Ticker

6/recent/ticker-posts

আলেখ্যঃ জীবনানন্দ - ভূমেন্দ্র গুহ

আলেখ্যঃ জীবনানন্দ - ভূমেন্দ্র গুহ
আলেখ্যঃ জীবনানন্দ
ভূমেন্দ্র গুহ

বইটির ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে;
জীবদ্দশায় তাঁর প্রতিভার যােগ্য সমাদর পাননি জীবনানন্দ দাশ, সামাজিক পরিচয়েও ছিলেন দূরের মানুষ। সহ্য করেছেন অনেকের উপহাস ও উপেক্ষা। অসুখী ব্যক্তিগত জীবন এবং অর্থাভাব তাঁকে তাড়া করেছিল মৃত্যু পর্যন্ত। এই যাঁর জীবন, ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতররূপে আহত হয়ে হাসপাতালের সাধারণ বিছানায় কীভাবে কেটেছিল তাঁর শেষ দশ দিন, কাদের সান্নিধ্য ও শুশ্রুষায় ? মাত্র পাঁচটি কবিতার বই এবং দেড়শাের কিছু বেশি কবিতাই ছিল যাঁর জীবৎ কালীন অবদান, মৃত্যুর পরে কীভাবে আবিষ্কৃত হল তাঁর অসংখ্য অপ্রকাশিত কবিতা এবং অপ্রত্যাশিত গদ্যসম্ভার—গল্প, উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি? এইসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধান এবং জীবনানন্দের প্রশ্নাকীর্ণ জীবন ও সৃষ্টি বিষয়ে এক অসামান্য গ্রন্থ: ‘আলেখ্য: জীবনানন্দ’। লেখক বিখ্যাত চিকিৎসক ও সম্পন্ন কবি ভূমেন্দ্র গুহ, পঞ্চাশের দশকের কবিতাপত্র ‘ময়ূখ’-এর সূত্রে জীবনানন্দ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যাঁর গড়ে উঠেছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এরই পরিণামে জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে উদ্ধার হয় সেই অতুলনীয় স্রষ্টার জীবনের অনেক অজানা তথ্য এবং তাঁর অপ্রকাশিত রচনার বিপুল সম্ভার। পাঁচটি অত্যন্ত সংবেদনশীল, বিষয়নিষ্ঠ ও প্রামাণ্য রচনায় সমৃদ্ধ এই গ্রন্থ নিঃসন্দেহে জীবনানন্দের জন্মশতবর্ষে সবচেয়ে অভিনব প্রকাশনা।

ভূমিকা
বয়েস যখন অনেক বেড়ে যায়, এবং হাতের কাজও ফুরিয়ে আসে, তখন মানুষকে গল্প বলায় পেয়ে বসে। যার নিজের জীবনে বলবার মতাে গল্প জমে আছে, সে সেই সব গল্প খুব আন্তরিকতার সঙ্গে বলে; যার নেই, সে অন্যের কাছ থেকে ধার করে এনে বলে। সেই ‘অন্য’কে অবশ্যই গল্পের নায়ক হওয়ার মতাে গুণ-নির্গুণ ধারণ করতে হয়।
আমি জীবনানন্দর কাছ থেকে ধার করা গল্পগুলি বলছিলুম। সেই গল্প বলার কথা কী করে যে মুখে-মুখে রটে গেল, যা আমার অভিপ্রেত ছিল না, এবং শেষ পর্যন্ত শ্রী শঙ্খ ঘােষের দরবারে সেই খবর পৌঁছেও গেল। তিনি নিরাসক্ত কণ্ঠে রায় দিলেন যে, গল্পগুলি লিখে ফেলতা হবে, এবং সেই গল্পবিধৃত রচনাটি ‘বিশ্বভারতী’ পত্রিকার ‘আলেখ্য’ বিভাগে গ্রন্থিত হবে।।
আমি যে সাগ্রহে রাজি হয়েছিলুম, বলতে পারি না; পড়াশােনার বছরগুলিতে সাগ্রহে কোনও পড়া করিনি, মাস্টারমশাইরা তাঁদের মহানুভবতা নিবন্ধন করিয়ে নিয়েছেন। ‘বিশ্বভারতী’-পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক শ্রী প্রদ্যুম্ন ভট্টাচার্য মহাশয় আমার সেই গল্পবলা লেখাটা, ‘ওঁরা যখন থাকবেন না, আমিও থাকব না...', নিজগুণে ছেপে দিলেন, এবং আমার বিপদ আরও উসকে দিলেন।
একে-একে ‘প্রতিদিন’-পত্রিকার শ্রী রবিশংকর বল আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিলেন, ‘মুখ নাকি তেমন ফোটোজিনিক ছিল না’; ‘বিভাব’-পত্রিকার সম্পাদক বন্ধুবর শ্রী সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত ‘ত্রস্ত নীলিমার থেকে রূপসী বাংলা’; ‘আজকাল’-পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকদ্বয় শ্রী শৌনক লাহিড়ি এবং শ্রী একরাম আলি তাঁদের অসীম বন্ধুত্বের পীড়নে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি সারা আকাশ জুড়ে’ এবং ‘দেশ’-পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শ্রী অমিতাভ চৌধুরী এবং আমার প্রথম-যৌবনাবধি বন্ধু শ্ৰী দিব্যেন্দু পালিত ‘ধূসরতর সেই খাতাগুলি’। বিপদ, তবু শেষ বিচারে উপভােগ্য তাে; এই উপভােগ্যতাটুকু দান করেছেন বলে এঁদের প্রত্যেকেই আমার অশেষ কৃতজ্ঞতাভাজন।।
কৃতজ্ঞতাভাজন আনন্দ পাবলিশার্স-এর কর্ণধার শ্রী বাদল বসু; তিনি অনুগ্রহ করে স্বপ্রণােদনায় তাঁর বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে বইয়ের আকারে গ্রথিত করে গল্পগুলি প্রকাশ করেছেন।
আর, যে-সব পাঠক-পাঠিকা বই-আকারে বেরােবার আগেই এই লেখাগুলি পড়তে পরিশ্রম ব্যয় করেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ।
ভূমেন্দ্র গুহ