Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Widget

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড - সেলিনা হোসেন

হাঙ্গর নদী গ্রেনেড - সেলিনা হোসেন
হাঙ্গর নদী গ্রেনেড - সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক। তাঁর জন্ম ১৪ই জুন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে, রাজশাহীতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভের পর তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘকাল বাংলা একাডেমীতে চাকরি করেছেন। একাডেমীর পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সেলিনা হোসেন বহু ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের রচয়িতা। তিনি ছোটদের জন্যেও অনেক লিখেছেন। তিনি সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। হাঙর নদী গ্রেনেড সেলিনা হোসেন প্রকাশক: অনন্যা সময়ের প্রয়োজনে বদলে যাওয়া মানুষের প্রকৃতি। কখনো কখনো সাধারণ মানুষও পালন করে অনন্য-অসাধারণ ভূমিকা। হয়ে ওঠে অয়োময়। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস হাঙর নদী গ্রেনেড-এর বুড়ি যেমন। মাতৃত্বে আপসহীন, দেশপ্রেমে তারও ঊর্ধ্বে। গ্রামবাংলার একজন আটপৌরে নারীর অয়োময় হয়ে ওঠার, মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম ভূমিকা পালনের সারা ৎ সার আলোচ্য উপন্যাস। হলদিগাঁর মেয়ে বুড়ি। কৈশোর থেকে একটু নয়, অনেকখানি অন্য রকম। চঞ্চলতায় উচ্ছল, কৌতূহলপ্রবণ, উ ৎ সুক দৃষ্টি, নিবিড়ভাবে দেখা, চম ৎ কারভাবে মেশা, উচ্ছলতায় ভরপুর। নিতান্ত কম বয়সেই বিয়ে হয় বিপত্নীক গফুরের সঙ্গে। সলীম ও কলীম নামে দুটো ছেলে আছে ওই ঘরে। সংসারজীবন মন্দ নয়। যদিও গফুর বুঝে ওঠে না বুড়িকে, আগের বউয়ের মতো নয়। কখন কী বলে, কী করে বসে তার অঙ্ক মেলানো ভার। মেঘ-বৃষ্টি-রোদের মতো। অবশ্য কারও সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে লাগে না, কাউকে মন্দ বলে না, কেউ বললে ভ্রুক্ষেপ করে না। এরই মধ্যে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে বুড়ির। সলীম-কলীম থাকলেও নাড়িছেঁড়া সন্তান চায়। যার জন্য শীনাইল ধামেও যায়। অবশেষে জন্ম নেয় বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী সন্তান রইস। তাতেও ভালোবাসা উপচে পড়ে। মারা যায় গফুর। বিয়ে হয় সলীমের। রামিজার কোলজুড়ে আসে ছোট্ট একটা বাবু। কলীমের বিয়ের কথার সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বন্ধ হয়ে যায় সব আলোচনা। যুদ্ধের ঢেউ আসে হলদিগাঁয়ে। সেই ঢেউয়ে উথালপাথাল হয়ে যায় বুড়ির সাজানো সংসার। সলীম যায় যুদ্ধে। কলীমকে পাকিস্তানি আর্মি ও তার দোসররা বুড়ির চোখের সামনে নির্মমভাবে খুন করে। যা দেখে বুড়ি বলে: ‘কলীম, তোর ঘাড়টা ঝুলে পড়েছে কেন? তুই একবার আমার দিকে চোখ তুলে তাকা। সাহসী বারুদ জ্বালা, দৃষ্টি ছড়িয়ে দে হলদীগাঁয়ের বুকে। মুছে যাক মহামারী, বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ। হলদীগাঁয়ের মাটি নতুন পলিমাটিতে ভরে উঠুক।’ পলি ভরার আগে হলদিগাঁয়ের মাটিতে রচিত হয় মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। যে দৃশ্যের রচনাকার একজন মা। বুড়ি যার নাম। হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। পিছু পিছু ওরাও বাড়িতে আসে। এ সময়ই সংঘটিত হয় ইতিহাসের ভিন্ন এক মাহেন্দ্রক্ষণ। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় একজন মা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে নাড়িছেঁড়া সন্তানকে তুলে দেয় বন্দুকের নলের মুখে। সন্তানের নাম রইস। মায়ের নাম বুড়ি। যে মুহূর্তে হয়ে ওঠে রুমীর কিংবা আজাদের মায়ের মতো অয়োময়। যে ম্যাক্সিম গোর্কির পাভেলের মতোই সাহসী। যার প্রতীতি এ রকম: ‘ওরা এখন হাজার হাজার কলীমের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওরা হলদীগাঁর স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে লড়ছে। ওরা আচমকা ফেটে যাওয়া শিমুলের উজ্জ্বল ধবধবে তুলো। বুড়ি এখন ইচ্ছে করলেই শুধু রইসের মা হতে পারে না। বুড়ি এখন শুধু রইসের একলার মা নয়।’ হাঙর নদী গ্রেনেড তখন মহাকাব্যের আখ্যান হয়ে ওঠে। বুড়ি হয়ে যায় ইতিহাস-কন্যা। হলদি গাঁ, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয় আমাদের সামনে।