Ticker

6/recent/ticker-posts

কসবি - হরিশংকর জলদাস

কসবি - হরিশংকর জলদাস
কসবি - হরিশংকর জলদাস

হরিশংকর জলদাস শুধু কাহিনী লেখন না, সমাজকেও লেখেন। এতদিন জেলেদের নিয়ে লিখেছেন এবার লিখলেন বেশ্যাদের নিয়ে। ‘জলপুত্র’, ‘কৈবর্তকথা’, ‘দহনকাল’-এর পর এবার ‘কসবি’।

বৈদিক যুগ পেরিয়ে রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ যুগ অতিক্রম করে বারাঙ্গনাবৃত্তি আজও ভারতবর্ষে অব্যাহত। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের একটি বেশ্যাপল্লী—চট্টগ্রামের সাহেবপাড়া। তিনশ বছরের পুরনো এই সাহেবপাড়াকে পটভূমি করে হরিশংকর ‘কসবি’ উপন্যাসটি লিখেছেন।

বড় নিন্দার্হ অথচ বড় আকর্ষণীয় এই কসবিরা। দিবের আলোয় তাদের নিন্দায় মুখর, রাতের আঁধারে তাদের সান্নিধ্যে থরথর। সমাজমানুষেরা এই বৈপরীত্যময় চারিত্র্যকে লেখক ‘কসবি’-তে উপস্থাপন করেছেন।

গণিকাদের রক্ত-পুঁজময় পাওয়া-না-পাওয়ার জীবন ‘কসবি’-তে রূপায়িত। চম্পা, বনানী, মমতাজ, মার্গারেট, উমা প্রু, সুইটিরা শেষ পর্যন্ত গণিকাজীবন পেরিয়ে অধিকার-সচেতন নারীতে রূপান্তরিত কৈলাস জীবনের বিনিময়ে শ্রেণিসংগ্রামের ব্যাপারটি ওপাড়ার বেশ্যাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। মোহিনীমাসি আর কালু সর্দারের দ্বন্দ্বে জীবন দিতে হয় কৈলাসকে, দেবযানীকে। উপন্যাসের পরিণতিতে বেশ্যাপুত্র কৈলাস আর বেশ্যা দেবযানী সমার্থক হয় ওঠে।

হরিশংকরর জলদাসের ভাষা, ‘কসবি’-র প্রাণ। সংলাপ এখানে তির্যক, তিক্ত, বিষাদময়—আবার মাদকতাপূর্ণও। লেখকের ভাষার গুণে মাসি, দালাল, মান্তান, সর্দার, কাস্টমার আর কসবিরা জীবন্ত এই উপন্যাসে।

কাহিনী এবং সমাজ—দুটোকে একসঙ্গে জানতে চান যাঁরা, তাঁদের জন্যেই ‘কসবি’। ‘কসবি’ বেশ্যাদের জীবনিতিহাস। এই ইতিহাস—বড় ক্লেদাক্ত, বড় রিরংসা জাগানিয়া।