Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Widget

নরমুণ্ড শিকারের কথা – জয়ন্ত সরকার

নরমুণ্ড শিকারের কথা – জয়ন্ত সরকার
নরমুণ্ড শিকারের কথা – জয়ন্ত সরকার
অরণাচল প্রদেশের তিরাপ জেলার বর্তমান লঙডিঙ সাব-ডিভিশনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মায়নমার ও নাগাল্যান্ডের ‘মন’ জেলার সীমানার সংযোগে দু’মাসের কিছু বেশি সময় অতীতের নরমুণ্ড শিকারী ‘ওয়াংচু’ আদিবাসী গ্রাম পাংচাও –এ নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষার জন্য কাটিয়েছিলেন লেখক জয়ন্ত সরকার। উদ্দেশ্য ছিল এঁদের সমাজ ও সংস্কৃতিতে নরমুণ্ড শিকারের প্রভাব জানার। সেই সময় নরমুণ্ড শিকারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বেশ কিছু ঘটনার কথা এঁদের সংস্কার, এঁদের বিশ্বাস, সমাজের রীতিনীতির মধ্যে অতীতের নরমুণ্ড শিকারের প্রথা কি প্রবলভাবে জড়িয়ে ছিল তা টের পেতে অসুবিধা হয় নি। এমনকি সাধারণ শ্রেণীহীন আদিবাসী সমাজের মতো না হয়ে এঁদের সমাজে ‘অভিজাত’ এবং ‘সাধারণ’ স্তরের বিভাজন থাকার পিছনেও নরমুণ্ড শিকারের প্রথার গভীর ছাপ লক্ষ্য করেছেন। নিজেদের বৈরী গ্রামের মানুষ থেকে সদা সতর্ক থাকা ছাড়াও মাঝে মাঝেই এঁদের সন্মুখীন হ’তে হয়েছে বাইরের জগতের লোকের অনভিপ্রেত কার্যকলাপের। বিশেষত ব্রিটিশ শাসনকালে নানাভাবে প্রশাসনের মানুষের আচার-আচরণে এঁরা বিরক্ত হয়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বৈরীতা। সমাজের রীতি অনুসারে যা এঁদের নরমুণ্ড শিকারে প্ররোচিত করেছে।

নব্বই-এর দশক থেকে এই অঞ্চলে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মের প্রসার হওয়ার ফলে গ্রামের সর্বত্র বদলের ছাপ নজরে পড়ে। নরমুণ্ড শিকারের সংস্কার যা অতীতে ছিল গর্ব আর প্রতিপত্তি অর্জনের অঙ্গ, সেটি এখন গ্রামের নতুন প্রজন্মের মধ্যে গর্বের বদলে অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলেছে। এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই আবার গ্রামের পরম্পরাগত আর্থ-সামাজিক পরিবেশ থেকে প্রায় শিকড়হীন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতিতে বাইরের জগতের সংস্কৃতিতে অন্য অনেকের মধ্যে নিজেদের বেমানান মনে করছেন। যার ফলে বাইরের মানুষের প্রতি জন্ম নিচ্ছে হতাশা আর ক্ষোভ। এই মানসিক টানাপোড়েনের আভাস তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। এই ধরণের সমাজ সম্বন্ধে নৃতত্ত্বের তত্ত্ব ও তথ্যের জটিল বিষয়গুলিকে কাহিনীর মোড়কে যথাসম্ভব সহজ করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া লেখকের অসামান্য লিখন শৈলীরই পরিচায়ক।

বইটিতে কিছু জায়গায় অরুণাচলে প্রচলিত অসমীয়া, হিন্দি, বাংলার বহু শব্দের সংমিশ্রণে যেভাবে কথাবার্তা হয় তা ব্যবহার করা হয়েছে মূলত ঘটনা প্রবাহের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্বন্ধে পাঠককে কিছুটা আঁচ দেওয়ার জন্য। বইটিতে কয়েকটি ছবি সংযোজিত হয়েছে যা ইঙ্গিত করে এঁদের সংস্কৃতির পরম্পরা কিছু ক্ষেত্রে আজও প্রবহমান।