Ticker

6/recent/ticker-posts

রসিকতা

amarboi
বইয়ের হাট ব্লগ
শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি

রসিকতা

চালু হয়েছে বইয়ের হাট ব্লগ। এখন থেকে এখানে প্রকাশিত হবে বাংলা সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গের বাছাইকৃত অংশবিশেষ। দীর্ঘ লেখা নয়, মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে পড়ে ফেলা যায় এমন সব লেখা নিয়ে সাজানো হবে বইয়ের হাটের ব্লগ। লেখাগুলো আশাকরি পাঠকের পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে চলেছি। পাশে থাকুন, আমাদের সমৃদ্ধ করুন, নিজেকে আলোকিত করুন। ধন্যবাদ।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বিদ্যালয়ের এক পণ্ডিত একবার কতগুলি নিম্নমানের নীতিকথা জাতীয় কবিতা রচনা করে বিদ্যাসাগরকে দেখান। কবিতাগুলি পড়ে বিদ্যাসাগর বিরক্ত হন। কেমন লাগল কবিতাগুলি ? সেই পণ্ডিতের প্রশ্ন শুনে কবিতাগুলির শেষে রসিকতা করে বিদ্যাসাগর লিখে দিলেন,
“জেনে রেখে এ জগতে সকলেই গরু
যে যারে ঠেকাতে পারে সেই তার গুরু।”
এই দু লাইন পড়ে সেই পণ্ডিত বুঝে গেলেন কবিতাগুলি সম্পর্কে-বিদ্যাসাগরের মনোভাব।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত ভোজন রসিক। খেতে এবং খাওয়াতে তিনি
সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। সংস্থার সভ্য ছিল তা প্ৰায় জনাদশেক। কী কাজ ছিল এই সংস্থার ? ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে হঠাৎ দল বেঁধে গিয়ে এই সংস্থার সভ্যরা খেতে চাইতেন। এদের এই সংস্থার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ঘনিষ্ঠ মহলে। তাই প্রত্যেকেই সদা প্ৰস্তুত থাকতেন — এই বুঝি এল ভোজনসভার সভ্যরা!
একবার ঘটল এক কান্ড। কী কান্ড ? ভোজনসভার সভ্যরা দল বেঁধে এক বন্ধুর বাড়িতে বেশ ঘটা করে খাওয়া দাওয়া করলেন। খাওয়া-দাওয়ার পরের দিন সংস্থার এক সভ্যোর অসুখ হল। পেটের অসুখ। বেশ কয়েকদিন তার দেখা নেই। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে সভ্যটি এলেন ভোজনসভার বন্ধুদের কাছে। বন্ধুরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাসা করতে লাগলেন। তার উদ্দেশ্যে সবাই বললেন, এ বড়ো পেট-রোগা! ভোজনসভার সভ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়। একে সংস্থা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।
এতক্ষণ চুপ ছিলেন বিদ্যাসাগরমশাই। এবার তিনি মুখ খুললেন। হাসতে হাসতে বললেন, “না হে না, তোমরা ঠিক বলছো না, ওই তো আমাদের মধ্যে একমাত্র সভ্য যে আদর্শের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে উদ্যত । ওকে ভোজনসভা থেকে কোনো মতেই বাদ দেওয়া যায় না।’
বিদ্যাসাগরের রসিকতা শুনে সবাই হাে-হাে করে হেসে উঠলেন।

সে সময় শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগারের দায়িত্বে ছিলেন রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখােপাধ্যায়। তিনি রাতে বাড়িতে গিয়ে পড়ার জন্য প্রতিদিন গ্রন্থাগার থেকে অনেকগুলাে বই বােঝাই করে নিয়ে ফিরতেন।
এমনই এক সন্ধ্যায় তিনি বেশকয়েকটা পছন্দের বই সঙ্গে নিয়ে গ্রন্থাগার থেকে বাড়ি ফিরছেন। এমন সময় রবীন্দ্রনাথ তাকে দেখতে পেয়ে ডাকলেন, 'ওহে বৈবাহিক, শুনে যাও দেখি একবার।
রবীন্দ্রনাথের মুখে এই কথা শুনে অবাক প্রভাতকুমার! কেন গুরুদেব এমন বললেন!-- এ কথা ভাবতে ভাবতে রবীন্দ্রনাথের সামনে এসে তিনি বললেন, ' গুরুদেব, আপনি আমাকে কেন বৈবাহিক বলছেন?’
রসিক রবীন্দ্রনাথ হেসে বললেন, “আরে, তুমি সেই বৈবাহিক নয়, তুমি বই বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে আমি তােমাকে বই-বাহিক বলে ডাকছি। বুঝলে?”
এ কথা শুনে হেসে ফেললেন প্রভাতকুমার।