্বর তৈলচিত্র - আলাউদ্দিন আল আজাদ তেইশ নম্বর তৈলচিত্র - আলাউদ্দিন আল আজাদ
তেইশ নম্বর তৈলচিত্র বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস। ১৯৬০ সালে পদক্ষেপ নামক এক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় উপন্যাসটি প্রথম ছাপা হয়। পরবর্তীকালে নওরোজ কিতাবিস্তান উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশ করে। এ পর্যন্ত মুক্তধারা সহ অন্যান্য প্রকাশক কর্তৃক বহুবার মূদ্রিত হয়েছে। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
নিচের এই আলোচনাটি লিখেছেন মুহম্মদ মুহসিন।

তেইশ নম্বর তৈলচিত্র অধ্যাপক, কবি ও ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস। প্রথম প্রকাশ ১৯৬১ সালে। প্রকাশক নওরোজ কিতাবিস্তান। নওরোজের পর মুক্তধারা সাতবার ছেপেছে। অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। ১৯৭৭ সালে বুলগেরীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে পোত্রেৎ নমের দুবাতসাৎ ত্রি নামে। সুভাষ দত্তের পরিচালনায় সিনেমা হয়েছে 'বসুন্ধরা' নামে। সিনেমাটি সাতটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে।
ওপরের তথ্যগুলো বলে যে তেইশ নম্বর তৈলচিত্র বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য সার্থক উপন্যাস। উপন্যাসের লেখক আলাউদ্দিন আল আজাদ লেখক হিসেবে যত বড়, সমালোচক হিসেবেও কম নন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে পেশাদারিত্ব এবং বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে তাঁর সৃষ্ট গ্রন্থগুলো যোগ্যতার সঙ্গে এ কথার সত্যতা প্রতিপাদন করে। এ গ্রন্থের সৃজন প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ গঠনে-বুননে-বক্তব্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখকের এ তাত্তি্বক ও সমালোচক সত্তার প্রকাশ রয়েছে। সমালোচক বা তাত্তি্বক হিসেবে তাঁর এ সচেতনতা পুরোটাই এ উপন্যাসের জন্য কল্যাণকর হয়েছে বলে অবশ্য আমার মনে হয় না।
গঠনে উপন্যাসটি শঁহংঃষবৎৎড়সধহ ধারার। জার্মান ভাষায় শঁহংঃষবৎ অর্থ শিল্প এবং ৎড়সধহ অর্থ উপন্যাস। মোট কথায় একজন শিল্পীকে কেন্দ্রে রেখে যে উপন্যাস গড়ে ওঠে তাঁকে শঁহংঃষবৎৎড়সধহ বলা যায়। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র উপন্যাসে জাহেদ সেই শিল্পী আর তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠার গল্পই তেইশ নম্বর তৈলচিত্র। গল্পের কথন ধারায় ভষধংয নধপশ ও ভষধংয ভড়ৎধিৎফ কারিগরির ব্যবহার আছে। মূলত কাহিনীর উন্মোচন কিছুটা সড়হঃধমব ধরনের। জাহেদের চিত্র 'মাদার আর্থ' করাচিতে এক আন্তর্জাতিক একজিবিশনে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। এ খবর দিয়ে উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদের যাত্রা। আর সাত দিনের সেই একজিবিশনের চার দিনের মাথায়ই জাহেদ স্ত্রী বিরহে ব্যাকুল হয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে এবং দরজার কড়া নাড়ার আগেই দরজা খুলে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে 'সরুপাড় সালোয়ার-কামিজ পরা' তার স্ত্রী ছবি_এ বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছেদের ইতি। চার দিনের এ-মাথায় ও-মাথায় এভাবে উপন্যাসের শুরু ও শেষ দেখানো হলেও এরই মধ্যে আটকানো হয়েছে জাহেদের শিল্পী জীবনের প্রায় পুরোটা। ফলে বর্ণনায় মন্তাজ ধারাটি সফল হোক আর না হোক, উপন্যাসের প্রয়োজন মিটিয়েছে নিঃসন্দেহে।
মন্তাজ ধারার স্বাভাবিকতাকে গৌণ করে বর্ণনায় চেতনার চেয়ে ঘটনার প্রবাহ বেশি। ফলে শিল্পের পরিবর্তে শিল্পীই প্রক্ষেপিত আলোর কেন্দ্রবিন্দু। সে শিল্পী জাহেদ। তার সঙ্গে একজিবিশনে অংশগ্রহণকারী আরো শিল্পী আছে। রায়হান, মুজিব ও আমেদ। আরো এক শিল্পীকে আমরা পাই। একজিজিবিশনে নয়, কাহিনীর ভেতরে। সে শিল্পী মুজতবা। এভাবে উপন্যাসের ঘটনাবলির সংগঠকদের কেন্দ্রে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে শিল্পী এবং শিল্পীরা। কিন্তু নাটকীয় ও রহস্যজনকভাবে এবং এমনকি হতে পারে লেখকের নিয়ন্ত্রণ-অভাবে সেই শিল্পীদের, শিল্পকে এবং তাদের শিল্পভাবনাকে নগণ্য করে দিয়ে উপন্যাসের বিষয়বস্তুর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা উপন্যাসের গতানুগতিক বস্তুপ্রেম। এক জোড়া যুবক-যুবতীর প্রেম। শঁহংঃষবৎৎড়সধহ ধারায় শিল্পবোধ ও শিল্পতাত্তি্বকতার যেসব প্রশ্ন উপন্যাসটির ধারণ করার কথা জাহেদের প্রেম দিয়ে গড়া উপন্যাস তার তেমন কিছুই ধারণ করে না। শিল্পতত্ত্ব বা শিল্পবোধ বিষয়ে যা কিছু বক্তব্য আছে তা সরাসরি বাক্যে বিবৃত বাণী_কখনো জাহেদের মুখ নিঃসৃত, কখনো জামিলের, কখনো-বা অন্য কারোর। অথচ শঁহংঃষবৎৎড়সধহ ধারায় কথা ছিল এগুলো বাণী না হয়ে সংকট বা প্রতীতি আকারে প্রতিভাত হবে শিল্পীর জীবনচিত্র দিয়ে।
তবে উপন্যাসটিকে জাহেদের শিল্পী হয়ে ওঠার দার্শনিক বোধ-ভাবনা ও যন্ত্রণার পুঁজিতে গড়ে ওঠা শঁহংঃষবৎৎড়সধহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে না গিয়ে, জাহেদকে উপন্যাসের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিয়ে বাঙালি সমাজের যুগল প্রেমের সামাজিক মূল্যবোধের বুনিয়াদটিকে উপন্যাসের নায়ক হিসেবে কেন্দ্রে দাঁড় করিয়ে দিলে এটিকে একটি ভিন্নতর শঁহংঃষবৎৎড়সধহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে আমার মনে হয়। সে ক্ষেত্রে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় শিল্পী হিসেবে দাঁড়াবে হাজার বছরের বাঙালি মূল্যবোধে গড়ে ওঠা আমাদের সমাজ এবং শিল্প হবে মানব-মানবীর প্রেম। নায়ক বাঙালি সমাজের বীক্ষণে উপস্থাপিত হয়েছে প্রেম নামক শিল্পের বিচ্ছিন্ন বহু চিত্র। এসব চিত্রের যোগফল উপন্যাসের কাহিনী এবং এগুলো সবই প্রেমের কাহিনী। প্রথম কাহিনী জোবেদা খালা ও আহাদ মিয়ার। জৌলুস ও বিলাসের লোভে জোবেদা ছেড়ে যান আহাদ মিয়াকে এবং বিয়ে করেন জনৈক খান সাহেবকে। বড় লোকের বউ হওয়ার শখভিত্তিক এ প্রেমের পরিণতি কী উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদেই তার বর্ণনা রয়েছে। আহাদ সাহেবের নাম শুনে জোবেদা খালা মূর্ছা যান। এটা জোবেদা খালার মূর্ছা নয়, এমন শখের প্রেমের প্রতি আমাদের সমাজের মূর্ছা। শিল্পী জাহেদের বিপরীতে অন্য শিল্পীর প্রেমও এ মূল্যবোধের বাঙালি সমাজের একটি আগ্রহান্বিত পর্যবেক্ষণের জায়গা। শিল্পী মুজিব রোমে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছিল মেয়েটির সবজি-ব্যবসায়ী স্বামীর সঙ্গে খাতির পাতানোর আশায়। শিল্পী আমেদ ব্যর্থ প্রেমের ক্ষতি পোষাতে এক নাবালিকার সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাকে দিয়ে 'গোপনে একটি অস্বাভাবিক কাজের চেষ্টা করেছিল।' আর শিল্পী রায়হান প্রেম করেছিল প্রেমিকাকে ফুসলিয়ে অন্যের সঙ্গে কেলিরত হতে রাজি করিয়ে সেই কেলিরত দৃশ্য দেখে সুখ পাওয়ার আশায়। এ ছাড়া রয়েছে মুজতবা-রাধারানি সম্পর্ক, আকস্মিকভাবে এক দিনের জন্য জাহেদ-রাধারানি কাহিনী, আর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা হিসেবে ছবি ও অজ্ঞাতনামা মার্চেন্টের কাহিনী। এগুলোর সব কাহিনীই মানব-মানবী সম্পর্কের বিকৃতরূপ এবং প্রেমরূপ শিল্পের এক জঘন্য চিত্র হিসেবে উপন্যাসের দ্ব্যর্থহীন উপস্থাপনা। বর্তমান ব্যাখ্যায় দাবি করা উপন্যাসের নায়ক আমাদের সমাজ এবং সমাজের মূল্যবোধ প্রেমের এ চিত্রগুলোকে কতটা জঘন্য ভাবছে সংশ্লিষ্ট বর্ণনা ও ভাষার তীব্রতা তার প্রমাণ।
এবার আসা যাক, জামিল ও মীরার প্রেম প্রশ্নে। সে প্রেমে চড়াই-উতরাই আছে, তবে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় প্রেমকাহিনী জাহেদ-ছবির প্রেমের আদর্শিকতার জোরে এবং দাবিতে জামিল-মীরা প্রেমটি সব খানাখন্দ পেরিয়ে সমতলে পেঁৗছে যায়। এসব চিত্রের যিনি বীক্ষক সেই বাঙালি মূল্যবোধের সমাজ সদর্থক ও আদর্শিক অর্থে আবেগের প্লাবন নিয়ে অনুমোদন করেছে শুধু একটি চিত্র_শুধু একটি প্রেম, একটি কাহিনী। সেটি জাহেদ ও ছবির প্রেম। সে প্রেমের পরিচয়পর্ব, পূর্বরাগপর্ব, অভিমানপর্ব, অনুরাগপর্ব_সব পর্বেই শুধু আবেগ, উচ্ছ্বাস ও আদর্শের জয়জয়কার। সে প্রেমের প্রাণরস নিয়ে রচিত চিত্র 'মাদার আর্থ' করাচির আন্তর্জাতিক একজিবিশনে প্রথম হয়। সে প্রেমের টানে প্রথম হওয়া শিল্পী সাত দিনের একজিবিশন শেষ না করে চার দিনের মাথায়ই ছুটে আসে স্ত্রীর কোলে মুখ গোঁজার আশায়। সে প্রেমে আত্দার সব রিপু ধ্বংস হয়ে যায়_মদ ভালো লাগে না, বেগানা রমণীর দিকে তাকাতে সাধ হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন সাধু-সন্ন্যাসীর প্রেম এবং এমন মহম্মদী প্রেমের জয়গান উপন্যাস তেইশ নম্বর তৈলচিত্র।
আদর্শ ও মূল্যবোধের পরাকাষ্ঠা এ প্রেমচিত্রের শিল্পী খুব স্বাভাবিকভাবেই কাম, ক্রোধ ইত্যাদি রিপুতাড়িত মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয় বলে সমাজবাস্তবতা সাক্ষী দেয়। এ কারণেও বলা যায় যে প্রেমের এরূপ শিল্পকে বক্তব্যরূপে দাঁড় করিয়ে যে উপন্যাস দাঁড়ায় একজন মানুষরূপী শিল্পীর পক্ষে সে উপন্যাসের নায়ক হওয়া খুব বাস্তব নয়। শিল্পী আসমানী শক্তিতে নিয়ন্ত্রিত হয়ে 'আশারায়ে মুবাশ্শারার' মর্যাদা লাভ করে না। তার অনুভূতিতে সদর্থক ও নঞর্থক শক্তির এক প্রচণ্ড আকর্ষণ-বিকর্ষণ থাকে। সেই আকর্ষণ-বিকর্ষণের তীব্রতা যত প্রচণ্ড থাকে তার বোধ ও অনুভূতিও তত বেশি শাণিত হয় এবং তার শিল্পের অভিব্যক্তিও তত বেশি শক্তিমান হয়। সাধুসুলভ একমুখী পুণ্যভাবনায় শিল্পী হওয়া সমাজবাস্তবতা নয়। তাই এ উপন্যাসকে যদি শঁহংঃষবৎৎড়সধহ ভাবতে হয়, তাহলে ব্যক্তি জাহেদের পরিবর্তে সেখানে নায়ক শিল্পী হবে আমাদের হাজার বছরের মূল্যবোধের আদর্শ সমাজ। তখন বলা যাবে, তেইশ নম্বর তৈলচিত্র বাঙালি সমাজের আদর্শ প্রেম শিল্পের এক শঁহংঃষবৎৎড়সধহ.
সে ক্ষেত্রে মুজতবা-তিনা প্রেমকাহিনী যেটি সম্পর্কে উপন্যাসের কথকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো ইঙ্গিতই পাই না, সেটিও আদর্শ বাঙালি সমাজের নায়কসুলভ মনস্তাত্তি্বক দ্বন্দ্ব প্রকাশের একটি ঘটনা হয়ে উঠতে পারে, যে দ্বন্দ্ব শঁহংঃষবৎৎড়সধহ-এর নায়কের জন্য অনেকটা অপরিহার্যরূপে গুরুত্বপূর্ণ। ছাইলাউংফার মেয়ে তিনা মুজতবাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। চুংমুংলের সম্মুখে এক শূকর তিন মুরগি বলি না দিলেও তিনা তাকে স্বামী হিসেবেই বরণ করেছিল। কিন্তু মুজতবার কাছে প্রেম ছিল খেলা। সে খেলায় মুজতবা সফল খেলোয়াড় যখন ম্যাচটি সংঘটিত হয় রাধারানি বা এমন কারোর সঙ্গে। তিনার সঙ্গেও মুজতবা এমন ম্যাচ খেলে চলে যায়। কিন্তু তিনার ছিল এটি প্রেম, খেলা নয়। তাই প্রেমকে আরাধ্য ধরে তিনা খেলতে আগ্রহী জীবন নিয়ে। জীবনকে বাজি রেখে তাই সে শাহাদাতের বাংলোর কাছে এসে ডাক ছাড়ে মুজতবা...। সে ডাকে হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায়। মুজতবার কণ্ঠস্বরে কিছুক্ষণ পূর্বেও ছিল হিংস্র উল্লাসের রেশ_ছিল হুমকি 'বেশি বাড়াবাড়ি করলে জানটা হারাবে'। সেই মুজতবা হঠাৎ তিনার ডাক শুনে রাতের অন্ধকারে জীবনের মায়া ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে ছুটছে তিনার মায়ায়_আর পাহাড়ে পাহাড়ে একটা ডাক ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে যাচ্ছে তি-না...!
প্রেমের এই চিত্রটি শিল্পী জাহেদের শিল্পভাবনায় বড় কোনো দাগ কেটেছে বলে আমরা দেখছি না। কারণ সামাজিক দায়বোধ ও মূল্যবোধ এটিকে প্রত্যাখ্যান করে। তাই জাহেদের মহান শিল্পের প্রাণরস এ প্রেম থেকে উৎসারিত হয় না। শিল্পী জাহেদের জীবন এমন সিদ্ধান্তের প্রমাণ। এমন দ্বন্দ্ববিরহিত প্রেমভাবনা তথা শিল্পভাবনা শঁহংঃষবৎৎড়সধহ-এর নায়ক হিসেবে জাহেদকে মানায় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের বাঙালি সমাজকে যদি এ শঁহংঃষবৎৎড়সধহ-এর নায়ক ধরা যায়, তাহলে বলা যায় আমাদের সমাজ হাজার বছর ধরে জাহেদীয় ঘরবাঁধা প্রেমের জয়গান গাইলেও মুজতবার সর্বনাশা প্রেমের বাস্তবতা ও গুরুত্বকে সে অন্তরালে হলেও এখনো অস্বীকার করতে পারছে না। জাহেদ পারলেও জীবনের প্রেমচিত্রের বীক্ষক ও পরীক্ষক হাজার বছরের মূল্যবোধের বাঙালি সমাজ এখনো পারেনি জাহেদধর্মী ও মুজতবাধর্মী এ দুই ধারার প্রেমের দ্বন্দ্বের মিটমাট করতে। এ দ্বন্দ্ব আছে বলেই নায়ক বাঙালি সমাজের এ গল্পে বিশাল অংশে শিল্পী জাহেদ থাকলেও সেই গল্পেই মুজতবা-তিনাদের গল্প বিষয়বস্তুর পুরো কাঠামোকে বিশাল শক্তিতে কাঁপিয়ে দেয়। পাঠক জাহেদের প্রেম প্রত্যয়ে যতটা পবিত্র বোধ করে, তার চেয়ে মুজতবার সংহারক প্রেমের ভয়াবহ ঘটনায় ট্র্যাজেডিসুলভ বিমোক্ষণ বেশি অনুভব করে বলে আমার বিশ্বাস।
Download and Join our Facebook Group