Ticker

6/recent/ticker-posts

মহাভারতের মহারণ্যে - প্রতিভা বসু [০৯]

amarboi
মহাভারতের মহারণ্যে
প্রতিভা বসু



আমরা জানি দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় দুর্যোধন এবং কর্ণ দুজনেই উপস্থিত ছিলেন। দ্রুপদ রাজা ঘোষণা করেছিলেন, যে ব্যক্তি ‘সজ্যশরাসনে’ শরসন্ধানপূর্বক যন্ত্র অতিক্রম করে লক্ষ্যবিদ্ধ করতে পারবেন, দ্রৌপদী তাঁরই কণ্ঠে মাল্যদান করবেন। এই ঘোষণা তিনি একাধিকবার করেছিলেন।

ধৃষ্টদ্যুম্নও ভগ্নী বিষয়ে ঐ একই ঘোষণা একাধিকবার করেছিলেন। অর্থাৎ তাঁরা ক্ষত্রিয় বললেন না, ভূপতি বললেন না, কোনো জাতিগত প্রথার উপরেই জোর দিলেন না, জোর দিলেন কেবলমাত্র বীরত্বের দিকে।

এই ঘোষণার নিহিত নিগূঢ় অর্থটি যে কী সেই মুহূর্তে না বুঝলেও পরের মুহূর্তেই স্বচ্ছ আর্শির মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। সবই ব্যাসদেবের মন্ত্রণা। যুধিষ্ঠিররা ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে উপস্থিত থাকবেন সেখানে, সেজন্যই এ ঘোষণা। তিনি পূর্বেই বলে এসেছিলেন, দ্রৌপদীকে তোমরাই লাভ করবে। অর্থাৎ, যাতে তাঁরাই লাভ করতে পারেন, সেই বন্দোবস্ত করে এসেছিলেন বলেই এই বাক্য এতো সহজে তিনি বলতে পারলেন তাঁদের। সমস্তটাই সাজানো নাটক।

এই স্বয়ংবর সভায় যাদব বংশীয়রাও এসেছিলেন। কৃষ্ণও এসেছিলেন। অন্যান্য বিখ্যাত এবং বিশিষ্ট রাজা মহারাজারা তো বটেই। দ্রৌপদীর সৌন্দর্যের খ্যাতি ছিলো। যদিও তিনি কাঞ্চনবর্ণা নন। শ্যামাঙ্গিনী।

ধৃষ্টদ্যুম্ন নির্দিষ্ট সময়ে ভগিনীকে নিয়ে ধীরে ধীরে রঙ্গমঞ্চে উপস্থিত হলেন। এবং ভগিনীকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজাদের বিষয় অবহিত করে দিলেন। বললেন, ‘যিনি এই লক্ষ্য বিদ্ধ করতে পারবেন, তুমি তাঁর গলদেশেই বরমাল্য প্রদান করো।’

কিন্তু সকলেই সেই ভীষণ শরাসনে জ্যা সংযুক্ত করা দূরে থাক, ধনু স্পর্শমাত্র আহত ও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হতে লাগলেন। এভাবে সকল ধনুর্দ্ধরপ্রবর যখন হতোদ্যম হয়ে পড়লেন, সেই সময় কর্ণ সত্বর ধনু উত্তোলনপূর্বক তাতে জ্যা সংযুক্ত করে শরসন্ধান করলেন। দ্রৌপদীকে দেখে পাণ্ডবরাও কন্দর্পবাণে অভিভূত হয়েছিলেন। কর্ণকে জ্যা সংযুক্ত করে শরসন্ধান করতে দেখে যুধিষ্টির ভাবলেন, কর্ণই এ কন্যারত্ন লাভ করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু দ্রৌপদী কর্ণের এ কর্ম দর্শনে বেশ জোরের সঙ্গেই বলে উঠলেন, ‘আমি সূতপুত্রকে বরণ করবো না।’ কর্ণের অসম্মানটা ভেবে দেখুন। এ স্বয়ংবর সভাতে তো কোনো জাতিগত শর্ত ছিলো না। তথাপি দ্রৌপদী এরকম একটা জাত তুলে অভদ্র উক্তি করলেন কেন? শ্রবণমাত্র কর্ণ সক্রোধ হাস্যে শরাসন পরিত্যাগ করলেন। তাঁর মুখমণ্ডল বর্ষার কোমল পদ্মফুলের মতো বেদনায় সজল হয়ে উঠলো।

হিশাবে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিলো ব্যাসদেবের। কর্ণের কথা তাঁর মনে ছিলো না। অর্জুনকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ভেবেছিলেন। কন্যা স্বয়ং রক্ষা করলেন তাঁকে। এইরকম একটি বিশিষ্ট সমাবেশে দ্রৌপদী যে তাঁর পিতা ও ভ্রাতার ঘোষণাকে এইভাবে উপেক্ষা করে জাত তুলে কথা বললেন, তাতে তাঁর পিতা ও ভ্রাতা কিন্তু একটু বিচলিত হলেন না। দ্রৌপদীর পিতা ও ভ্রাতা যেমন জানতেন দ্রৌপদী কার কণ্ঠে মাল্যদান করবেন, দ্রৌপদী নিজেও জানতেন। ছদ্মবেশে এলেও, যেমন দ্রুপদ রাজাও জানতেন কোন যুবা তাঁর জামাতা হবেন, তেমনি দ্রৌপদীও সে বিষয়ে অবজ্ঞাত ছিলেন। অর্জুনকে চিনতে দ্রৌপদীর অসুবিধে হয়নি। হয়তো কোনো সংকেতও ছিলো। তবে কর্ণকে ‘সূতপত্র’ হিশেবে তিনি জানলেন কী করে, সে প্রশ্ন থেকে যায়। কর্ণ সেখানে অঙ্গদেশের রাজা হিশেবেই এসেছিলেন, অার তাঁর চেহারায় সূতপুত্রজনিত কোনো লক্ষণ প্রকট ছিলো না।

এবার এঁদের কার্যকলাপের ধারাবাহিকতাটা কীভাবে এগিয়ে চলেছে সেটা বোধহয় অনুধাবনযোগ্য। প্রথমত, বিদুর একটি সদ্যোজাত শিশুকে, যে-শিশু রাজবাড়ির প্রথম সুস্থ বংশধর, তার পিতা রাজা ধৃতরাষ্ট্রের দ্বারা নিহত করাবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করেছেন। তারপরেই পাণ্ডু এবং তার কনিষ্ঠা পত্নীর নিঃশব্দ নির্জন সাক্ষীহীন মৃত্যু। তিন নম্বর, ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র জন্মানো মাত্র, ঠিক মেপে মেপে পাণ্ডুরও ক্ষেত্রজ গ্রহণ এবং জ্যেষ্ঠটিকে, অর্থাৎ যুধিষ্ঠিরকে দুর্যোধনের চেয়ে এক বৎসরের বড় বলে দাবি। চতুর্থ, জতুগৃহদাহ। জতুগৃহে অগ্নি প্রদানের পূর্বে বিদুরের পাঠানো একজন কৃতবিদ্য প্রযুক্তিবিদের দ্বারা পাতালপথ নির্মাণ। পাতালপথ থেকে বেরিয়ে আকাশের তলায় এসে পাণ্ডবরা যেখানে দাঁড়ালেন, সেখানেই একজন পথপ্রদর্শকের দাঁড়িয়ে থাকা। এইসব সাজানো ঘটনাবলী সবই সাম্রাজ্য দখলের ভূমিকা ব্যতীত আর কী ভাবা যায়? ধৃতরাষ্ট্র বেঁচে আছেন, যিনি এঁদের পিতৃব্য। অন্তত তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে এঁরা, অর্থাৎ বিদুর রাজি নন। এঁদের ষড়যন্ত্রের কাছে, যে ষড়যন্ত্র কেবলমাত্র খুনের রক্তেই রঞ্জিত নয়, আরো বহুদূর অগ্রসর, দুর্যোধনের দৌরাত্ম্য নেহাৎ শিশুসুলভ হম্বিতম্বি। যে বিদুরকে মহাভারত পাঠকদের নিকট ‘ধর্ম’ বলে ধার্য করে দিয়েছে, সেই ধর্ম নামক ব্যক্তিটির অধার্মিক আচরণ দ্বিতীয়রহিত।

দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় যেহেতু বৃষ্ণিবংশীয় যদুশ্রেষ্ঠগণও উপস্থিত ছিলেন, এই সময় থেকে কুরুদের বিপক্ষদলে আরো একজন যিনি যুক্ত হলেন তাঁর নাম কৃষ্ণ। কৃষ্ণের পিতা বসুদেব কুন্তীর ভ্রাতা, অতএব কুন্তী কৃষ্ণের পিতৃস্বসা, সম্পর্ক নিকট। কৃষ্ণও কিন্তু জানতেন না এই পুত্ররা পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ। এই সভাতেই প্রথম দর্শন। বড়ো বড়ো পাঁচটি বহিরাগত যুবককে দেখে তিনি বিস্মিত হলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁদের বলবিক্রম দেখে উল্লসিত হলেন। যখন থেকে এঁরা পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ হিশেবে হস্তিনাপুরে এসেছেন, তখন থেকে এঁদের নামে তিনি অনেক গুজব শুনেছেন। কৌতূহল ছিলো। এখন বীরত্ব দেখে মুগ্ধ হলেন এবং বন্ধুতা হতে দেরি হলো না।

মহাভারত নামের গ্রন্থটির সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী কিঞ্চিৎ অবহিত হয়ে পাঠ করলে সহজেই বোঝা যায় সবাই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত কর্ম করে যাচ্ছেন। সত্যবতী থেকে তার শুরু। এখন কৃষ্ণতে এসে শেষ হলো। অর্থাৎ সাতটি নদী কৃষ্ণরূপ সমুদ্রে এসে মিলিত হলো। সেই নদী ক’টি সবই অনার্য অবৈধ পুত্রের সমষ্টি। প্রথমে সত্যবতীর পুত্র ব্যাসদেব, তারপর তাঁর অবৈধ পুত্র বিদুর, বিদুরের অবৈধ পুত্র যুধিষ্টির, আর চারটি ভ্রাতা ভীম অর্জুন নকুল সহদেব, যাদেরও কোনো পিতৃপরিচয় নেই।

দ্রুপদ রাজাও যে আর্য হয়ে অনার্য রীতি মেনে নিয়ে কন্যাকে পাঁচটি ভ্রাতার হস্তে পাণিরত করলেন, তা-ও নিজেকে আরো শক্তিশালী করে অন্য কোনো আক্রমণ স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে। পাণ্ডুরাজার ক্ষেত্রজ নাম দিয়ে যে পাঁচটি পাণ্ডব এসে উপস্থিত হলো, তা-ও রাজ্যপ্রাপ্তির আশায়। আর কৃষ্ণ এলেন জরাসন্ধের ভয়ে দ্বারকাপুরীতে লুকিয়ে পালিয়ে থাকা জীবন থেকে এদের সাহায্যে বেরিয়ে আসতে। কৃষ্ণ দুটি মানুষকে ভয় পেতেন, একজন জরাসন্ধ, একজন শিশুপাল। এই দুজন শক্তিশালী রাজা তাঁর বুজরুকিতে বিশ্বাস করতেন না।

স্বীয় উদ্দেশ্যসাধন হলেও, সত্যবতী শান্তনুনন্দন দেবব্রতকে সোজাসুজিই তাঁর শর্ত পালনে সম্মত করিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বাকি অন্যান্যদের ভূমিকার মধ্যে পাঁচটি বহিরাগত পুত্র, তাদের মাতা কুন্তী, এবং যুধিষ্ঠিরের পিতা বিদুর, রাজত্ব পাবার আশায় এমন কোনো গূঢ় অপরাধ নেই জগতে, যা তাঁরা করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয়েছেন। তারপরে যে অন্যায় এবং নৃশংসতার লীলা শুরু হলো সেটা যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত অদমিত রইলো।

প্রথম লীলাটি হলো দ্রৌপদীর প্রকৃত স্বামী অর্জুন হলেও তাঁকে বিবাহ করতে হলো পাঁচজনকেই। স্বয়ংবর সভায় মাল্যদান মানেই বিবাহ। পাণিপ্রার্থীদের মধ্যে পাত্রী যাঁকে মাল্যদান করবেন তিনিই হবেন তাঁর পতি। মাল্যদান করেই শকুন্তলা দুষ্মন্তকে বিবাহ করেছিলেন। মাল্যদান করেই কুন্তী পাণ্ডুর পত্নী হয়েছিলেন। বেচারা দ্রৌপদী! যাঁকে মাল্যদান করলেন, তাঁর জ্যেষ্ঠভ্রাতাও যে একজন মস্ত দাবিদার হয়ে তাঁর শয্যায় এসে উপস্থিত হবেন, তা কি তিনি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন কখনো! আর্যকুলের বিবাহে এই রীতি কখনই সম্ভব নয়।

দ্রৌপদীকে জয় করে, যেখানে পাণ্ডবরা আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন সেখানে উপস্থিত হয়ে আনন্দিত স্বরে বললেন, ‘মাতঃ, অদ্য এক রমণীয় পদার্থ ভিক্ষালব্ধ হইয়াছে।’

কুন্তী গৃহাভ্যন্তরে ছিলেন, বললেন, ‘সকলে সমবেত হয়ে ভোগ করো।’ তারপরই দ্রৌপদীকে নিরীক্ষণ করে বললেন, ‘এ আমি কী বললাম!’ ধর্মভয়ে যেন কতো চিন্তাকুল এমন ভাব করে দ্রৌপদীর হস্তধারণপূর্বক যুধিষ্ঠিরের নিকট গমন করে বললেন, ‘পুত্র, তোমার অনুজরা দ্রুপদনন্দিনীকে এনে ভিক্ষা বলে আমার নিকট উপস্থিত করলো, আমিও অনবধানতা-প্রযুক্ত হয়ে বললাম, ‘‘তোমরা সকলে সমবেত হয়ে ভোগ করো।’’ এখন তুমি দ্যাখো, আমার বাক্য যেন মিথ্যা না হয়।’

এসব কথার সমস্তটাই কৃত্রিম, সমস্তটাই বানানো। তা ব্যতীত, মুখনিঃসৃত সমস্ত ভাষ্যই বাণী নয়। যাকে প্রকৃত অনৃতভাষণ বলে, কুন্তীর এই অন্যমনস্ক অনুমতি তার মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া, কুন্তী কোনো মহর্ষি মহাযোগীও নন যে মুখের কথা ফেরৎ নিতে পারেন না।

পুত্রগণ বলেছেন, ‘এক রমণীয় পদার্থ এনেছি’। মানুষ কখনো পদার্থ হয় না। যারা অমানুষ তাদের অপদার্থ বলা গেলেও মানুষকে কোনো অর্থে পদার্থ হিশেবে ধরা হয় না। পদার্থের অর্থ দ্রব্য, বস্তু, জিনিশ। দ্রৌপদী যখন একজন মানুষ, তিনি নিশ্চয়ই দ্রব্য, বস্তু, জিনিশ নন সেক্ষেত্রে যখন কুন্তী ‘পদার্থ’ কে ভোগ করতে বলেছেন, এবং পরে একজন মানুষকে দেখেছেন, সেখানে তো তাঁর এই বাক্যকে কোনো অর্থেই অনৃতভাষণ বলা যায় না। বলা যায় ‘আমি ভেবেছিলাম কোনো ভালো জিনিশ পেয়েছো।’ পরন্তু, তিনি কী করে জানলেন এই কন্যা দ্রুপদনন্দিনী? যুধিষ্ঠিরকে বলছেন, ‘পুত্র, ইনি রাজা দ্রুপদের নন্দিনী। কিন্তু আমি বলেছি তোমরা সকলে মিলে ভোগ করো। অতএব, হে কুরুশ্রেষ্ঠ! এখানে যাতে আমার বাক্য মিথ্যা না হয় এবং অধর্ম দ্রুপদকুমারীকে স্পর্শ না করে এমন উপায় বিধান করো।’

কুন্তী খুব ভালোভাবেই জানতেন তাঁর পুত্রগণ ব্যাসদেবের নির্দেশে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় গিয়েছেন। যদি কিছু নিয়ে আসেন তবে যে দ্রৌপদীকে জয় করেই ফিরবেন, তা-ও তাঁর অজ্ঞাত ছিলো না। সত্যরক্ষার দোহাই তা-ও তাঁর অজ্ঞাত ছিলো না। সত্যরক্ষার দোহাই দিয়ে কুন্তী যা করতে চাইছেন তার অর্থটা পরমুহূর্তেই বোধগম্য হলো। যে বীরত্বের শর্তে মহারাজা দ্রুপদকন্যাকে সম্প্রদান করবেন, সে বীরত্ব কার আছে তা-ও তিনি জানেন। এবং দ্রুপদরাজা যে অর্জুনকে জামাতারূপে পেতে উৎসুক তা-ও জানেন। কিন্তু অর্জুনকে জামাতা করলে তো হবে না, যুধিষ্ঠিরকেই করতে হবে। যুধিষ্ঠিরের জন্যই তো এতো কাণ্ড। কোনো শক্তিশালী রাজার সাহায্য পাবার জন্যই তো অজ্ঞাতবাসের আয়োজন। সুতরাং জামাতা হতে গেলে যুধিষ্ঠিরকেই হতে হবে। যুধিষ্ঠির সিহাংসনে বসবেন, সেটাই বিদুর, কুন্তী এবং দ্বৈপায়নের একমাত্র উদ্দেশ্য। আসলে তিনি এতোক্ষণ অবশ্যই অতি উৎকণ্ঠিত চিত্তে অপেক্ষা করছিলেন খবরটির জন্য। তারপর, যেন না জেনেই ছেলেদের উপভোগ করতে বলেছেন বলে অচিন্তনীয় চিন্তায় একেবারে অথৈ পাথারে পড়ে গেলেন। অস্থির না হলে তাঁর বাক্যের সত্যতা নিয়ে লড়াই করবেন কি উপায়ে?

কিন্তু এক কন্যাকে পাঁচজন পুরুষ কী করে ভোগ করবেন, গণ্ডগোল বাধলো সেটা নিয়েই। দ্রৌপদীর পিতা হতবাক হলেন। তিনি বলেছিলেন ‘অদ্য শুভ দিবস, অতএব অর্জুন আভ্যুদয়িক ক্রিয়ান্তে দ্রৌপদীর পাণিগ্রহণ করুন।’

উত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন, ‘রাজন! আমারও দারসম্বন্ধ কর্তব্য হইয়াছে। পূর্বে জননী অনুমতি করিয়াছেন যে দ্রৌপদী আমাদিগের সকলেরই মহিষী হইবেন। আমি অদ্যাপি দারপরিগ্রহ করি নাই এবং ভীমও অকৃতবিবাহ। অর্জুন আপনার কন্যারত্ন জয় করিয়াছেন বটে, কিন্তু আমাদিগের ভ্রাতৃগণের মধ্যে নিয়ম আছে যে, যে কোনো উৎকৃষ্ট বস্তু প্রাপ্ত হইলে আমরা তাহা সকলে একত্র ভোগ করিয়া থাকি।’

দ্রৌপদী কি সত্যিই বস্তু? তাঁর কি মন প্রাণ বলে কিছু নেই? তিনি কি মানবকন্যা নন? ইচ্ছে হোক না হোক, শ্রদ্ধা করুন বা না-ই করুন, ভালোবাসুন আর না-ই বাসুন, যে কোনো পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে পারেন তিনি? তাঁর মতামতের কি মূল্য নেই? তিনি যাঁকে মনোনীত করেছেন, তাঁর গলদেশেই মাল্যদান করেছেন। পূর্বকালের নিয়মমতো সেটাই বিবাহ। যজ্ঞসেন বিস্ময়ে তাকিয়ে যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রুতিগোচর করছিলেন। যুধিষ্ঠির গোঁ ধরে তাঁর বাক্য সমাপন করলেন, ‘অতএব আমরা কোনোক্রমেই চির-আচরিত নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারবো না। অগ্নিসাক্ষী করে আমাদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠাদিক্রমে তনয়ার পরিণয় ক্রিয়া সম্পাদিত করুন।’

যজ্ঞসেন বিস্ময়ের সীমান্তে পৌঁছে বললেন, ‘এক পুরুষের বহুপত্নী বিহিত আছে বটে, কিন্তু এক স্ত্রীর অনেক পতি এ তো আমি কখনই শুনিনি। আপনার এ রকম কথা বলা অনুচিত।’

প্রত্যুত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন, ‘পূর্বপুরুষদিগের আচরিত পদ্ধতিক্রমেই আমরা চলে থাকি।’

যুধিষ্ঠিরের এই বাক্য যদি সত্য হয়, তবে তো তিনি পাণ্ডুরাজের ক্ষেত্রজ হতেই পারেন না। রাজা শান্তনুর কোনো বংশধরই এই আদিম নিয়মের অধীন নয়। যেহেতু পাণ্ডু স্বয়ংবর সভায় গিয়ে কুন্তীকে বিবাহ করেছিলেন, ভীষ্ম সেই বিবাহও তাঁদের বংশের নিয়ম অনুযায়ী হয়নি বলে আবার বিবাহ দিলেন মাদ্রীর সঙ্গে। তাঁদের নিয়ম কন্যাকে স্বীয়গৃহে আনয়ন করে বিবাহ দেওয়া। এখানে অর্জুন অবশ্য কন্যাকে স্বীয় গৃহেই আনয়ন করেছিলেন, এবং দ্রৌপদী তাঁর কণ্ঠেই মাল্যদান করেছিলেন। এখন কেবল অনুষ্ঠানটাই বাকি। অর্জুন যুধিষ্ঠিরের বয়োকনিষ্ঠ ভ্রাতা, তাঁর স্ত্রীকে তিনি কী হিশেবে বিবাহ করবেন? তাঁর সঙ্গে তো সম্পর্ক স্থাপিতই হয়ে গেছে। ধৃতরাষ্ট্র কখনো কুন্তীকে বিবাহের কথা ভাবতে পারতেন, যখন পাণ্ডুকে মাল্যদান করে কুন্তী কুরুগৃহে প্রবেশ করলেন? দ্রুপদ রাজার পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নও ঠিক তাই বললেন, ‘জ্যেষ্ঠ, সুশীল ও সদাচারসম্পন্ন হয়ে কনিষ্ঠ ভ্রাতার ভার্যায় কেমন করে গমন করবেন? ধর্ম অতি সূক্ষ্ম পদার্থ। ধর্মের গতি আমরা কিছু জানি না। সুতরাং ধর্মাধর্মের নিশ্চয় করা আমাদের অসাধ্য। অতএব কৃষ্ণা যে পঞ্চস্বামীর মহিষী হবে সেটা আমরা কখনই ধর্মত অনুমোদন করতে পারি না।’

এই সময়ে যথানিয়মে ব্যাসদেবের আগমন। তাঁকে দেখে দ্রুপদ বললেন ‘একা দ্রৌপদী কী করে অনেকের ধর্মপত্নী হবে, অথচ সঙ্কর হবে না, এটা কেমন করে ঘটতে পারে? হে দ্বিজোত্তম! এক স্ত্রী বহু পুরুষের পত্নী, এ তো কখনো দেখিনি। এমন কী মহাত্মা প্রাচীন পুরুষদিগেরও আচরিত ধর্ম নয়।’

ব্যাসদেব বললেন, ‘হে পাঞ্চাল! আমি এর নিগূঢ় তত্ত্ব সর্বসমক্ষে ব্যক্ত করবো না।’ এ বলে তিনি গাত্রোত্থান করে দ্রুপদের করগ্রহণপূর্বক রাজভবনে প্রবেশ করলেন। তারপরে প্রকাশ্যে কয়েকটা রূপকথা শোনালেন। যা মহাভারতের, তথা ব্যাসদেবের, স্বার্থসিদ্ধির একমাত্র অস্ত্র ও উপায়। তা থেকে জানা গেল, পূর্বজন্মে দ্রৌপদী মহাদেবের (এখানে আবার একজন মহাদেবের সৃষ্টি করেছেন, যিনি একমাত্র অনার্যদেরই তৈরি করা অারাধ্য দেবতা) নিকট নাকি পাঁচবার একই বর প্রার্থনা করেছিলেন, তিনি যেন সর্বগুণসম্পন্ন পতি লাভ করেন। তখন মহাদেব তাঁকে অভিলষিত বরদানপূর্বক বললেন, ‘ভদ্রে! তোমার পাঁচজন স্বামী হবেন।’ পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ঋষিকন্যা ছিলেন, সেই ঋষিকন্যা বলেন, ‘আমি এক পতি প্রার্থনা করি।’ মহাদেব বললেন, ‘তুমি উপর্যুপরি পাঁচবার পতি প্রার্থনা করেছ। অতএব জন্মান্তরে তোমার পঞ্চস্বামী হবে।’

রূপকথা শেষ করে ব্যাসদেব বললেন, ‘দ্রৌপদী স্বর্গলক্ষ্মী, পাণ্ডবগণের নিমিত্ত আপনার যজ্ঞে সমুৎপন্ন হয়েছেন। এই সর্বাঙ্গসুন্দরী দেবদুর্লভা দেবী স্বকীয় কর্মফলে পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিণী হবেন।’ প্রথমে রাজঅন্তঃপুরে প্রবিষ্ট হয়ে ব্যাসদেব দ্রুপদকে কী নিগূঢ় তত্ত্ব গোপনে বুঝিয়েছিলেন জানি না, পরে পূর্বজন্মের এই রূপকথাটি বলে শেষ করলেন বাক্য।

কিন্তু দ্রৌপদী? দ্রৌপদী কী করে রাজি হলেন? অত বড় একটা মহতী জনসভায় যিনি উচ্চকণ্ঠে বলে উঠতে পারলেন, ‘সূতপুত্রকে আমি বিবাহ করবো না’, যেখানে তাঁর পিতা ভ্রাতা দুজনেই পুনঃপুন ঘোষণা করেছেন এই স্বয়ংবর সভায় জাতমানকুল কিছু নেই, বীরত্বই প্রধান, যেখানে বিদ্যায় বুদ্ধিতে রূপে গুণে শ্রেষ্ঠ এক বীরকে তিনি পিতা ভ্রাতার প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করে, অসম্মান করে, ধুলোয় লুটিয়ে দিলেন, এবং অন্য এক বীরকে স্বামীরূপে নির্বাচিত করে মাল্যদান করলেন, সেখানে কী করে তিনি তাঁর স্বামীর জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠের শয্যাসঙ্গিনী হতে রাজি হলেন? কী করে সেটা সম্ভব হলো? বিবাহের আসরে বসে পরপর পাঁচজন ভ্রাতাকেই স্বামীরূপে গ্রহণ করতে তাঁর মনে কি কোনো বেদনা জাগলো না? অসম্মান জাগলো না? লজ্জাবোধ এলো না? তাঁর বিবেকের কাছে কি তাঁর কোনো কৈফিয়ৎ নেই? মহাভারত বলে তিনি অতি তেজস্বিনী নারী, সেই তেজ তখন তাঁর কোথায় গেলো? তিনি কি জানেন না স্বয়ংবর সভায় কন্যা যাঁর কণ্ঠে মাল্যদান করেন শুধু তিনিই হন তাঁর পতি? কেন তিনি অন্য পুরুষ গ্রহণ করতে কোনো প্রতিবাদ জানালেন না? আর তাঁর নির্বাচিত পতিকে তিনি কবে পেলেন? যখন তাঁর প্রেম এক বছর ধরে তাঁর স্বামীর জ্যেষ্ঠভ্রাতা যুধিষ্ঠিরই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। তারপর ভীমের কাছে গেছে সেই দেহ। নারীদেহ তো নয়, যেন খেলার বল। একের কাছ থেকে অপরের কাছে। তার মধ্যে অর্জুনের বারো বছরের জন্য নির্বাসনও হয়ে গেলো।

এই উপাখ্যান এখন যেখানে এসে পৌঁছেছে সেখান থেকে যুদ্ধের ময়দান খুব দূরে নয়। কিন্তু কেন এতদূর এলো? কে তার জন্য দায়ী? এই বহিরাগত পঞ্চপাণ্ডব নামধারী মানুষ ক’টি পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ হিশেবেই গণ্য হয়ে, রাজপুত্রদের সঙ্গেই শিক্ষাদীক্ষা সহবতে মিলিত হয়েছিলো। তার মধ্যে যদি বিদুরের প্রবেশ না ঘটতো, তা হলে হয়তো বা তারা কুরুকুলের ভ্রাতা হয়েই মিলেমিশে থাকতে পারতো। যার মনে যে সন্দেহই থাক, আস্তে আস্তে মুছে যেতো সেটা। বিদুর তো সেজন্য তাদের নিয়ে আসেননি এখানে। এনেছেন পুত্রকে একচ্ছত্র সাম্রাজের অধিপতি করতে। প্রথমেই ঘোষণা করলেন দুর্যোধন সাম্রাজ্যের ভাগ দেবার ভয়ে ওদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। একজন প্রতিপক্ষ দাঁড় করাতে না পারলে বৈপরীত্যের সৃষ্টি হয় না। যেখানে বিষয়-সম্পত্তি নিয়ে ব্যাপার, সেখানে দুর্যোধনকে সহজেই শত্রুপক্ষ হিশাবে বিশ্বাস করানো, এক্ষেত্রে, এই পরিবেশে, খুবই সহজ। সুতরাং, অপপ্রচার জনগণের মনে ধরানোর কার্যটি বিদুর খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। তথাপি, পুরবাসীদের অনেকের মনই কুন্তীর এই পঞ্চপুত্র বিষয়ে নিঃসংশয় ছিলো না। তার পরিচয় পাওয়া গেলো কৃত্রিম যুদ্ধের দিন, যখন দুর্যোধন বললেন, ‘তোমাদের কী ভাবে জন্ম তা-ও কিন্তু আমরা জানি।’ তখন কেউ তার জবাব দিতে সক্ষম হলেন না। পঞ্চভ্রাতাও নয়, বিদুরও নন, গুরুজনেরাও নিঃশব্দ।

ঘটনাগুলো অনুধাবন করলে এখানেও অনেকগুলো বিষয়, যেমন, মহারাজা শান্তনুর মৃত্যুর পরে বিমাতার প্রতি দেবব্রতের কার্যকারণহীন আনুগত্য, দ্বৈপায়নের দ্বারা দাসীর গর্ভে বিদুরের জন্ম, দুর্যোধন জন্মানোমাত্রই বিদুরের তাকে হত্যা করবার প্রয়াস, স্বীয় অবৈধ পুত্র যুধিষ্ঠিরকে পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ প্রমাণ করবার জন্য কুন্তীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাণ্ডুকে ও মাদ্রীকে নিহত করা, পুত্রদের অজ্ঞাতবাসে পাঠিয়ে কোনো ক্ষমতাশালী নির্দিষ্ট রাজার সঙ্গে সম্পর্ক পাতাবার চেষ্টা, বারণাবতে নিজেরা আগুন লাগিয়ে অতোগুলো মানুষকে পুড়িয়ে ধৃতরাষ্ট্র আর তাঁর পুত্র দুর্যোধনের নামে চালাবার মিথ্যাচার, একজন কৃতবিদ্য প্রযুক্তিবিদ পাঠিয়ে বিদুরের পাতাল পথ রচনা, সেই পথে হেঁটে দূরবর্তী অন্য এক লোকালয়ে গিয়ে উঠে মাতাসহ পঞ্চপাণ্ডবের আকাশের তলায় দাঁড়ানো এবং অপেক্ষমান পথপ্রদর্শকের সঙ্গে গিয়ে বিদুরের পাঠানো যন্ত্রযুক্ত নৌকায় আরোহণ, অপর তীরে অবরোহণ করে আবার নির্দিষ্টভাবে দক্ষিণ দিকে গমন, চলতে চলতে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যাসদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ব্যাসদেবের নির্দেশে প্রথম একমাস একচক্রা নগরে-অবস্থান, তারপরে পুনরায় একমাস পরে ব্যাসদেবের আগমন এবং পাঞ্চাল নগরে ব্রাহ্মণের বেশে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় গিয়ে অর্জুনের বীরত্বে দ্রৌপদী লাভ, কুন্তীর চালাকিতে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে বিবাহ দেবার ধূর্ততা—ষড়যন্ত্র এবং হঠকারিতার নিদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এতোগুলো হঠকারিতার মধ্যে দুর্যোধন কোথায়? অথচ বিবিধ অসাধু কর্মের দায় দুর্যোধনের নামেই চালানো হলো। পড়তে পড়তে দুর্যোধনের জন্য বেদনা অনুভব করাই তো স্বাভাবিক। দুর্যোধনের মুখনিঃসৃত যে দুটি বাক্য লিখিত হয়েছে, তা ঐ কৃত্রিম যুদ্ধের আসরে। ভীমের নিম্নশ্রেণীর কলহদীর্ণ ভাষার জবাবে জানানো, ‘হে ভীম! কর্ণকে এভাবে বলা তোমার উচিত নয়।’ আর বিদুরের প্রচারে যুধিষ্ঠির একেবারে ক্ষমতার তুঙ্গে উঠে তাদের পরাজিত করে সিংহাসন দখল করবার মতো ক্ষমতাশীল হয়ে উঠেছেন শুনে ভীত হয়ে পিতাকে বলা, ‘ওদের যদি কিছুদিনের জন্য অন্যত্র কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ঐ সময়ের মধ্যে আসন্ন বিপদের হাত থেকে উদ্ধার পাবার একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’ বিদুর-কুন্তীসহ এই পাঁচটি ভ্রাতার বিবেকহীন, অসাধু এবং লুব্ধ ব্যবহারের পরিবর্তে দুর্যোধনের সৌজন্য এবং ধৈর্য বরং অনুকরণযোগ্য বলেই মনে হওয়া উচিত।

সত্যবতী যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রাসাদের সর্বময়ী কর্ত্রী হয়ে প্রবিষ্ট হয়েছিলেন, এবং যে উদ্দেশ্য সাধন করতে শান্তনুর একমাত্র পুত্র দেবব্রতকে চিরকুমার ব্রহ্মচারী থাকতে বাধ্য করেছিলেন, সেই সংকল্প সাধন করলেন তাঁর নিজের পুত্র বিচিত্রবীর্যের বিধবা পত্নীদ্বয়ের গর্ভে তাঁর অবিবাহিত কালের সন্তান দ্বৈপায়নের দ্বারা সন্তান উৎপাদন করিয়ে। তদ্ব্যতীত, বিদুরকে পর্যাপ্ত প্রশ্রয় দিয়ে এমন একটা স্তরে উত্তোলিত করে রেখে বনগমন করলেন যেখান থেকে তাঁর স্খলনের আর কোন সম্ভাবনা রইলো না। আর বিদুরপুত্র যুধিষ্ঠিরের অনার্য অবৈধ রক্ত এতো পরিশ্রুত হলো যে শান্তনুর আদি বংশের ক্ষত্রিয় রক্ত আর এক কণাও অবশিষ্ট থাকলো না। বৈরানল তখনি প্রজ্বলিত হলো। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। এই যুদ্ধও সত্যবতীরই অবদান। শান্তনুর প্রাসাদে দ্বৈপায়নের প্রবেশ না ঘটলে বিদুর জন্মাতো না, বিদুর না জন্মালে যুধিষ্ঠিরও জন্মাতো না, যুধিষ্ঠির না জন্মালে রাজত্ব নিয়ে এই প্রমাদও উপস্থিত হতো না।

চলবে...

বাকি পর্বগুলো পড়ুন এই লিঙ্কেঃ https://www.amarboi.com/search/label/mahabharatera-maharanye