Ticker

6/recent/ticker-posts

'বিষাদ-সিন্ধু'র বিষাদময় তরঙ্গ - আবুল বাশার

'বিষাদ-সিন্ধু'র বিষাদময় তরঙ্গ
আবুল বাশার



'বিষাদ-সিন্ধু' উপাখ্যানটি নানাভাবে পাঠ করা যায়। এতে ইতিহাস আছে মনে করে। বা, এতে ধর্মীয় পুরাণ মিশ্রিত, সেই আগ্রহে। মুসলমানের যৌন-সং সপত্নীবাদের চেহারা প্রত্যক্ষ করতে। কারবালা-র যুদ্ধের ঘটনা কেন ঘটে বুঝে নিতে। কিংবা এটা কি গদ্যে লিখিত এক প্রকারের এপিক'—তারই সাহিত্যিক আগ্রহ তৃপ্ত করতে। বিষাদ-সিন্ধুর বিষাদ কোন ধরনের বিষাদ, তা-ও তো বোঝা চাই। আরও নানা জিজ্ঞাসা আছে আমাদের।

ধাৰ্মিক মুসলমান এই আখ্যানকে কী চোখে দ্যাখেন এই বাংলায় । এ এক মত্ত জিজ্ঞাসা। এই আখ্যানকে ঘিরে শিয়াসুন্নির কি কোনও বিরোধ রয়েছে? থাকলে তাই-ই বা কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি বিপুল জীবনাগ্রহ নিয়ে আমরা বিষাদ-সিন্ধুতে অবগাহন করতে পারি। বিপুল জীবনাগ্ৰহই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালি (হিন্দু-মুসলমান সম্মিলিত)-র কুললক্ষণ।

আমার কথাই ধরুন, আমি কী দেখেছি আমার ছেলেবেলায়? আমরা বিষাদসিন্ধুকে বই বলে সম্বোধন করে কথা বলি আসুন। ছেলেবেলায় ধাৰ্মিক মুসলমানের চাঙ্গারি (এক ধরনের পাটকঞ্চির তৈরি সিক্কা)-তে ধর্মপুস্তকের সঙ্গে বিষাদ-সিন্ধু-কে সাজিয়ে রাখতে দেখেছি। অন্যগুলো ধৰ্মপুস্তক, আর এটি (বিষাদসিন্ধু) বই।

যাদের আমরা সাহিত্যের পাঠক বলি, সেই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ সেদিন আমার চোখের সামনে ছিল না। শতকরা ৯০ ভাগ কি ৯৫ ভাগ মানুষই ছিলেন নিরক্ষর। নিতান্ত স্বল্প লেখাপড়া জানা লোকেরা সুর করে পুথিপাঠ করত—বাংলা পুথি। সবাই করত তা নয়। যাদের গলায় সুর ছিল, তাদের কেউ-কেউ পুথি-পাঠক ছিলেন। বাকিরা শ্রোতা।

সেই পুথিতে বিষাদ-সিন্ধুর পুরো আখ্যান পয়ারে-ত্রিপদীতে ছন্দোবদ্ধ ছিল। কারবালার যুদ্ধের শোকঘন বিবরণ ওই পুথি শুনেই জেনেছি ছেলেবেলায়। পুথিকে বলা হত, কেতাব'।

পাড়ায় এক কেতাব-পাঠক ছিল মুর্শিদাবাদী সেই আমার গ্রামে। নাম ঈশ৷ হক। তাকে ঈশা ভাই বলে ডাকতাম। মানুষটি ঘোর নামাজি। খোদা আর রসুল ছাড়া কিছু বোঝে না। নিতান্ত দরিদ্র, অল্প জমিজিরেত। একটি খারেজি মাদ্রাসার সে ছিল ‘ধর্মীয় তোলা'-র কালেকটর। সেই কালেকশন থেকে একটা কমিশন পেত। জমিতে গতর-খাটাতে তার এক ধরনের আলস্য ছিল। তার চেষ্টা ছিল ধর্মীয় মজলিসের দীপ্যমান মেম্বার এবং বিচারআচ্চার মুরুব্বি হওয়ার।

গলাটা ছিল মিষ্ট এবং কেতাব-পাঠে তার তোড় এবং মধুর হাহাকার গ্রামকে মাঝে-মাঝেই মথিত করে তুলত।

কারও এক বৈঠকখানায় কেতাব-পাঠ করছে ঈশা। আমি বছর চোন্দো কি পনেরো-ষোলোর কিশোর। ওই বয়সেই কবিতা লিখি। এক প্রকারের ভাষাবোধ জন্মেছে। ছন্দ-বোধও এসেছে কিছু। বললাম, আহা, তাই কি হয় নাকি ঈশা ভাই: দাড়াও তো!"

—“তুমি আমার তেলায়ত (সুর করে পড়া) নষ্ট করলে বাশার কী হয় না শুনি!' বলে উঠল ঈশা।

একজন কাসেদ (সংবাদ-বাহক)-এর কথা কেতাবে বর্ণনা করা হচ্ছে। বিষাদ সিন্ধু বইটিতে কাসেদ এর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সারাটা মরুভূমি কাসেদ ছুটে কাসেদ ছুটে বেড়িয়ে কাহিনিকে টেনে নিয়ে চলেছেন। কাসেদ সাধারণ হরকরা নয় বা রানার নয়—তারা প্রায় রাজদূতের কাছাকাছি, রাজদূত না-হলেও, প্রায়-রাজদূত গোত্রের সংবাদ-বাহক—এই কাসেদের কাজই শেষ পর্যন্ত কাহিনির পেচ তৈরি করে বিষাদসিন্ধু আখ্যানে।

বিষ আর মানব-শোণিতে মাখামাখি এক গভীর ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যান হচ্ছে বিষাদসিন্ধু। তা শুধু বাংলা মুসলমানী পুথিতেই গীত হয়নি, কথকের আসরে এবং বাংলার কবিয়ালের গলায় ও জারিগানে জারি হয়েছে, সারিগানেও গীত হয়েছে। আমি বিষাদ-সিন্ধু পড়ার কত আগে থেকেই কারবালার আখ্যান ও অতিকথা শুনে এসেছি। এবং বিশ্বাস করেছি।

গানে-কথকতায়-পুথিতে কারবালার আখ্যানকে দুটি শব্দে বয়ান করতেন আমার ঠাকুমা। বলতেন,ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের মৃত্যু হয় জহরে-কহরে। অর্থাৎ বিষ-প্রয়োগে হত্যা করা হয় হাসানকে। যুদ্ধক্ষেত্রে তৃষ্ণার্ত হোসেনের আশ্চর্য বিপন্নতায় খুনের ঘটনা ঘটে। সেটাই কহরের মৃত্যু।

পুথি বা কেতাবেও সেই বর্ণনা মর্মন্ততদ। সেই কেতাব শুনতে-শুনতেও ছেলেবেলায় চোখে জল এসে যেত।

ঈশা পড়ে গেল সুর করে, কাসেদ কেমন করে ছুটছেন তার বিবরণ, দুটি পঙক্তি সে এভাবে পড়লঃ

‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দো হাঁটিয়া চলিল,

ছয় মাসের রাহা মন্দো ছয় দিনে গেল।”

মর্দ্দো এখানে বীর-কাসেদ। কিন্তু তিনি ছয় মাসের পথ ছয় দিনে অতিক্রয় করছেন কীভাবে? ঘোড়ায় যাচ্ছেন, সে তো বোঝাই যাচ্ছে, কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে কি হাঁটা যায়?

বললাম, ‘ঘোরায় চড়ে কাসেদ হাঁটতে যাবে কেন? তা ছাড়া ঘোরায় চড়ে হাঁটা কি যায়?’

—যায় না তো কেতাবে লিখছে কী করে! যা হোক। হয় শুনো, না-হলে বাড়ি যাও। কেতাবে ভুল থাকে না পাগলা! বলে ওঠে ঈশা। বললাম, থাকে। ওখানে ছাপার ভুল হয়েছে।" –কী ভুল হয়েছে। শোধরাও। কত বড় উস্তাদ দেখি !" বললে ঈশা। আমি বলতে যাব কথাটা ঠিক কী হবে ওখানে, কারণ সেটি আমার মাথায় এসে গিয়েছে। কিন্তু সে-কথা বলে ওঠার আগেই মোতি মাস্টার এসে সাইকেলের প্যাডেল থেকে লম্বা ঠ্যাং মাটিতে নামিয়ে দাড়িয়ে পড়ে বললেন, কী হে ঈশা থামলে কেন?

ঈশা তখন লাইন দু’টো শোনালে বিনা সুরে এবং শুধালে, ইখানে, বাশার বলছে, ছাপার ভুল হয়েছে এবং কী হলে সহি হয় তা-ও নাকি বুঝে গিয়েছে: তাজুব!’

মোতি স্যার মিষ্টি করে হেসে আমাকে শুধালেন, কী হবে ওখানে ? বল দেখি বাপ?

আমি তখন বললাম, ওটা হবে এইরকম :

‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দো হাকিয়া চলিল,

ছয় মাসের রাহা মর্দ্দো ছয়দিনে গেল।’

বলে থামলাম।

তারপর বললাম, ‘রাহা=রাস্তা। তাই না স্যার!' বলে মোতি মাস্টার সাহেবের সমর্থন চাইলাম।

মোতি স্যার বললেন, প্রিন্টিং মিসটেক ঈশা ছাপারই ভুল! ওটা হাটিয়া হবে না। হাকিয়া হবে। ঠিকই। নাও, সুর ধরো। এই যেমন সাইকেলে চড়ে হাটা যায় না। সেইরকম। ঘোড়ায় তো আরওই যায় না ঈশা হক। লাগাও, সুর লাগাও।

অতঃপর কাসেদ ছুটে চললেন মরুপ্রান্তর ভেদ করে। মোতি স্যারও চলে গেলেন সাইকেলে।

—‘একখানি কলম থাকলে দেও তো সফুরা বহিন। হাটিয়াকে হাকিয়া করি। বলে কলম চাইল ঈশা। তারপর কেটে সংশোধন করার সময় থমকে গিয়ে ঈশা শুধালে, ”আচ্ছা, হাকিয়া নেড়া, নাকি চন্দ্রবিন্দু দিতে হবে?

বললাম, ‘ইসলামি চাঁদ তারার মতো করে দিলেই চলবে। দাও।

এই হচ্ছে অর্ধ-নিরক্ষর পৃথিবীর ‘বিষাদ সিন্ধু’।

বা, আশুরা।

"আশুরা" কথার অর্থ "দশম দিবস"। মহরমের দশম দিনকে আশুরা নামে ডাকা হয়।

মহরমের প্রথম দশটি দিনকে অনুতাপের দিন হিসেবে পালনের রেওয়াজ রয়েছে। এই রীতি-রেওয়াজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন শিয়াপন্থী মুসলিমরা। মুর্শিদাবাদে (আমার জেলা) নবাব এবং তাদের বংশধরেরা এই অনুতাপ রেওয়াজ হিসেবেই পালন করেন। নবাবরা শিয়া, কিন্তু বাকিরা সুন্নি, এবং যার ৯৮ শতাংশ হানাফি মুসলমান; ইমাম আবু হানিফার শাস্ত্রাচার পালন করেন।

সকলেই জানেন, তবু লিখছি। শিয়া-রা হচ্ছেন হজরত আলির কট্টর

অনুসরণকারী। হজরত আলি হজরত মুহম্মদের চাচাতো ভাই এবং জামাই। মহানবি হজরত মুহম্মদের কন্যা ফতিমার স্বামী। যাদের নিয়ে বিষাদ-সিন্ধু রচিত এবং কারবালার মহাবিষাদ উৎসারিত। সেই ইমাম হাসান-হোসেনের বাবা-মা হলেন হজরত আলি এবং হজরত ফতিমা। ইমাম হাসান-হোসেন হজরত আলির দুই পুত্র এবং তারা মহানবি হজরত মুহম্মদের নাতি (কন্যার সন্তান)।

অতএব, গল্পটা আত্মার আত্মীয় এবং অতিশয় আপনজনকে ঘিরে চলতে-চলতে কারবালায় পৌছেছে। গল্প দল মেলেছে মহানবির শিষ্য মাবিয়া (মোয়াবিয়া) ও তার পুত্র এজিদ (ইয়াজিদ)-কে বেষ্টন করে।

ইসলাম যদি শুধু একটা ধর্মই হত, তা হলে কারবালার ট্র্যাজেডি ঘটত না। ইসলামের রয়েছে তিনটি সত্তা। একটি তার ধর্মসত্তা। অপর সত্তাটি রাষ্ট্রসত্তা। এবং তৃতীয়টি তার কালচার বা মূল্যবোধ দিয়ে গড়া সংস্কৃতি।

হজরত মুহম্মদ একটি ধর্ম-প্রবর্তিত করেন এবং একটি রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা করেন। একই সঙ্গে তিনি পয়গম্বর’ এবং ‘প্রশাসক"। এই মানুষের উত্তরসূরি কে হবেন তাই নিয়ে এক মারাত্মক জটিল দ্বন্দ্ব বেঁধে ওঠে তার মৃত্যুর পর। তা গড়ায় কারবালা পর্যন্ত। এটি বিষাদ-সিন্ধু"-র একটি তরঙ্গ। কারবালার হোসেনী তরঙ্গ।

মাত্র একটি তরঙ্গে সিন্ধুর সিন্ধুত্ব প্রকাশ পায় না। নানান তরঙ্গে বিক্ষুব্ধ হলে তবেই তা সিন্ধু বিশেষ হয়ে ওঠে। কিন্তু সমুদ্রের সব ঢেউ সমান নয়। হাসান একটি প্রধান তরঙ্গ। হোসেন আর একটি প্রধান তরঙ্গ। তৃতীয় প্রধান তরঙ্গ এজিদ। তরঙ্গ-বিষাদকে তরঙ্গ শব্দেই ব্যক্ত করেছেন মীর।

সে-কথায় আবার আমরা ফিরব। কিন্তু "আশুরা’ শব্দটির দিকে আর-একবার তাকাই। পরিতাপ-বিষাদের ব্যথিত লব্‌জ এই আশুরা’। আমার এক পিসির নাম ছিল আশুরা খাতুন। তিনি একজন সুন্নি হানাফি খাতুন। কোনও নবাব-দুহিতা বা নবাবপত্নী ছিলেন না। কিন্তু বলার কথা এটাই যে, সুন্নি-জীবনে শিয়া-প্রভাব বা মহরমী প্রভাব এমনই বটে, পিসির নাম আশুরা!

বিষাদ-সিন্ধু’ বইটির এমনই প্রভাব ছিল হানাফি জীবনে। মীরের ওই বই কোনও নবাব পড়েছেন বা কোনও ইরানি বা কোনও আর্য-আর্যানী পড়েছেন বলে আমার জানা নেই। ওই বই মীর লিখেওছেন বাংলার হিন্দু-মুসলমান পাঠকের জন্য।

বাংলা মুসলমানি পুথি বা কেতাব' বাংলার হিন্দু-সমাজকে আকৃষ্ট করেনি। আকৃষ্ট করেছে মীর প্রণীত বিষাদ-সিন্ধু। আমি বলব, বিষাদ-সিন্ধুর অধিক ও অনন্য সার্থকতা এখানেই। হিন্দু বাঙালির কাছে ‘বিষাদ সিন্ধু হয়ে উঠেছে বিশিষ্ট এক সাহিত্য।

এই আলোচনায় পাঠকদের কাছে একটি কথা বলে নেওয়া ভাল আর তা হচ্ছে, বাঙালি’ শব্দটি আমাদের কালে দুই সম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমান, তাদের সন্মিলিত নাম ‘বাঙালি', অর্থাৎ হিন্দুও বাঙালি, মুসলমানও বাঙালি। এমনকী খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ-বাঙালিও বাঙালি, জৈন-বাঙালিও বাঙালি, এইভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে প্রধানত হিন্দু-মুসলমান সম্মিলিত বাঙালিই আমাদের বর্তমান আলোচনার লক্ষ্য। কিন্তু বিষাদ-সিন্ধুর আলোচনায় ‘বাঙালি মুসলমান জীবন’ কথাটা আলাদা করে ভাবতে হবে। এই ভাবনাটা একটি সামাজিক ও সাহিত্যিক ভাবনা–এর সঙ্গে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার কোনও সম্পর্ক নেই।

আমরা বিষাদ-সিন্ধুকে বই বলে উল্লেখ করছি, আখ্যান বলছি, কিন্তু এটাকে উপন্যাস বলতেও আপত্তি নেই। অনেকে এটিকে উপন্যাসের প্রবল লক্ষণাক্রান্ত আখ্যান বলেও আখ্যা দেন। কিন্তু এটি ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে কতখানি সার্থক তা নিয়ে বিতর্ক আছে। মীর-সাহিত্য গবেষক রশীদ আল ফারুকী এ উপন্যাসে প্রকৃত ইতিহাসের উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে করেন না। এ উপন্যাস সত্যি বলতে কী, ইতিহাসকে বস্তুনিষ্ঠার সঙ্গে গড়ে-ওঠা অতিকথা বা মিথ কিংবদন্তি ইত্যাদি ব্যবহার করেছে। এ উপন্যাসে অনেক অতিপ্রাকৃত প্রসঙ্গ বা ঘটনা এসেছে, যা ইতিহাস নয়। এর সঙ্গে বরং বাংলা পুঁথির স্বভাবের মিল আছে, ইতিহাসের নয়।

কিন্তু উত্তর-আধুনিক দুনিয়ার উপন্যাসে মিথ-পুরাণ-অতিকথাকে ব্যবহার করার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে।

অতিকথা বা মিথ-কে মিথ্যা মনে করা হয় না। ইতিহাসেরই সমান্তর উপাদান ভাবা হয়। মিথের ভেতর দিয়ে অনেক সময় একটি জাতির সমষ্টি-অবচেতনার চেহারা ফুটে ওঠে, লোকের মনোজগতের আঁক পাওয়া যায়।

শ্ৰীকৃষ্ণ যেমন কুরু-পাণ্ডবের ভবিষ্যৎ জানতেন, মহাভারতের যুদ্ধের পরিণাম জানতেন, সবই তিনি জানতেন—সেইরকম মহানবি হজরত মুহম্মদ সবই জানতেন। কারণ তিনি যিশু বা কৃষ্ণের মতোই প্রভু, তার আগোচর বলে কিছু নেই।

লক্ষ করার ব্যাপার, মীর সাহেব হজরত মুহম্মদকে প্রভু নামে সম্বোধন করছেন; হজরতের শিষ্য সাহাবা পর্যন্থ তাকে প্রভু সম্বোধন করে কথা বলছেন—অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এক খোদা ছাড়া অন্য কেউই মানুষের প্রভু’ হতে পারেন না।

কিন্তু এ-জিনিস বাংলার মুসমলান সমাজ মেনে নিয়েছে। হজরত রসুলের অতিকায় ও অতি-মানবিক শক্তিতে তারা আগাধ বিশ্বাসী।

উপন্যাসটি শুরুই করেছেন লেখক প্রভু বন্দনা করে একটি চমৎকার সেমিকোলন সজ্জিত দীর্ঘ বাক্যে। আসলে বাক্যটি দুই বাক্যের সমাহার এবং তা এইরকম : যখন আরব-গগনে এসলাম-রবি মধ্যাকাশে উদিত, সমস্ত আরব-ভূমি এসলাম-গৌরবে গোরাবান্বিত এবং সকলেই সেই প্ৰভু হজরত মহম্মদের (সাঃ) পদানত হইয়াছে, সেই সময় একদা পবিত্র ঈদোৎসবদিনে প্রধান-প্রধান শিষ্যমণ্ডলীর মধ্যে উপবেশন করিয়া ধর্মোপদেশ প্রদান করিতেছেন।

খেয়াল করতে হবে, সমস্ত আরব-ভূমি এক প্রভু’ (রসুল)-র পদানত। প্রথম বাক্যের গোড়াতেই প্রশাসক হজরত মুহম্মদের স্তুতি করে উপন্যাস শুরু হচ্ছে। নবির চেয়ে প্রশাসক-সত্তাই এক্ষেত্রে প্রভু’ শব্দের ব্যঞ্জনাকে রণিত করছে বেশি। এই প্রভু ভবিষ্যৎ ব্যক্ত করবেন, কারণ তিনি পয়গম্বর।

তারপর একটু এগিয়ে লেখক লিখলেন, ‘তোমাদের মধ্যে (শিষ্য-সাহাবাদের মধ্যে) কাহারও সন্তান আমার প্রাণাধিক প্রিয়তর হাসান-হোসেনের প্রধান শক্র হইবে। হাসানকে বিষপান করাইয়া মারিবে এবং হোসেনকে অস্তাঘাতে নিধন করিবে"।

উপন্যাসের প্রথম পাতার মাঝ-বরাবর রসুলের মুখে এই উক্তি শোনা গেল। জহর কহরের মৃত্যু নিয়ে বিষাদঘন গল্পের আসল সংবাদ আমরা পেয়ে গেলাম।

বেহুলা-লখিন্দরের গল্পের ভবিষ্যৎ এইভাবেই আমরা আগে কতকটা জেনে গিয়েছিলাম। সর্পাঘাতে লখিন্দর মারা যাবেন, এ-কথা কারও অবিদিত ছিল না। লোককথার ধরনই তো এরকম, নিয়তি নিরন্তর খেলা করে।

উপন্যাসের দ্বিতীয় পাতায়, শিষ্য মাবিয়ার পুত্র এজিদ এই কাজ করবেন; হাসান-হোসেনকে জহরে-কহরে মারবেন : এ কথা বলেই দিচ্ছেন প্রভু হজরত মুহম্মদ। তাই শুনে অবিবাহিত মাবিয়া বিয়ে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করলেন।

এই অবস্থায় প্রভু মুহম্মদ বললেন, প্রিয় মবিয়া! ঈশ্বরের কার্য তোমার মতো ঈশ্বরভক্ত লোকের প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হওয়া নিতান্ত অনুচিত। তাহার মহিমার পার নাই, ক্ষমতার সীমা নাই, কৌশকের অন্ত নাই।

তারপর কী হল? ঈশ্বর কী কৌশল করলেন ?

একদিন মূত্ৰত্যাগ করতে গিয়ে ‘কুলুখ’ নিলেন মবিয়া। কুলুখ হচ্ছে যৌনাঙ্গ জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার বদলে (কোথাও জলাভাব হলে) ঢিল দিয়ে মূত্র শোষণ করিয়ে পাক (পবিত্র) হওয়ার শাস্ত্রসন্মত উপায়। ‘কুলুখ’ করার সময় মবিয়ার যৌনাঙ্গে এক মারাত্মক ও বিচিত্র বিষক্রিয়া হল।

তখন রসুল কী করলেন? নানান চিকিৎসা করিয়ে মবিয়া সুস্থ না-হলে, ফু দিয়ে ব্যাধি সারানোর চেষ্টা করতে উদ্যত হলেন রসুল। তখন ঈশ্বরের দূত এসে রসূলকে সাবধান করে দিয়ে বলে গেলেন, “হে মহম্মদ কী করিতেছ? সাবধান। ঈশ্বরের নাম করিয়া মন্ত্রপূত করিও না। এ সকলই ঈশ্বরের লীলা। তোমার মন্ত্রে মাবিয়া কখনওই আরোগ্যলাভ করিরে না। ইহার সমুচিত ঔষধ স্ত্রী-সহবাস। স্ত্রীসহবাস মাত্রই মাবিয়া বিষ-যন্ত্রণা হইতে মুক্তিলাভ করিবে।”

বিচিত্র রোগ আর তার আরোগ্য বিচিত্ৰতর। কিন্তু এ জিনিস অবিশ্বাস করলে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস-এর পুরো ঐন্দ্রজালিকবাস্তব-মার্কা সাহিত্যকেই অবিশ্বাস করতে হয়। অবিশ্বাস করতে হয় রামায়ণ মহাভারতের সুমহান কাহিনির নানান পেঁচ। সুতরাং রসুলের সুপরামর্শে মবিয়ার বিবাহ হল। মাবিয়া এক বৃদ্ধা রমণীকে বিয়ে করলেন এই যুক্তিতে যে, বুদ্ধা সন্তান উৎপাদন করবেন না। কিন্তু বৃদ্ধার গর্ভসঞ্চার হল। এজিদ জন্ম নিলেন।

এই ধরনের অতিপ্রাকৃত কিংবা অলৌকিক ঘটনা সমাবেশে বিষাদ-সিন্ধু জহরকহরের এপিকরচে দিয়েছে।

মাবিয়া ছিলেন হাসান-হোসেনের বাবা এবং মুহম্মদের (হজ্রত রসুল) এর জামাই হজরত আআলির জ্ঞাতিভ্রাতা। সিংহাসন নিয়ে জ্ঞাতি-লড়াই হল বিষাদসিন্ধু'।

হাসানকে যদি প্রথম ও প্রধান একটি তরঙ্গ ধরি, তা হলে প্রশ্ন ওঠে, হাসানের সঙ্গে কারবালার যুদ্ধের সম্পর্ক কী এবং প্রশ্ন জাগবে হাসানকে শহিদ ও ‘মহাপুরুষ'-এর মর্যাদা দেওয়া হয় কেন? তিনি তো আসলে সপত্নীবাদের শিকার।

সপত্নীবাদের শিকার ও উজ্জ্বল কলঙ্ক হচ্ছেন রামচন্দ্রের বাবা রাজা দশরথ, কিন্তু রামের যুগে সপত্নীবাদকে ঘৃণার চোখে দাখা হত না। সপত্নীবাদ ছাড়া কিন্তু রামায়ণ হয় না; রাম-কাহিনিও গতিপ্রাপ্ত হয় না। সম্ভবত রামায়ণের কথা মাথায় রেখেই মীর সাহেব কিছু আশ্বাসে এবং কিছু খেদে লিখেছেন, “সপত্নীবাদ কোথায় না আছে?"

কিন্তু হাসানের সপত্নীবাদ দশরথের সপত্নীবাদের চেয়ে জটিল। কারণ রসুলের এই নাতি সপত্নীবাদের সঙ্গে নারীকে দখলের লড়াইতে নিজেকে যুক্ত করেন। আবদুল জব্বারের স্ত্রী জয়নবকে দখল করার লড়াইয়ে তিনি হয়ে ওঠেন এজিদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। নারী ও অর্থের লোভ দেখিয়ে এজিদ জব্বারকে তার বউ জয়নারের সঙ্গে তালাক করিয়ে নেন, তারপর দখল করবেন বলে মনস্থ করেন। তালাকপ্রাপ্ত জয়নাব হাসানের তৃতীয় পত্নী হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, কারণ হাসান হলেন পয়গম্বর হজরত মুহম্মদের দৌহিত্র। যৌন-লালসা এবং সপত্নী-ঈর্ষা হাসান-তরঙ্গের থিম’ ও চালিকাশক্তি–এই ঈর্ষা দশরথের বেলাতেও দেখি, কিন্তু দশরথ কোনও স্ত্রীর অধিকার পেতে কোনও প্রবল পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।

কিন্তু আরব-দেশ হজরত মুহম্মদের অনেক আগে থেকেই নারী-পুরুষের বহুবিবাহ, তালাক ও পুনর্বিবাহে বিশ্বাসী। এটি ওই দেশের স্বাভাবিক সামাজিকতা। এটা আরবের কালচার এবং ঐতিহ্য। হজরত মুহম্মদ নিজেই বিধবা-বিবাহ করেছিলেন। তার পত্নী খাদিজা রসূলকে বিয়ে করার আগে আরও দুবার বিয়ে করেন। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে মুহম্মদ (রসূল) মহাত্মা খাদিজার তৃতীয় স্বামী এবং খাদিজার চেয়ে মুহম্মদ বয়সে ১৫ বছরের ছোট।

হজরত মুহম্মদের দাম্পত্য জিবনে নারী ও পুরুষের বহুবিবাহের নজির দেখা গেলেও তার পরবর্তীকালে পুরুষই বহুবিবাহের দৃষ্টান্তস্থল হয়ে উঠেছে। মুসলমান-জীবনে দৌপদীর বহুস্বামীত্বের মতো আস্বাদনযুক্ত নারীকে দেখা যায় না। কোনও কাব্যরচনায় অন্তত সেই নারীর ডাক পড়েনি। এমন নারী আরব-ইতিহাসে দুর্লক্ষ্য ছিল না। যা হোক। আমরা দেখতে চাইছি, হাসানের সপত্নীবাদ কীভাবে তাকে শহিদের মর্যাদা দান করেছিল।

বিষাদ-সিন্ধু আখ্যানের একস্থলে হাসান মদিনার অধিবাসীদের সম্বোধন করে বলছেন, ভাতৃগণ যে পাপাত্মা (এজেদ)-র সৈন্যগণ এই পবিত্র ভূমি (মদিনা)-আমাদের আক্রমণ করিবার আশয়ে নগর বাহিরে শিবির স্থাপন করিয়া রহিয়াছে সেই বিধর্ম এজিদ মদিনার খাজনা আমার নিকট চাহিয়া পাঠাইয়াছিল। আমি তাহার উত্তর দিই নাই, সেই আক্রোশ এবং বিবি জয়নাব আমার সহধর্মিণী হইয়াছে, সেই ক্রোধে এজিদ আমার প্রাণবধ করিবে। তাহা হইলে এজিদের উভয় উদ্দেশ্যই সাধিত হইবে। কারণ আমার অভাবে মদিনার সিংহাসন তাহারই অধিকৃত হইবে মনে করিয়াছে। সেই বিধর্ম এজিদ নুরনবী হজরত মোহাম্মদের বিরোধী, ঈশ্বরের বিরোধী, পবিত্র কোরানের বিরোধী।"

এইভাবে এজিদকে মহাপাপী এবং মহা-বিধর্মী বানানো হয়েছে। কিন্তু এই উপন্যাস একটি সংগত প্রশ্নের জবাব দেয় না। মহানবি হজরত মুহম্মদের খলিফানির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক কোম-নীতি তার জীবদ্দশায় অনুসৃত হয়েছিল, তার কী হল! রাসুলের প্রশাসনিক উত্তরাধিকার (খলিফা) নির্বাচনে স্বজনপোষণ একেবারেই ছিল না। সেক্ষেত্রে রসুলের বংশের কেবা কারা তার কতটা আত্মীয় না-দেখে কৌমসৃষ্টিতে কে যোগ্য, কেমের প্রবীণ ও স্বচ্ছবুদ্ধির সদস্যরা ধ্বনিভোট মারফত কাকে যোগ্যতম নির্বাচন করেন, সেটাই দেখা হয়েছিল। সভার মত মেনেই প্রথম খলিফার নাম প্রস্তাব করেছিলেন রসুল পয়গম্বর। তিনি তার জামাতা হজরত আলির নাম প্রথম খলিফা হিসেবে প্রস্তাব করেননি।

খলিফা-নির্বাচনে বংশধারা প্রাধান্য পাৰে, নাকি কোম-নীতি বা বলা যায় উপজাতি-প্রধান বাছাইয়ে যে-নিয়ম প্রযোজ্য ছিল তাই অনুসৃত হবে, এবং আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, দ্বিতীয় খলিফা উমার উপজাতি বা কৌমনীতি মেনে যে পর্ষদ গঠন করছিলেন, যাকে বলা হত আলশুরা-যে-পর্ষদে প্রবীণ ও বিশিষ্ট সাহাবা (রসুলের শিষ্য) নেতা হতেন, যা ছিল এক ধরনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। সেই অনুযায়ী খলিফা নির্বাচিত হবেন, সেটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে বলে রাখা ভালো হজরত উমর ছিলেন ইসলামী রাষ্ট্রের সেনাপ্রধান এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী দ্বিতীয় খলিফা, যাকে বলা হত আমির-আল-মুমিনিন-মুসলিম ধর্মবিশ্বাসীদের নায়ক—তিনি পর্ষদ গঠন করেন এই কথা ভেবে যে, তার পুত্ৰ যেন তার মৃত্যুর পর খলিফা হয়ে না-বসে। উমার বংশধারার গুরুত্ব না-দিয়ে গণতান্ত্রিক উপজাতি-ভিত্তিক নির্বাচনের নীতিকে বা কৌমনীতিকে একটি প্রশাসনিক ও গণতান্ত্রিক প্রকরণে উন্নীত করেছিলেন, যা রসুলের নীতিরই প্রয়োগ বলা যায়।

কিন্তু একটা ভিন্ন মত পোষণ করতেন আলিপন্থীরা, যাদের পরবর্তীকালে শিয়া নামধেয় করা হয়েছে। তারা মনে করতেন মুসলিম সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তনে হজরত আলির ভূমিকা বিরাট এবং তিনি হজরত মুহম্মদের প্রকৃত প্রতিনিধি, তিনিই ছিলেন যোগ্যতম। যড়যন্ত্র করে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

শিয়াদের মধ্যে গুলাহ নামে এক চরমপন্থী সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মনে করেন হজরত আলি হচ্ছেন খোদার অবতার স্বরূপ। যার কৃতিত্বকে খাটো করে দেখা হয়েছে। এক্ষেত্রে রসুলের ভূমিকাকে তারা আলির বঞ্চনার জন্য দায়ী করেন।

বঞ্চনাই শুধু নয়, আলির দুই পুত্রকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে মুসলিম সাম্রাজ্যের অধিকার থেকে পুরোপুরি উৎখাত করার জন্যই এজিদের জন্ম হয়েছিল। সাম্রাজ্যের অধিকার থেকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রই হজরত আলি ও তার পুত্রকে মুসলিম হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসনে প্রতিষ্ঠা করেছে।

আমার পিসি আশুরা খাতুন মুর্শিদাবাদের লালবাগ-সন্নিহিত গ্রাম কাপাসডাঙায় বাস করতেন। মহরমের লোকোৎসবে কারবালা যুদ্ধের যে পুনরাভিনয় হত লালবাগে, তা দেখতে প্রত্যেক বছর আসতেন। আমিও গিয়েছি অনেক বছর মহরম দেখতে। অস্ত্রাঘাতে নিজেকে নিজে ক্ষত-বিক্ষত করে মাতম করছে অতি দরিদ্র নবাবের পুত্র ও সন্ততিরা, তাদের সঙ্গে মাতমে যোগ দিয়েছে সুন্নি-যুবকের দল ওই দৃশ্য দেখে সুন্নি আশুরা চোখের জল ফেলতেন নিঃশব্দে আর আঁচলে চোখ মুছতেন। কারণ হজরত আলি ও তার দুই পুত্রের বঞ্চনাকে সত্য মনে করতেন। বীরত্বকে শ্রদ্ধা করতেন। জহর ও কহরের মৃত্যু মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শোকাবহ ঘটনা মনে করতেন। হাসান-হোসেনের স্মরণে।

বিষাদ-সিন্ধু এভাবেই শিয়া-সুন্নিকে একই সূত্রে মিলিত করে চাঙ্গারিতে শোভা পেত হাদিস-কোরানের সঙ্গে।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, মুঘল সম্রাটরাও কৌমনীতি-ভিত্তিক গণতন্ত্রকে মেনে চলেননি।

মাবিয়া রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তার মাবিয়া রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তার পুত্রকে তিনি সিংহাসন দিয়ে যান উত্তরাধিকার সূত্রে। উপজাতি বা কৌমনীতি মানলে অন্য কেউ সিংহাসন বসতে পারতেন। উপজাতিক গণতন্ত্র ঔরঙ্গজেব মানেননি। তার জৈষ্ঠ্যভ্রাতাকে বঞ্চিত এবং হত্যা করে সিংহাসন দখল করেছিলেন।

রসুলের গণতন্ত্র মানলে মাবিয়ার রাজ্যাভিষেক কোনও বঞ্চনার গল্প নয়। ফের এজিদের সিংহাসন লাভও গণতন্ত্র নয়। রসুলের সামের ধারণাও সাম্য-বিঘ্নিত ইতিহাসে উপেক্ষিতই হয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন :

পাঠাও বেহেশ্‌ত হতে হজরত

পুনঃ সামের বাণী।

সাম্য আসেনি। মহরমের দশম দিবসে আশুরা অশ্রু-সংবরণ করতে পারতেন না। আমারও কান্না পেয়ে যেত। ছেলেবেলায় বিষাদ-সিন্ধু পড়েও যারপরনাই কষ্ট হত।

কিন্তু মিথ যাই বলুক। ইতিহাস তো অন্য কথা বলে।



মতামত নিজস্ব